Call

ফরজ নামায শেষে সম্মিলিত ভাবে দোয়া কিভাবে বিদআত হয়?


হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল (সাঃ) তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল (সাঃ) এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন।

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯) এ হাদীসে পরিস্কার ভাবে রাসূল (সাঃ) থেকে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত প্রমানিত।

লক্ষ্য করুন। রাসূল (সাঃ) দুআ করেছেন, আর উপস্থিত সাহাবীগণ আমীন আমীন বলে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ নিয়েছেন। হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী (রাঃ) যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথেক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন।

এ হাদীস বলার তিনি হাবীব বিন মাসলামা (রাঃ) হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা কর। আর আমাদের শহীদের সওয়াব দান কর।

(মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬)

আল্লামা হায়ছামী (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭৩)

আরো একটি হাদীস উদ্ধৃত করছি। যা আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) সনদসহ বর্ণনা করেছেন। যার সারমর্ম হল,আলা বিন হাযরামী (রাঃ) মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রা বিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী (রাঃ) সহ সবাই হাত তুলে সূর্য্য উদিত হওয়ার সূর্য্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯)

হযরত সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা।

(আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫)

আল্লামা হায়ছামী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১)

এরকম আরো অসংখ্য বর্ণনা প্রমাণ করে সম্মলিত মুনাজাত এটি দুআ কবুলের আলামত। সেই সাথে উত্তম আমল। যা কিছুতেই বিদআত হতে পারে না।

যে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল (সাঃ) নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথী বর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে? সুতরাং বুঝা গেল যে, সম্মিলিত মুনাজাত করাও রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে প্রমাণিত। সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে রাসূল (সাঃ) পরিস্কার ভাষায় উৎসাহ প্রদান করেছেন। (সংগ্রহ)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Usaid

Call


ﻭَﻗَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀُ ﻣِﻦْ ﺳَﺎﺩَﺍﺕِ ﺍﻟﺼَّﺤﺎﺑﺔ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﻌﺒَّﺎﺩ ﻣُﺠَﺎﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﻋﻮﺓ، ﺍﺗَّﻔﻖ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻐَﺰْﻭَﺓِ ﺃﻧَّﻪ ﻧَﺰَﻝَ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻘِﺮَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﻔَﺮَﺕِ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞُ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﺍﺩِ ﺍﻟْﺠَﻴْﺶِ ﻭَﺧِﻴَﺎﻣِﻬِﻢْ ﻭﺷﺮﺍﺑﻬﻢ، ﻭﺑﻘﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻟﻴﺲ ﻣﻌﻬﻢ ﺷﺊ ﺳِﻮَﻯ ﺛِﻴَﺎﺑِﻬِﻢْ – ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻴْﻠًﺎ – ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺪِﺭُﻭﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺍﺣِﺪٍ، ﻓَﺮَﻛِﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻬﻢِّ ﻭﺍﻟﻐﻢِّ ﻣﺎﻻ ﻳُﺤَﺪُّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻮَﺻَﻒُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻳُﻮﺻِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ، ﻓَﻨَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩِﻱ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀِ ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃﻳُّﻬﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦ؟َ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟
ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﺃَﻧْﺼَﺎﺭَ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺎ ﻳَﺨْﺬِﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻣِﺜْﻞِ ﺣَﺎﻟِﻜُﻢْ، ﻭَﻧُﻮﺩِﻱَ ﺑِﺼَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟﺼُّﺒﺢ ﺣِﻴﻦَ ﻃَﻠَﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﻓﺼﻠَّﻰ ﺑﺎﻟﻨَّﺎﺱ، ﻓﻠﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼﺓ ﺟَﺜَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﻭَﺟَﺜَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ، ﻭَﻧَﺼِﺐَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋﺎﺀ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﺜْﻠَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻃَﻠَﻌَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺮَﺍﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻳَﻠْﻤَﻊُ ﻣَﺮَّﺓً ﺑَﻌْﺪَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺠْﺘَﻬِﺪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
※ আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেন,আলা বিন হাযরামী রাযিঃ মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আযান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাযিঃ সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া করতে থাকেন। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৬/৩২৮)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
mmoshiur

Call

সম্মিলিত মোনাজাত কখন করা যাবে আর কখন করা যাবে না : আমাদের সমাজে যতগুলি বিদ’আত প্রচলিত আছে , তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত । এই সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া যায় না । কোন কোন বিদ’আত বছরে একবার করা হয় , কোন কোনটি হয়ত মাসে একবার , কোন কোনটি হয়তো সপ্তাহে একবার । কিন্তু সম্মিলিত মুনাজাত এমন এক বিদ’আত যা প্রতিদিন পাঁচবাব করা হয় । সুতরাং এর থেকে দুরে থাকতে হবে । হাদীসে বর্ণিত ফরয সালাতের পর পঠিতব্য দুআ ও যিকিরগুলো এককী পড়তে হবে , দলবদ্ধভাবে নয় । কারণ , হাদীসে এ ক্ষেত্রে পঠিতব্য দুআগুলো প্রায়ই সবই এক বচনের শব্দে এসেছে । দুঃখজনক হলেও সত্য যে , ভারত বর্ষের প্রায় সকল মুসলিম জনগণ (আলিম ও সাধারণ) নবী (সাঃ) কর্তৃক সালাতের পর পঠিতব্য দুআর তালিকাটি আংশিক বা পুরোপুরি বাদ দিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন দুআ নির্বাচন ও সংযুক্ত করেছে । এর সাথে আরো যোগ করেছে দলবদ্ধ ও সম্মিলিত রুপ । ফলে সালাতের পরে দুআর নামে সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে অনেকগুলো সুন্নাত উৎখাত হয়েছে । প্রথমতঃ যে সুন্নাতটি উঠেছে সেটা হল , ফরয সালাতের পর যে নির্দিষ্ট কিছু দুআ ও যিকির রয়েছে এটার জ্ঞানই অধিকাংশ লোকের নেই । যার জন্য ওগুলো কন্ঠস্থ করার সুযোগ তাদের হয়নি । ঐ সকল দুআ ও যিকির সম্বলিত হাদীসগুলো পড়ার কিম্বা ইমাম সাহেবের মাধ্যমে শোনার অবকাশ হয়নি বা নেই । এখন আমি যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায় তা সহীহ হাদীসের মাধ্যমে তুলে ধরবোঃ যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায় (১) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃআনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন , নবী করীম (সাঃ) এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল । সে সময় একদিন নবী (সাঃ) খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল , হে আল্লাহর রাসূল ! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে , পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে । আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন । অতঃপর রাসূল (সাঃ) স্বীয় হস্তদয় উত্তোলন পূর্বক দোয়া করলেন । সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না । (রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি , তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খন্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তার মিম্বার থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল । এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তি জুম’আ পর্যন্ত হ’তে থাকল । অতঃপর পরবর্তি জুম’আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল , হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে , ফসল ডুবে যাচ্ছে । অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করুন । তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন , ‘হে আল্লাহ ! আমাদের পার্শ্ববর্তি এলাকায় বৃষ্টি দাও , আমাদের এখানে নয় । এ সময় তিনি স্বীয় আঙ্গুলী দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করছিলেন । ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল । ( বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১২৭ , হা/৯৩৩ জুম’আর সালাত’ অধ্যায়) একই বিষয় সম্পর্কিত আরও হাদীস দেখুন – বুখারী প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায় ।বৃখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৩৭ ; মুসলিম , প্রথম খন্ড , পৃঃ ২৯৩-২৯৪ ।.মুসলিম , মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ ।বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০৩১ ; মিশকাত হা/১৪৯৯। (২) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ উপরে এক নম্বরে আলোচিত দলীল সমূহ । (৩) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের সময়ঃ আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) বলেন , আমি রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম । হঠাৎ দেখি সূর্য গ্রহণ লেগেছে । আমি তীর গুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম , আজ সূর্য গ্রহণে রাসূল সাঃ এর অবস্থান লক্ষ্য করব । অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌছলাম । তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি “আল্লাহু আকবার” , “আলহামদু লিল্লাহ” , “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলছিলেন । শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল । অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন । (মুসলিম ১ম খন্ড , পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩ , চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত অধ্যায়) (৪) উম্মাতের জন্য রাসূল সাঃ এর দোয়াঃ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস রাঃ বলেন , একদা রাসূল সাঃ সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন , আমার উম্মাত , আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন । তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন , হে জিবরীল ! তুমি আমার মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর , কেন তিনি কাঁদেন । অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন । তখন রাসূল সাঃ তাঁকে বললেন , আল্লাহ তায়ালা তা অবগত । অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জিবরীলকে বললেন , যাও , মুহাম্মাদকে বল যে , আমি তার উপর এবং তার উম্মাতের উপর সন্তুষ্ট আছি । আমি তার অকল্যাণ কবর না’ (মুসলিম , ১ম খন্ড , পৃ১১৩ , হা/৩৪৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়) (৫) কবর জিয়ারতের সময়ঃ আয়েশা রাঃ বলেন , একদা রাতে রাসূল সাঃ আমার নিকটে ছিলেন । শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন । তিনি অল্প সময় এ খেয়ারে থাকলেন যে , আমি ঘুমিয়ে পড়েছি । অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন । তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় তাঁর পিছনে চললাম । তিনি “বাক্বীউল গারক্বাদে” (জান্নাতুল বাক্বী) পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন । অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন । (মুসলিম , ১ম খন্ড , পৃঃ ৩১৩ , হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ-৩৫) আয়েশা রাঃ বলেন , কোন এক রাতে রাসূল সাঃ বের হলেন , আমি বারিরা রাঃ কে পাঠালাম , তাঁকে দেখার জন্য যে , তিনি কোথায় যান । তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন । অতঃপর হাত তুলে দোয়া করলেন । তারপর ফিরে আসলেন । বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল । আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম , হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন ? তিনি বললেন জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলাম কবর বাসীর জন্য দোয়া করতে । (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন , পৃঃ ১৭ , হাদীস সহীহ; মুসলিম হা/৯৭৪ (মর্মার্থ)) (৬) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দোয়া: আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবু আমের স্বীয় ভাতিজা আবু মুসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে , আপনি আমার পক্ষ থেকে রাসূল সাঃ কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন । আবু মুসা আশ’আরী রাঃ রাসূলু্ল্লাহ সাঃ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযু করলেন । এবং হাত তুলে প্রার্থনা করলেন , “হে আল্লাহ ! উবাইদ এবং আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও । (রাবী বলেন) এ সময় আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম ।তিনি বললেন , “হে আল্লাহ ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের উর্ধ্বে করে দিও” ।(বুখারী , ২য় খন্ড , পৃঃ ৯৪৪ , হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু’আ সমূহ’ অধ্যায় ) (৭) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময় :আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাঃ তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন । প্রথম দু’জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু’আ করতেন । তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না । শেষে বলতেন , আমি রাসূল সাঃ কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি । (বুখারী , ১ম খন্ড , পৃঃ ২৩৬৭ , হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায় ) (৮) যুদ্ধক্ষেত্রে :ওমর ইবনু খাত্তাব রাঃ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূল সাঃ বদরের যু্দ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন , তাদের সংখ্যা এক হাজার । আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত উনিশ জন । তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করতে লাগলেন । এ সময় তিনি বলছিলেন , ‘হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ । হে আল্লাহ ! তুমি যদি এই জামা’আতকে আজ ধ্বংস করে দাও , তাহ’লে এই জমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না । এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলা মুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন । এ সময় তাঁর কাঁধ হতে চাদরখানা পড়ে গেল । আবু বকর রাঃ তখন