আমরা অনেকেই অযু করি কিন্তু আমাদের অযু রাসুল (সাঃ) এর মতো হয়না আর অযু সঠিক না হলে নামাজ ও হবেনা আমার প্রশ্ন হল ৩টি ১ উত্তম অযু করার নিয়ম ২ অযু শুরু করার পুর্বে দোয়া পড়ে নিলেই হবে নাকি যে সময় হাত পা ধৌত করবো মাথা মাসেহ করবো সে সময় পড়বো ৩ কি করার সময় কি পড়তে হবে বিস্তারিত আলোকপাত করুন
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

অযুর নিয়মকানুন অযুর চারটি ফরজ কাজ। এর যে কোন একটি বাদ গেলে অযু হয় না। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার সাথে ফরজ কাজ পুনরায় করে অযু শুদ্ধ করে নিতে হয়। সুন্নি মতানুসারে অযুর ফরজ ফরজগুলো হলঃ 1. মুখমন্ডল ধোয়া। 2. দুই হাত কনূই পর্যন্ত ধোয়া। 3. মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা মসেহ্ (ভেজা হাত বুলানো) করা । 4. দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত ধোয়া। (ক্ষেত্রবিষেসে চামড়ার মোজার উপর মসেহ্ করা যাবে যাকে খুফস বলা হয়। শিয়া মতানুসারে অযুর ফরজ ফরজগুলো হলঃ 1. মুখমন্ডল ধোয়া। 2. দুই হাত কনূই পর্যন্ত ধোয়া। 3. মাথা এক চতুর্থাংশ মসেহ্ করা । 4. দুই পা ভিজা হাত দ্বারা মাসেহ করা। সুন্নত অযুর করার সময় কিছু কাজ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) অভ্যাসবশতঃ করতেন যা সুন্নি হাদিস মতে, অযুর সুন্নতের (ঐচ্ছিক কাজ) অন্তর্ভুক্ত। যেমন: বিসমিল্লাহ্ বলা। দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। কুলি করা। পানি দিয়ে নাকের ভিতর পরিষ্ক করা। সমস্ত মাথা মসেহ্ এবং কানের সংলগ্ন স্থান মসেহ্ করা। হাত ও পায়ের আংগুলের মধ্যে ফাকা স্থান হাতের আংগুল দিয়ে ধোয়া। দাত পরিষ্কার করা (মেস্ওয়াক কর উত্তম) অযুর কাজগুলো তিনবার করে। মুস্তাহাব অযুর কিছু মুস্তাহাব কাজ (করা উত্তম, না করলেও অযু কার্যকর থাকে) আছে। অযুর পর কালেমা শাহ্দাত পড়া। অযুর দুই কাজের মধ্যে দেরি না করা। অযুর সময় আহেতক কথা না বলা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে অযু কর পানির অপচয় না করা। ডান থেকে বামে ধারাবাহিকতার রক্ষা করে অযু করা। অযুর পদ্ধতি সুন্নি মতানুসারে অযুর পদ্ধতি ১. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-আমি নামাযের উদ্দেশে পবিত্রতা লাভের উদ্দেশে ও আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ওযু করিতেছি” বলে প্রথমে দুই হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে। ২. পানি নিয়ে তা মুখে দিয়ে ভাল মত কুলি করতে হবে। এভাবে তিনবার। তারপর গড়গড়ার সহিত তিনবার কুলি করতে হবে। (রোজা থাকা অবস্থায় গড়গড়ার সহিত কুলি করতে হবে না) ৩. ডান হাতে পানি নিয়ে নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধাংগুলি,আর কনিষ্ঠাংগুলি দ্বারা নাকের ভিতর পরিষ্কার করতে হবে। এমনভাবে পানি প্রবেশ করাতে হবে যেন নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। এইভাবে পর পর তিনবার করতে হবে। ৪. এবারে মুখমন্ডল অর্থাৎ কপালের উপরে যেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজায় সেখান থেকে নিচের থুতনির নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান, পানি দিয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। দাঁড়ি থাকলে তা খিলাল করতে হবে। যেন দাঁড়ি পরিষ্কার হয় এবং সম্ভব হলে দাঁড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছায়। এভাবে তিনবার করতে হবে। ৫. পানি দ্বারা প্রথমে ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ভালভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর একই ভাবে বাম হাতও পরিষ্কার করতে হবে। কারো হাতে আংটি থাকলে দেখতে হবে আংটির নিচেও যেন পানি প্রবেশ করে। ৬. মাথা মাসেহ করার নিয়ম বৃদ্ধাংগুলি