ডান হাত চুলকালেই টাকা আসে বাম হাত চুলকালেই টাকা চলে যায়। এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
বিস্তারিত উত্তর দিলে খুশি হতাম।
শুভ-অশুভ লক্ষন বা কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই
আল্লাহর রসূল(সাঃ) বলেছেন, ‘‘রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই।
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) অধ্যায়ঃ ৬৩/ চিকিৎসা (كتاب الطب) হাদিস নম্বরঃ ৫৩৪৫
অর্থাৎ উত্তম বাক্য শুনে মনে মনে কল্যাণের আশা পোষণ করা, যেমন চাকরীর দরখাস্ত নিয়ে গিয়ে কারো জিজ্ঞেস করলেন, সে বলল, মঞ্জুর। তখন আপনার মনে দরখাস্ত মঞ্জুর হওয়ার আশা করা বিধি-সম্মত।
উক্ত হাদিস থেকে প্রমাণ হয় যে আসলে ইসলামে অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই অর্থাৎ অশুভ লক্ষণ ভিত্তিহীন।
কোন কিছুকে শুভ-অশুভ লক্ষন বা কুলক্ষণ মনে করা শিরক
রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাস করা বা নির্ণয়ের চেষ্টা করা শিরক, কথাটি তিনবার বলেন।
(তিরমিযী ৪/১৬০ ইবনু হিববান ১৩/৪৯১ হাকীম, আল-মুসতাদরাক ১/৬৪ আবূ দাউদ
৪/১৭ বুখারি ৫৩৪৬ আবু দাউদ ৩৯১০)
অর্থাৎ শুভ অশুভ লক্ষণ নির্ণয় করা বা বিশ্বাস করা স্পষ্ট শিরক। উক্ত হাদিস এটাই প্রমান করে।
সারা পৃথিবীতেই এ ধারণা বহুকাল ধরে প্রচলিত যে, বাঁ হাতের তালু চুলকালে অর্থ খরচ হয়ে যায়। আর ডান হাতের তালুতে চুলকানি প্রচুর অর্থ নিয়ে আসে। এ বিষয়টি আসলে কি? বাঁ হাত চুলকানোর পর যদি অর্থ চলেও যায়, তবে ধরে নেওয়া যায় কোনো কিছু কিনতে বা সেবা পেতেই তা খরচ করছেন। অর্থাৎ এমনি এমনি অর্থ হারিয়ে যাবে না। আবার ডান হাত চুলকানোর মানে অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থ চলে আসবে। এর অর্থ আকাশ থেকে অর্থ পড়বে না। হয়তো কোনো পাওনা অর্থ বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে অর্থসংযোগ ঘটতেই পারে। যাইহোক, তখন মনটাই ভালো হয়ে যায়। আরেক ধরনের বিশ্বাস ছড়িয়ে রয়েছে এ বিষয়ে। তা হলো, যদি অর্থ পেতে চান তবে ডান পকেটে প্রবেশ করান। তখন চুলকানি শুরু হলেই বুঝতে হবে অর্থ আসছে। কাজে হাতের তালু চুলকানি বিষয়ে গাণিতিক সূত্র দাঁড় করানো যায়। তা হলো, ডানহাত = নগদ অর্থ প্রাপ্তি এবং বাঁহাত = অর্থ হারানো।
এখন যদি উপরের কথা গুলি আপনি বিশ্বাস করেন তাহলে স্পষ্ট শিরক হবে। কেননা একমাত্র মহান আল্লাহ্ ক্ষতি করতে পারে অথবা উপকার করতে পারে। তিনি যদি কারো ক্ষতি চান তাহলে তার উপকার করার কেউ নেই আর যদি তিনি কারো উপকার করতে চান তাহলে তার ক্ষতি করার কেউ নেই। এই মর্মে মহান আল্লাহ্ বলেন যে
وَ لَا تَدۡعُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَا یَنۡفَعُکَ وَ لَا یَضُرُّکَ ۚ فَاِنۡ فَعَلۡتَ فَاِنَّکَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیۡنَ
আর আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুকে আহবান করো না, যা না তোমার কোন উপকার করতে পারে, না কোন ক্ষতি করতে পারে। বস্তুতঃ যদি এইরূপ কর, তাহলে তুমি অবশ্যই যালেমদেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
وَ اِنۡ یَّمۡسَسۡکَ اللّٰہُ بِضُرٍّ فَلَا کَاشِفَ لَہٗۤ اِلَّا ہُوَ ۚ وَ اِنۡ یُّرِدۡکَ بِخَیۡرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِہٖ ؕ یُصِیۡبُ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ ؕ وَ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ
‘আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু’। (সূরা ইউনুস আয়াত নং ১০৬ ও ১০৭)
’শিরক’’ একটি অতি পরিচিত ও ছোটো শব্দ। কিন্তু এর পরিধি এতো বিশাল যে পৃথিবীতে এর চাইতে আর কোন বড় অপরাধ বা পাপ কাজ নেই। এই মর্মে মহান আল্লাহ্ বলেন