চাদরখানা কাঁধে তুলে দিয়ে রাসূল সাঃ কে জড়িয়ে ধরে বললেন , হে আল্লাহর রাসূল ! সাঃ আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট । নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন । (মুসলিম , ২য় খন্ড , পৃঃ ৯৩ , হা/১৭৬৩ , ‘জিহাদ’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ – ১৮ ) (৯) কোন গোত্রের জন্য দু’আ করা : আবু হুরায়রা রাঃ বলেন , একদা আবু তুফাইল রাসূল সাঃ এর কাছে গিয়ে বলল , হে আল্লাহর রাসূল ! দাউস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে , আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন । তখন রাসূল সাঃ ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন , হে আল্লাহ ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (বুখারী , মুসলিম , ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ , পৃঃ ২০৯ , হা/৬১১ সনদ সহীহ) (১০) সাফা মারওয়া সায়ী করার সময় : আবু হুরায়রা রাঃ বলেন , রাসূল সাঃ মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন , বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং সাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন । অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলন পুর্বক আল্লাহকে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন । (সহীহ আবু দাউদ , হা/১৮৭২ সনদ সহীহ , মিসকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায় ) (১১) কুনুতে নাযেলার সময় :আবু উসামা রাঃ হতে বর্ণিত , রাসূল সাঃ কুনুতে নাযেলায় হাত তুলে দু’আ করেছিলেন । (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন , সনদ সহীহ) হাত তুলে দু’আ করার অন্যান্য সহীহ হাদীস সমূহঃ (১২) খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ এর অপছন্দ কর্মের কারণে হাত তুলে দু’আ :সালেমের পিতা হ’তে বর্ণিত , নবী করীম সাঃ খালিদ ইবনু ওয়ালিদকে বনী জামীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন । খালিদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন । তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল । কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল , ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ তখন খালিদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন । একদিন খালিদ আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দেশ দিলেন । আমি বললাম , আল্লাহর কসম ! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না । অবশেষে আমরা নবী করীম সাঃ এর খেদমতে হাযির হলাম এবং তার কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম । তখন নবী করীম সাঃ স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন , ‘হে আল্লাহ ! খালিদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত’ – এ কথা তিনি দু’বার বললেন । (বুখারী , ২য় খন্ড , পৃঃ ৬২২ , হা/৪৩৩৯ ‘মাগাযী’ অধ্যায়) (১৩) সাদাক্বাহ আদায়কারীর ভুল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দু’আঃ আবু হুমায়েদ সায়েদী রাঃ বলেন , একবার নবী সাঃ ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক ‘আসাদ’ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন । তখন সে যাকাত নিয়ে মদীনায় ফিরে এসে বলল , এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত , আর এ অংশ আমাকে হাদীয়া স্বরুপ দেয়া হয়েছে । এ কথা শুনে নবী সাঃ ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুনগান বর্ণনা করলেন । অতঃপর বললেন , আমি তোমদের কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি , যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা আমার উপর সমর্পণ করেছেন । অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে বলে যে , এটা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত , আর এটা আমাকে হাদীয়া স্বরুপ দেয়া হয়েছে । সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদীয়া দিয়ে যায় । আল্লাহর কসম , যে ব্যক্তি এর কোন কিছু গ্রহণ করবে , সে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির হবে । যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয় , উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে , যদি গরু হয় তবে ‘হাম্বা হাম্বা’ করবে । আর যদি ছাগল-ভেড়া হয় , তবে ‘ম্যা ম্যা’ করবে । অতঃপর রাসূল সাঃ স্বীয় হস্তদ্বয় উঠালেন , তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম । তিনি বললেন , ‘হে আল্লাহ ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম । হে আল্লাহ ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’ ।