আর শাহাদাত আংগুলি আলাদা রেখে দুই হাত দিয়ে কপালে চুল শুরু হবার জায়গা থেকে পিছনে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর একই ভাবে হাত উল্টিয়ে মাথার তিন-চতুর্থাংশ পিছন থেকে সামনে মাসেহ করতে হবে। এবারে শাহাদাত আংগুলি দ্বারা কানের ভিতরের অংশ আর বৃদ্ধাংগুলি দ্বারা কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। এরপর হাতের পিছনের অংশ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করতে হবে। ৭. পানি ঢেলে প্রথমে ডান পায়ের টাখনু বা গোঁড়ালি পর্যন্ত ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এমনভাবে যেন সমস্ত জায়গা পানি পোঁছে। একই ভাবে বাম পা ধৌত করতে হবে। এভাবে তিনবার। শিয়া মতানুসারে অযুর পদ্ধতি অযু ভঙ্গের কারণসমুহ কোন ব্যক্তি অযু করার পর কিছু নির্দিষ্ট কাজ না করলে তার অযু অবিরত বলবৎ থাকে। ঐ কাজগুলো করার মাধ্যমে অযু অকার্যকর হয় যা অযু ভেঙ্গে হওয়াও বলে। উযু ভঙ্গের কারণ ৭টি: 1. পায়খানা-পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। 2. মুখ ভরে বমি হওয়া। 3. শরীরের ক্ষতস্থান হতে রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। 4. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। 5. চিৎ, কাৎ বা হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। 6. পাগল, মাতাল বা অচেতন হওয়া। 7. নামাযে উচ্চ আওয়াজে হাসা। ধূমপান অধিকাংশ ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান করলে অযু নষ্ট হয় না। অযু বিষয়ক হাদিস অযুর বিকল্প তায়াম্মুম তায়াম্মুম অযুর বিকল্প যখন পানি আদৌ লভ্য নয়। তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পাক-পবিত্র মাটির ওপর থাপড়াতে হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের তালুতে কিছু ধূলা লেগে যায়। অতঃপর উভয় হাত দিযে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করতে হয়। এরপর আবার মাটিতে হাত থাপড়িয়ে ধূলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম তালু দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। অজুর শুরুতে দোয়াঃ বিসমিল্লাহিল অালিয়্যিল অাযীম। ওয়াল হামদু লিল্লাহি অালা দ্বীনিল ইসলামি অাল ইসলামু হাক্কুন ওয়াল কুফরু বাতেলুন। অাল ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরু যুলমাতুন। আবু হাইআ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)-কে ওযু করতে দেখেছি। তিনি উভয় হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন এবং ভাল ভাবে পরিষ্কার করলেন, তিনবার কুলি করলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন, তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, একবার মাথা মাসিহ করলেন এবং উভয় পা গোছা পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনি দাড়ালেন এবং ওযুর অবশিষ্ট পানি তুলে নিয়ে তা দাড়ানো অবস্থায় পান করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযু কিরূপ ছিল তা তোমাদের দেখানোর জন্যই আমি এরূপ করা পছন্দ করলাম। (সূনান আত তিরমিজী, হাদিস নম্বরঃ ৪৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন কোন ব্যক্তি যদি খুব ভাল করে অজু করে এই দুআ পড়ে তবে জান্নাতের সব দরজাই তার জন্য খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে সে ইচ্ছা করবে সেটি দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। দুআটি হলঃ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কেউ শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ্! আমাকে তওবাকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং পবিত্রদের অন্তর্ভুক্ত কর।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