وَ اِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِہٖ وَ ہُوَ یَعِظُہٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰہِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ
আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম'। (সূরা লুকমান আয়াত নং ১৩)
যার পরিণাম জাহান্নাম। যদি শুধু জাহান্নাম বলা হতো তাহলে অনেক ভালো হতো। বলা হয়েছে ''চিরস্থায়ী জাহান্নাম'' অর্থাৎ কোন মানুষ শিরক করা অবস্থাই মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে হবে। যেমন ভাবে কাফেরা জাহান্নামে থাকবে। ঐ মুসলিম যত ভালো আমল করুক না কেন। একজন মুসলিম পূর জীবন ইসলাম (নামাজ যাকাত রোজা হজ অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের সকল ইবাদত) মেনে চলো। এই মর্মে মহান আল্লাহ্ বলেন
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না যে, তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা হোক, আর তা ছাড়া আর সব তিনি ক্ষমা করেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে কেউ আল্লাহ্র সাথে শরিক করে সে তাহলে উদ্ভাবন করেছে বিরাট পাপ।
(সূরা নিশা আয়াত নং ৪৮ ১১৬)
রসূল (সঃ) বলেন যে “: যে আল্লাহ্র সঙ্গে শির্ক করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে আল্লাহ্র সঙ্গে কোন কিছুর শির্ক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ) অধ্যায়ঃ ২৩/ জানাযা (كتاب الجنائز) হাদিস নম্বরঃ ১২৩৮
আর সাথে শিরক করলো তাহলে তার সকল আমল বাতিল হয়ে গেলো। ফলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে গেলো। তার এতো আমল তাকে বাঁচাতে পারলনা। তাহলে আমাদের কষ্ট করে নামাজ পরে রোজা রেখে অর্থাৎ ইসলাম পালন করে লাভ কি ? কোন লাভ নেই যদি সাথে সাথে শিরক করি। তাই আমাদের সবার আগে সতর্ক থাকতে হবে যে আমার দ্বারা কি কখন শিরক হচ্ছে! ভাবতে অবাক লাগে যে অধিকাংশ মুসলিম মুসরেক। এই মর্মে মহান আল্লাহ্ বলেন যে
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ
তাদেরত অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্র উপর ঈমান আনলেও তারা কিন্তু মুসরেক। (সূরা ইউসুফ আয়াত নং ১০৬)
হাত চুলকালেই টাকা আসে এটা একেবারেই অযুক্তিক ও ইসলাম পরিপন্থি ।বাস্তবে এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। হাত বা হাতের তালু চুলকানোর সাথে টাকা-পয়সা আসা-যাওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক এই বিষয়ে ইরশাদ করেছেনঃযখন তাদের (ফেরআউন ও তার প্রজাদের) কোন কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের অলুক্ষণে বলে গণ্য করত’ (সুরা- আরাফ, আয়াত- ১৩১)
সুতরাং,আমাদের সমাজের মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কার ছড়িয়ে আছে। এই সকল বিষয়কে বিশ্বাস করা হচ্ছে বিদাত বা শির্ক হতে পারে।
অতএব এই ধরনের অবাস্তব ও অযৌক্তিক কথা পরিহার করা উচিত।
আপনার কি মনে হয়?
নিজেকে প্রশ্ন করুন।কখনো কি এমন হয়েছিল যে,আপনার ডান হাত চুলকানোর পর আপনি টাকা পেয়েছিলেন?
হয়তো কয়েকজন মানুষের ডান হাত চুলকানোর পর হাতে টাকা এসেছিল।এটা কেবলই কাকতালীয়।
প্রকৃত অর্থে,আমাদের হাত না চুলকালেও আমরা টাকা পেয়ে থাকি।
এটা শুধুই কুসংস্কার।এর কোনো ভিত্তি নেই।
ইসলামের দৃষ্টিতে এটা বিশ্বাস করা বেদাত।
এই ধরণের বিশ্বাস ইসলামের পরিপন্থি।ইসলামে কাজ করে জীবিকা অর্জনের জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।এখন আমি কাজ না করেই বসে থাকলাম,কখন হাত চুলকাবে আর কখন টাকা পাব।
কিন্তু, এই যে আমি ভ্রান্ত বিশ্বাস মনের মাঝে পোষণ করে রেখেছি।সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথ অবলম্বণ করছি না।তা কি আপাত দৃষ্টিতে, সৃষ্টিকর্তার আদেশ অমান্য করা নয়?
আশা করি আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।