(বুখারী , পৃঃ ৯৮২ , হা/ ৬৬৩৬ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায় ) (১৪) মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে হাত তুলে দু’আ :আয়েশা রাঃ রাসূল সাঃ কে হাত তুলে দু’আ করতে দেখেন । তিনি দু’আয় বলছিলেন , ‘নিশ্চয় আমি মানুষ । কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদাণ কর না’ । ( সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ , হা/৬১০ , পৃঃ ২০৯ ; সিলসিলাহ সহীহা , হা/৮২-৮৩ , সনদ সহীহ ) সম্মানিত পাঠকগণ ! এখানে হাত তুলে দু’আ করার প্রমাণে অনেকগুলো হাদীস পেশ করা হল , যদ্দ্বারা প্রমাণিত হয় যে , হাত তুলে দু’আ করার বিধান শরীয়াতে রয়েছে । উক্ত হাদীছ গুলোতে এককভাবে হাত তুলে দু’আ করার কথা এসেছে । শুধু প্রথম হাদীসটিতে সম্মিলিতভাবে দু’আ করার কথা এসেছে যা ইসতিস্কা বা পানি চাওয়া সংক্রান্ত । ইসতিস্কা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে , যাতে সম্মিলিতভাবে দু’আ করার কথা আছে । তাই এই দু’আ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিয়ম পদ্ধতির এক চুলও ব্যতিক্রম করা যাবে না । যে ক্ষেত্রে যেভাবে দু’আ করার কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু’আ করতে হবে । কেননা দু’আও ইবাদতেরই অংশ বিশেষ । অতএব এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা বিদ’আতে পরিণত হবে । (বুখারী , মুসলিম , মিশকাত হা/২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায় ) হাত তুলে দু’আর প্রমাণে পেশকৃত য’ঈফ হাদীস সমূহঃ (১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন , নবী (সাঃ) বলেছেন : যখন কোন বান্দা প্রত্যেক সালাতের পর দু’হাত প্রশস্ত করে , অতঃপর বলে , হে আমার মাবুদ এবং ইবরাহিম , ইসহাক্ব (আঃ) এর মাবুদ এবং জিবরীল , মীকাঈল ও ইসরাফীল (আঃ) এর মাবুদ , তোমার কাছে আমি চাচ্ছি , তুমি আমার প্রার্থনা কবুল কর । আমি বিপথগামী , তুমি আমাকে আমার দ্বীনের উপর রক্ষা কর । তুমি আমার উপর রহমত বর্ষণ কর । আমি অপরাধী , তুমি আমার দারিদ্রতা দূর কর । আমি দৃঢ়ভাবে তোমাকে গ্রহণ করি । তখন আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে যায় তার খালি হাত দু’খানা ফেরত না দেয়া । (ইবনুস সুন্নী , আমালুল ইয়াম ওয়াল লাইল ৪৯পৃঃ) হাদীসটি যঈফ । হাদীসটির সনদে আব্দুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান ও খাদীফ নামে দু’জন দূর্বল রাবী রয়েছে ।তা সত্ত্বেও অত্র দুর্বল হাদীসে একক ব্যক্তি হাত তুলে দু’আ প্রমাণিত হয় , দলবদ্ধভাবে দু’আ প্রমাণিত হয় না । (২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত , একদা রাসূল (সাঃ) সালাম ফিরার পর ক্বিবলা মুখ হয়ে দু’হাত উঠালেন এবং বললেন , হে আল্লাহ ! ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদকে পরিত্রাণ দাও । আইয়াশ , ইবনু আবী রবী’আহ , সালাম ইবনু হিশাম এবং দূর্বল মুসলমানদের পরিত্রাণ দাও । যারা কোন কৌশল জানে না । যারা কাফিরদের হাত হতে কোন পথ পায় না – (ইবনু কাসীর , ২য় খন্ড , পৃঃ ৫৫৫ ; সুরা নিসা ৯৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ) । হাদীসটি যঈফ (ইবনু হাজার আসক্বালানী , তাহযীবুত তাহযীব , ৭/২৭৪ , রাবী নং ৪৯০৫) আলোচ্য হাদীসে আলী ইবনু যায়েদ ইবনু জাদআন যঈফ রাবী । (ইবনু হাজার আসক্বালানী , তাক্ববীর , পৃঃ ৪০১ , রাবী নং ৪৭৩৪ । এ রাবীকে শায়খ আলবানীও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন , দেখুন “যিলালিল জান্নাহ” (৬৩০) , “আল ইসরা ওয়াল মি’রাজ” (পৃঃ ৫২) ও কিসসাতু মাসীহিদ দাজ্জাল” গ্রন্থে (পৃঃ৯৪) অন্য প্রসঙ্গে বর্ণিত একটি হাদীসে) আলোচ্য হাদীসটি মুনকার তথা সহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ হাদীস বিরোধী । আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকুর পর দু’আ করার কথা রয়েছে । অথচ এ দূর্বল হাদীসে সালামের পরের কথা রয়েছে । বুখারীর হাদীসে হাত তোলার কথা নেই , কিন্তু এ হাদীসে হাত তোলার কথা বলা হয়েছে । অথচ ঘটনা একটিই এবং দু’আ হল কুনুতে নাযেলা । (সহীহুল বুখারী , হা/২৯৩২ , ‘জিহাদ’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ ৯৮ , মুসলিম ৬৭৫ , নাসাঈ ১০৭৪ , আবু দাউদ ১৪৪২ , ইবনু মাজাহ ১২৯৪ , আহমাদ ৭৪১৫ , ও দারেমী ১৫৯৫ )অতএব সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আর প্রমাণ পেশ করা শরীয়ত বিকৃত করার শামিল । (৩) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন , রাসূল (সাঃ) বলেছেন , সালাত দু’ দু’রাকাত এবং প্রত্যেক দু’রাকাতেই তাশাহুদ , ভয় , বিনয় ও দীনতার ভাব থাকবে । অতঃপর তুমি ক্বিবলামুখী হয়ে তোমার দু’হাতকে তোমার মুখের সামনে উঠাবে এবং বলবে , হে আমার প্রতিপালক ! হে আমার প্রতিপালক ! যে এরুপ করবে না তার সালাত অসম্পূর্ণ (মিশকাত , পৃঃ ৭৭ , হাদীস/৮০৫ ‘সালাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ ) হাদীসটি যঈফ । ‘আব্দুল্লাহ ইবনু নাফি’ ইবনিল আময়া