ছোটবেলা থেকেই ফরজ নামাজের পরে মোনাজাত করে আসতেছি। বাবা, মসজিদের হুজুর, আশেপাশের মানুষগুলো ফরজ নামাজের পরে মোনাজাত করে। তাদের দেখাদেখি আমিও মোনাজাত করতাম। কিছুদিন আগে এক ছোট ভাই বলল ফরজ নামাজের পরে নবী করিম সাঃ মোনাজাত করতেন না। ফরজ নামাজের পরে মোনাজাত প্রসঙ্গে নাকি কোন দলিল নাই। এরপর আমি ইউটিউবে কয়েকটা মুফতি মহাদ্দেসের  ফতোয়া শুনলাম তারাও বলল ফরজ নামাজের পড়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন না। এরপর গুগোলে ঘাটাঘাটি করে দেখলাম ফরজ নামাজের পরে মুনাজাত সম্পর্কে কোন হাদিস বা কুরআনের আয়াত নেই।  তারপরে আমিও ফরজ নামাজের পরে দোয়া করছি না। এখন আশেপাশের লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে, একজন এসে বলল কি ব্যাপার আপনাকে প্রায়ই দেখি আপনি দোয়া করেন না।  আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফরজ নামাজের পরে মোনাজাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই এবং আপনাদের কাছেও জানতে চাই আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে কি মনে হয়?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Habib96

Call

ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের বিষয় বুঝতে হলে তিনটি পয়েন্ট ভাল করে বুঝতে হবে। যথা- ১ ফরজ নামাযের পর মুনাজাত প্রমাণিত কি না? ২ সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না? ৩ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী? ১ম বিষয় ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- ক) ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ، ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻓَﻘُﻞْ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻓِﻌْﻞَ ﺍﻟﺨَﻴْﺮَﺍﺕ،ِ ﻭَﺗَﺮْﻙَ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮَﺍﺕِ، ﻭَﺣُﺐَّ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ ، হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুহাম্মদ! যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দুআ করবে- হে আল্লাহ!আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৩৩} খ) ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন- ﻋَﻦْ ﻛﺎﺗﺐ ﺍﻟﻤﻐﻴﺮﺓ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ : ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻓﻲ ﺩﺑﺮ ﺻﻼﺗﻪ হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায শেষে দুআ করতেন। {আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০} গ) ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻣَﻘَﺎﻣِﻲ ﺑَﻴْﻦَ ﻛَﺘِﻔَﻲْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺧَﻴْﺮَ ﻋُﻤُﺮِﻱ ﺁﺧِﺮَﻩُ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺧَﻮَﺍﺗِﻴﻢَ ﻋَﻤَﻠِﻲ ﺭِﺿْﻮَﺍﻧَﻚَ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺧَﻴْﺮَ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺃَﻟْﻘَﺎﻙَ » হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল সাঃ এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল সাঃ সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচে’ সুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। {আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪১১} ঘ) হযরত সাদ রাঃ বলেন, ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺘَﻌَﻮَّﺫُ ﺑِﻬِﻦَّ ﻓِﻲ ﺩُﺑُﺮِ ﻛُﻞِّ ﺻَﻠَﺎﺓٍ ‏« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒُﺨْﻞِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠُﺒْﻦِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﺃُﺭَﺩَّ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺭْﺫَﻝِ ﺍﻟْﻌُﻤُﺮِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻭَﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ » রাসূল সাঃ প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯} ঙ) ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦَ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ ﻭَﺭَﺃَﻯ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺭَﺍﻓِﻌًﺎ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺑِﺪَﻋَﻮَﺍﺕٍ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺮُﻍَ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻨْﻬَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻔْﺮُﻍَ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ কে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪} এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন। ২য় বিষয় পূর্বের আলোচনা দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, রাসূল সাঃ ফরজ নামায শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এখন প্রশ্ন হল, রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করা প্রমাণিত কি না? নিচে কয়েকটি হাদীস দেয়া হল। যা পরিস্কারভাবে সম্মিলিত দুআ করা ও সম্মিলিত দুআর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ১ ﺃَﻧَﺲَ ﺑْﻦَ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻰ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃَﻋْﺮَﺍﺑِﻲٌّ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺒَﺪْﻭِ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻫَﻠَﻜَﺖِ ﺍﻟﻤَﺎﺷِﻴَﺔ،ُ ﻫَﻠَﻚَ ﺍﻟﻌِﻴَﺎﻝُ ﻫَﻠَﻚَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ‏« ﻓَﺮَﻓَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ، ﻳَﺪْﻋُﻮ، ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃَﻳْﺪِﻳَﻬُﻢْ ﻣَﻌَﻪُ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ » হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সাঃ এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯} এ হাদীসে পরিস্কারভাবে রাসূল সাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত প্রমানিত। লক্ষ্য করুন। রাসূল সাঃ দুআ করেছেন, আর উপস্থিত সাহাবীগণ আমীন আমীন বলে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ নিয়েছেন। ২ ﻋَﻦْ ﺣَﺒِﻴﺐِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻠَﻤَﺔَ ﺍﻟْﻔِﻬْﺮِﻱِّ – ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻣُﺴْﺘَﺠَﺎﺑًﺎ :- ﺃَﻧَّﻪُ ﺃُﻣِّﺮَ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻴْﺶٍ ﻓَﺪَﺭِﺏَ ﺍﻟﺪُّﺭُﻭﺏِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻟَﻘِﻲَ ﺍﻟْﻌَﺪُﻭَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ – ﻳَﻘُﻮﻝُ : ” ‏« ﻟَﺎ ﻳَﺠْﺘَﻤِﻊُ ﻣَﻠَﺄٌ ﻓَﻴَﺪْﻋُﻮ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺆَﻣِّﻦُ ﺳَﺎﺋِﺮُﻫُﻢْ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺟَﺎﺑَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ » “. ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻪُ ﺣَﻤِﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻭَﺃَﺛْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺣْﻘِﻦْ ﺩِﻣَﺎﺀَﻧَﺎ، ﻭَﺍﺟْﻌَﻞْ ﺃُﺟُﻮﺭَﻧَﺎ ﺃُﺟُﻮﺭَ ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀِ ، ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟﻄَّﺒَﺮَﺍﻧِﻲُّ ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟْﻬَﻨْﺒَﺎﻁُ ﺑِﺎﻟﺮُّﻭﻣِﻴَّﺔِ : ﺻَﺎﺣِﺐُ ﺍﻟْﺠَﻴْﺶِ . ﻭَﺭِﺟَﺎﻟُﻪُ ﺭِﺟَﺎﻝُ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﺑْﻦِ ﻟَﻬِﻴﻌَﺔَ، ﻭَﻫُﻮَ ﺣَﺴَﻦُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ . হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রাঃ। যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”। এ হাদীস বলার তিনি [হাবীব বিন মাসলামা রাঃ] হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা কর। আর আমাদের শহীদের সওয়াব দান কর। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬} আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭} ৩ আরো একটি হাদীস উদ্ধৃত করছি। যা আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেছেন। যার সারমর্ম হল,আলা বিন হাযরামী রাঃ। মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাঃ সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। {আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯} উক্ত ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণের আরবী পাঠ ﻭَﻗَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀُ ﻣِﻦْ ﺳَﺎﺩَﺍﺕِ ﺍﻟﺼَّﺤﺎﺑﺔ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﻌﺒَّﺎﺩ ﻣُﺠَﺎﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﻋﻮﺓ، ﺍﺗَّﻔﻖ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻐَﺰْﻭَﺓِ ﺃﻧَّﻪ ﻧَﺰَﻝَ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻘِﺮَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﻔَﺮَﺕِ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞُ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﺍﺩِ ﺍﻟْﺠَﻴْﺶِ ﻭَﺧِﻴَﺎﻣِﻬِﻢْ ﻭﺷﺮﺍﺑﻬﻢ، ﻭﺑﻘﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻟﻴﺲ ﻣﻌﻬﻢ ﺷﺊ ﺳِﻮَﻯ ﺛِﻴَﺎﺑِﻬِﻢْ – ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻴْﻠًﺎ – ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺪِﺭُﻭﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺍﺣِﺪٍ، ﻓَﺮَﻛِﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻬﻢِّ ﻭﺍﻟﻐﻢِّ ﻣﺎﻻ ﻳُﺤَﺪُّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻮَﺻَﻒُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻳُﻮﺻِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ، ﻓَﻨَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩِﻱ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀِ ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃﻳُّﻬﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦ؟َ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﺃَﻧْﺼَﺎﺭَ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺎ ﻳَﺨْﺬِﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻣِﺜْﻞِ ﺣَﺎﻟِﻜُﻢْ، ﻭَﻧُﻮﺩِﻱَ ﺑِﺼَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟﺼُّﺒﺢ ﺣِﻴﻦَ ﻃَﻠَﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﻓﺼﻠَّﻰ ﺑﺎﻟﻨَّﺎﺱ، ﻓﻠﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼﺓ ﺟَﺜَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﻭَﺟَﺜَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ، ﻭَﻧَﺼِﺐَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋﺎﺀ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﺜْﻠَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻃَﻠَﻌَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺮَﺍﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻳَﻠْﻤَﻊُ ﻣَﺮَّﺓً ﺑَﻌْﺪَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺠْﺘَﻬِﺪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ ৪ ﻋَﻦْ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻣَﺎ ﺭَﻓَﻊَ ﻗَﻮْﻡٌ ﺃَﻛُﻔَّﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻪُ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﻥْ ﻳَﻀَﻊَ ﻓِﻲ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺳَﺄَﻟُﻮﺍ হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫} আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী।{ মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১} এরকম আরো অসংখ্য বর্ণনা প্রমাণ করে সম্মলিত মুনাজাত এটি দুআ কবুলের আলামত। সেই সাথে উত্তম আমল। যা কিছুতেই বিদআত হতে পারে না। যে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল সাঃ নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথিবর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে? সুতরাং বুঝা গেল যে, সম্মিলিত মুনাজাত করাও রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে রাসূল সাঃ পরিস্কার ভাষায় উৎসাহ প্রদান করেছেন। ৩য় বিষয় আসলে পূর্বের দু’টি বিষয় পরিস্কার হবার পর আপনি নিজেই এর সমাধান বের করে নিতে পারেন। নামাযের পর দুআ রাসূল সাঃ নিজে করেছেন। আর সম্মিলিত দুআ কবুল হয় মর্মে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। তিনি নিজেও সম্মিলিতভাবে দুআ করেছেন। সুতরাং ফরজ নামাযের পর দুআ করলে সেটি বিদআত হবে কিভাবে? তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা- ১ ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরী মনে করা। ২ দুআকে নামাযের অংশ মনে করা। ৩ এ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না আকিদা রাখা। এ তিনটির কোন একটি পাওয়া গেলে উক্ত দুআ বিদআত হবে। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু যদি উপরোক্ত কোন কারণ পাওয়া না যায়। বরং যেহেতু রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর দুআ করেছেন, সেই সাথে সম্মিলিতভাবে দুআ করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন, সেই সওয়াব পাবার আশায় যদি ইমাম সাহেব সম্মিলিতভাবে দুআ করেন, তাহলে উক্ত সম্মিলিত দুআকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ বলে তাহলে সে হাদীসে নববী সম্পর্কে অজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে ইমামের সরবে দো‘আ পাঠ ও মুক্তাদীদের সশব্দে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথাটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম হ’তে এর পক্ষে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন দলীল নেই। বলা আবশ্যক যে, আজও মক্কা-মদ্বীনার দুই হারাম-এর মসজিদে উক্ত প্রথার কোন অস্তিত্ব নেই। প্রচলিত সম্মিলিত দো‘আর ক্ষতিকর দিক সমূহ :  (১) এটি সুন্নাত বিরোধী আমল। অতএব তা যত মিষ্ট ও সুন্দর মনে হৌক না কেন সূরায়ে কাহ্ফ-এর ১০৩-৪ নং আয়াতের মর্ম অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। (২) এর ফলে মুছল্লী স্বীয় ছালাতের চাইতে ছালাতের বাইরের বিষয় অর্থাৎ প্রচলিত ‘মুনাজাত’কেই বেশী গুরুত্ব দেয়। আর এজন্যেই বর্তমানে মানুষ ফরয ছালাতের চাইতে মুনাজাতকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে । (৩) এর মন্দ পরিণতিতে একজন মুছল্লী সারা জীবন ছালাত আদায় করেও কোন কিছুর অর্থ শিখে না। বরং ছালাত শেষে ইমামের মুনাজাতের মুখাপেক্ষী থাকে। (৪) ইমাম আরবী মুনাজাতে কী বললেন সে কিছুই বুঝতে পারে না। ওদিকে নিজেও কিছু বলতে পারে না। এর পূর্বে ছালাতের মধ্যে সে যে দো‘আগুলো পড়েছে, অর্থ না জানার কারণে সেখানেও সে অন্তর ঢেলে দিতে পারেনি। ফলে জীবনভর ঐ মুছল্লীর অবস্থা থাকে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’। (৫) মুছল্লীর মনের কথা ইমাম ছাহেবের অজানা থাকার ফলে মুছল্লীর কেবল ‘আমীন’ বলাই সার হয়। (৬) ইমাম ছাহেবের দীর্ঘক্ষণ ধরে আরবী-উর্দূ-বাংলায় বা অন্য ভাষায় করুণ সুরের মুনাজাতের মাধ্যমে শ্রোতা ও মুছল্লীদের মন জয় করা অন্যতম উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ফলে ‘রিয়া’ ও ‘শ্রুতি’-র কবীরা গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘রিয়া’-কে হাদীছে الشرك الأصغر বা ‘ছোট শিরক’ বলা হয়েছে। [204] যার ফলে ইমাম ছাহেবের সমস্ত নেকী বরবাদ হয়ে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা সৃষ্টি হ’তে পারে। ছালাতে হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ : (১) ‘ইস্তিসক্বা’ অর্থাৎ বৃষ্টি প্রার্থনার ছালাতে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু’হাত তুলে দো‘আ করবে। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