যঈফ রাবী । (আলবানী , যঈফ আবু দাউদ , হা/১২৯৬ , যঈফ ইবনে মাজাহ , হা/১৩২৫ , ইবনু খুজায়মা , হা/১২১২ , যঈফুল জামে আস সগীর , হাদীস/৩৫১২ ; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৮০৫-এর টিকা নং ৩ ; তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ৩২৬ , রাবী নং ৩৬৫৮) এ হাদীসটি দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও এতে নফল সালাতের কথা বলা হয়েছে এবং এককভাবে দু’আর কথা এসেছে । (৪) খাল্লাদ ইবনু সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসূল (সাঃ) যখন দু’আ করতেন , তখন তাঁর দু’হাত মুখের সামনে উঠাতেন (মাযমাউয যাওয়ায়েদ , ১ম খন্ড , পৃঃ ১৬৯ ) হাদীসটি যঈফ । হাফস ইবনু হাসি ইবনু উৎবা যঈফ রাবী অ (তাক্বরীবুত তাহযীব , পৃঃ ১৭৪ , রাবী নং ১৪৩৪) (৫) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন , রাসূল (সাঃ) বলেছেন , তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না । অতঃপর তোমরা যখন দুআ শেষ কর তখন তোমাদের হাত দ্বারা চেহারা মুছে নাও । (হাদীসটি দুর্বল , দেখুন যঈফ আাবু দাউদ , ১৪৮৫ , উল্লেখ্য তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না , এই অংশ টুকু সহীহ , দেখুন সহীহ আবু দাউদ , ১৪৮৬ , সহীহ জামেউস সগীর , ৫৯৩ ৩৬৩৪ ও সিলসিলাহ আহাদীসিস সহীহাহ , ৫৯৫) । প্রকাশ থাকে যে , হাত তুলে দুআ করার পর হাত চেহারায় মুছার প্রমাণে কোন সহীহ হাদীস নেই । বিস্তারিত দেখুন – ইরওয়াউল গালীল ২/১৭৮-১৮২ , হা/৪৩৩ ও ৪৩৪ এর আলোচনা তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/২২৫৫ এর টিকা নং ৪ । (৬) সায়িব ইবনু ইয়াযিদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন , রাসূল (সাঃ) যখন দুআ করতেন তখন দুহাত উঠাতেন এবং দুহাত দ্বারা চেহারা মুছে নিতেন । (আবু দাউদ , হা/১৪৯২ ; মিশকাত হা/২২৫৫) ।. হাদীসটি যঈফ ।. আলোচ্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু লাহইয়াহ নামক রাবী যঈফ । (যঈফ আবু দাউদ , হা/১৪৯২ , পৃঃ ১১২ ; আউনুল মাবুদ , ১ম খন্ড ,পৃঃ ৩৬০ ; তাক্বরীব পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩) (৭) আসওয়াদ আমিরী তার পিতা হতে বর্ণনা করেন , তার পিতা বলেন , আমি রাসূল (সাঃ) এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করেছি । যখন তিনি সালাম ফিরালেন এবং ঘুরলেন তখন হাত উঠিয়ে দুআ করলেন । (ইবনু আবী শায়বা , ১ম খন্ড , পৃঃ ৩৩৭) প্রকাশ থাকে যে , রাসূল (সাঃ) তার হাত উঠালেন এবং দুআ করলেন , এই অংশটুকু মূল হাদীসে নেই । (ইবনু আবী শায়বা , আল মুসান্নাফ , ১/৩৩৭ , সালাত অধ্যায় , অনুচ্ছেদ ৭৬) মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী এবং আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তারা নিজ নিজ গ্রন্থে হাদীসগুলো আলোচনা করেছেন । কিন্তু সহীহ যঈফের মানদন্ডে হাদীসগুলো সহীহ নয় । তাই এখনও যারা এ হাদীস বক্তব্য বা লিখনীর মাধ্যমে প্রচার করতে চাইবেন তাদেরকে অবশ্যই হাদীসের মূল কিতাব দেখে পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথা তারা হবেন নবীর উপর মিথ্যারোপকারী এবং মিথ্যা প্রচারকারী , যাদের পরিণতি ভয়াবহ । (মুসলিম , মিশকাত হা/১৯৮ , ১৯৯ ইলম অধ্যায়) (৮) আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের একজন লোককে সালাত শেষের পূর্বে হাত তুলে দুআ করতে দেখলেন । যখন তিনি দুআ শেষ করলেন , তখন আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের তাকে বললেন , রাসূল (সাঃ) সালাত শেষ না করা পর্যন্ত হাত তুলে দুআ করতেন না – (মাজমাউয যাওয়ায়েদ , ১ম খন্ড , পৃঃ ১৬৯) ।. হাদীসটি যঈফ , (মুনকার), সহীহ হাদীস বিরোধী । সহীহ হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকুর পর কুনুতে নাযেলা পড়ার সময় হাত তুলার কথা আছে – (আহমাদ , তাবারানী , সনদ সহীহ , ইরওয়াউল গালীল , ২/১৮১ , হ/৮৩৮-এর আলোচনা দ্রঃ) ।. তবে সালাতের পর হাত তোলার কোন সহীহ হাদীস নেই । (৯) আবু নাঈম (রাঃ) বলেন , আমি ওমর ও ইবনু যুবায়ের (রাঃ) কে তাদের দুহাতের তালু মুখের সামনে করে দুআ করতে দেখেছি । অত্র হাদীসে মুহাম্মাদ ইবন ফোলাইহ এবং তার পিতা তারা দুজনই যঈফ রাবী । (আল আদাবুল মুফরাদ , তাহক্বীক্ব , হা/৬০৯ পৃঃ ২০৮ ; দুআয় হাত তোলা অনুচ্ছেদ , পৃঃ ২০৮) ফরয সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু’আ করা সম্বদ্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ট আলেমদের অভিমতঃ (১) আহমাদ ইবনু তাইমিয়াহ (রাঃ) কে ফরয সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন , “সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করা বিদ’আত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এরুপ দু’আ ছিল না । বরং তার দু’আ ছিল সালাতের মধ্যে । কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু’আ করা যথাযথ” । ( মাজমুআ ফাতাওয়া , ২২/ ৫১৯পৃঃ) (২) শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহঃ) বলেন , “পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা স্পষ্ট বিদ’আত । কারণ এরুপ দু’আ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না । যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধীতা করে ।” (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৪৪পৃঃ) তিনি আরো বলেন , “ইমাম-মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে , কথা , কর্ম ও অনুমোদন ( কাওলী , ফে’লী , তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই । আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সম্স্ত কল্যাণ । সালাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদির দু’আ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে , যা তিনি সালামের পর পালন করতেন । চার খলীফা সহ সাহাবীগণ এবং তাবেঈ গণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন । অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধীতা করবে , তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে । রাসূল (সাঃ) বলেন , “যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে , তা পরিত্যাজ্য ।” কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে । অন্যথায় (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য ।” (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৫৭) (৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস আল্লামা শায়খ নাসিরউদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন , “দু’আয়ে কুনুতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ’আত । সালাতের পরেও ঠিক নয় । এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে , এর সবগুলিই যঈফ । এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন , সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা মুর্খদের কাজ । (সিফাতু সালাতিন নাবী (সাঃ) পৃঃ ১৪১ (৪) শায়খ উছায়মিন (রহঃ) বলেন , সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা বিদ’আত । যার প্রমাণ রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ থেকে নেই । মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে । (ফাতাওয়া উছায়মিন , পৃঃ ১২০) (৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা ব্যতীত অনেক দু’আই রয়েছে । (রফূস সামী , পৃঃ ৯৫) (৬) আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী (রহঃ) বলেন , বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে , ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেন , এ প্রথা রাসূল (সাঃ) এর যুগে ছিল না । ফৎওয়া আব্দুল হাই , ১ম খন্ড , পৃঃ ১০০) (৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন , অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত নয় । (মা’আরেফুস সুনান , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৪০৭) (৮) আল্লামা আবুল কাশেম নানুতুবী বলেন , ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ’আত । (এমদুদ্দীন , পৃঃ ৩৯৭) (৯) আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন , ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদী গণের দিকে ফিরে মুক্তাদী গণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল (সাঃ) এর তরীকা নয় । এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই । ( ইবনুল কাইয়্যেম , যাদুল মা’আদ , ১ম খন্ড ,পৃঃ নং ১৪৯ ‘ফরয সালাতের পর দু’আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ ) (১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন , তা কখনও রাসূল (সাঃ) করেননি । এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না ।(ছিফরুস সা’আদাত , পৃঃ২০) (১১) আল্লামা শাত্বেবী (রহঃ) বলেন , শেষ কথা হল এই যে , ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে রাসূল (সাঃ) নিজেও মুনাজাত করেননি , করার আদেশও দেননি । এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন , এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । (আল-ইতেসাম ,১ম খন্ড , পৃঃ ৩৫২) (১২) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন , নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে , রাসূল (সাঃ) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেছেন , এরুপ কখনও দেখা যায় না । চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । তাই এ ধরনের কাজ , যা রাসূল (সাঃ) করেননি , তাঁর সাহাবীগণ করেননি , নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ’আত । (মাদখাল , ২য় খন্ড , পৃঃ ২৮৩) (১৩) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী বলেন , ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন , এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গারবহিনী বলেন , এ দু’আকে সুন্নাত অথবা মুস্তহাব মনে করা না জায়েজ । (ইস্তিবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ৮) (১৪) মুফতী মুহাম্মাদ শফী বলেন , বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে , কিছু আবরী দু্’আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে ) ঐ মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন । কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে , এ দু’আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না । আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে , অনেক মুক্তাদী এ সম্স্ত দু’আর অর্থ মোটেই বুঝে না । কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন , আ-মীন বলতে থাকে । এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র । প্রার্থনার যে রুপ বা প্রকৃতি , তা এতে পাওয়া যায় না । (মা’আরেফুল কুরআন , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৫৭৭) তিনি আরো বলেন , রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হ’তে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না । সারকথা হ’ল , এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থি । (আহকামে দু’আ , পৃঃ ১৩) (১৫) মুফতী আযম ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী বলেন , ফরয সালাতের পর দু’আর চারটি নিয়ম আছে । (১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দু’আ সমূহ পড়া । নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দু’আ করা । এটা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় । তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দু’আ করা । এটা না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত , না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । (৪) ফরয সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই । না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত , না হাদীস সমূহ দ্বারা , সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক । আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে । এ দু’আ অবশ্যই বিদ’আত (আহকামে দু’আ , পৃঃ ২১) (১৬) পাকিস্থানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ বলেন , রাসূল (সাঃ) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা’আত সহকারে পড়তেন । যদি রাসূল (সাঃ) কখনও সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহলে নিশ্চয়ই একজন সাহাবী হলেও তা বর্ণনা করতেন । কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সম্পর্কে পাওয়া যায়নি । তারপর কিছুক্ষনের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরুপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে , তা নিঃসন্দেহে বিদ’আত । (আহসানুল ফাতাওয়া , ৩য় খন্ড ,পৃঃ ৬৮ ) (১৭) মাওলানা মওদুদী বলেন , এতে সন্দেহ নেই যে , বর্তমানে জামা’আতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদী মিলে যে নিয়মে দু’আ করেন , এ নিয়ম রাসূল (সাঃ) এর যামানায় প্রচলিত ছিল না । এ কারণে বহুসংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছেন । ( আহসানুল ফাতাওয়া , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৬৯৮) (১৮) মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রশ্নোত্তর কলামে বলা হয়েছে , জামা’আতে ফরয সালাতান্তে ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত ও মাকরুহে তাহরীমী । কেননা সাহাবয়ে কেরাম , তাবেঈন , তাবে তাবেঈনদের কেউ এ কাজ শরী’আত মনে করে ‘আমল করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । তা নিশ্চয়ই মাকরুহ ও বিদ’আত । ( মাসিক মঈনুল ইসলাম , ছফর সংখ্যা ১৪১৩ হিঃ ) প্রকাশ থাকে যে , কোন কোন ‘আলেম ফরয সালাতান্তে হাত উঠিয়ে দু’আ করার প্রমাণে কিছু পুস্তক লিখলেও প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি বিতর্কিত নয় । সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে আমরাই বিষয়টিকে বিতর্কিত করেছি । কারণ একথা সর্বজন বিদিত যে , রাসূল সাঃ , সাহাবীগণ ও তাবেঈগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে কখনো দু’আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ‘আলিমগণ করেননি এবং বর্তমানেও করেন না । কাজেই এটি স্পষ্ট বিদ’আত । আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করার তাওফীক দান করুন – আমীন !! লিখেছেনঃ ফরয সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত : একটি প্রচলিত বিদআত তাসনীম

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