আমরা সুন্নত নামাজে চার রাকাতে সুরা মিলাই অথচ ফরজ নামাজের 4 রাকাতের বেলায় দুই রাকাতে সুরা মিলাই আর দুই রাকাতে সুরা মিলাই না এটা কেন?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

চার রাকাত সুন্নাত নামাযের শেষের দুই রাকাতে সুরাহ ফাতিহার সাথে অন্য সুরাহ মিলিয়ে পড়া জরুরী।

ফরয নামায ব্যাতিত অন্যান্য সুন্নাত, নফল, বিতির নামাযে সব রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা মিলানো ওয়াজিব৷

হজরত আবু সাইদ খুদুরী (রাঃ) বলেন, আমাদের রাসুল (সাঃ) আদেশ করেছেন, আমরা যেনো নামাযের মধ্যে সুরা ফাতেহা এবং কোরআনের যেই স্থান হতে সহজ হয় কিছু তেলাওয়াত করি। (আবু দাউদ ১খন্ড,পৃষ্ঠা ১১৮)।

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে, নামায সুরা ফাতেহা এবং কিছু অতিরিক্ত অংশ ছাড়া হয় না। অর্থাৎ সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরার কিছু অংশ তেলাওয়াত করতে হবে। (মুসলিম শরিফ ১খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৬৯)।

নামায আলহামদু (সুরা ফাতেহা) এবং অন্য সুরা মিলানো ছাড়া হবে না, নামায ফরজ হোক বা অন্য নামায। (তিরমিজি শরিফ,পৃষ্ঠা: ৬১)।

সুরা ফাতেহা এবং দুইটি লম্বা আয়াত ছাড়া নামায হয় না৷ (কানজুল উম্মাল ৭ খন্ড,পৃষ্ঠা: ৩১৪)।

তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে ফরয হোক বা নফল হোক, সুরা মিলানো মুস্তাহাব। এটি ওয়াজিব নয়।

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আতা (রহঃ) হতে বর্ণিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক সলাতেই কিরাআত পাঠ করতে হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সলাতে আমাদের শুনিয়ে কিরাআত পাঠ করেছেন, আমরাও তাতে তোমাদের শুনিয়ে কিরাআত পাঠ করি। তিনি যে সলাতে আওয়াজ না করে চুপিসারে কিরাআত পাঠ করেছেন, আমরাও তাতে তোমাদের না শুনিয়ে নিম্নস্বরে কিরাআত পাঠ করি। যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহাহ পাঠ করল তা তার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি আরো সূরাহ পাঠ করল, এটা তার জন্য বেশি ভাল।

(সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), অধ্যায়ঃ ৪। সালাত নামায, হাদিস নম্বরঃ ৭৭০ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৭৯)।

সুতরাং ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য যেকোনো সুরা মিলানো ওয়াজিব। আর ফরজ ব্যাতিত অন্যান্য নামাযে প্রত্যেক রাকাতেই সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা মিলানো ওয়াজিব।

যদি কেহ ভূলক্রমে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়,তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। আর কেহ যদি ইচ্ছাপূর্বক ভাবে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়, তাহলে তার নামাযই হবেনা।

চার রাকাত ফরজ নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য সুরা পরতে হবে না।

ফরজ নামাজের ৩য়, ৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য সুরা মেলানো সুন্নত পরিপন্থী। সুন্নাত হলো, শেষের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়া।

আবু কতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জোহর এবং আসরের নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও আরেকটি সুরা পড়তেন। আর শেষ দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন।

(সহীহ বুখারি, হাদিস নং: ৭৫৯; মুসলিম, হাদিস নং: ৪৫১; তবে মুসলিম শরিফের ৪৫২ নং হাদিসে রাসুল (সা.) থেকে ভিন্ন আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়।)

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) জোহরের প্রথম দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে ৩০ আয়াত করে পড়তেন। আর শেষের দুই রাকাতে ১৫ আয়াত করে পড়তেন। আর আসরের প্রথম দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে ১৫ আয়াত করে এবং শেষের দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে তার অর্ধেক পড়তেন।

এই হাদিসে ভিন্ন আমলের প্রমাণ পাওয়া গেলেও চার মাজহাবের ওলামায়ে কেরাম আবু কতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসের ওপর আমল করেছেন কয়েকটি কারণেঃ-

এক. মুসলিম শরিফে বর্ণিত আবু সাঈদ খুদরীর হাদিসের তুলনায় আবু কতাদার হাদিসটি বেশি বিশুদ্ধ। আবু কাতাদার হাদিসটি বুখারি ও মুসলিম উভয়েই বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে আবু সাঈদ খুদরীর হাদিসটি শুধু ইমাম মুসলিম (রহঃ) বর্ণনা করেছেন।

দুই. আবু কতাদার হাদিসটি বহু সাহাবা-তাবেয়িদের আমলের সঙ্গে মিলে। যেমন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), আলী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাউসদ (রাঃ), জাবের (রাঃ), আবু দারদা (রাঃ) ও হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত হয়েছে যে, তারা আবু কতাদার হাদিসের ভাষ্যমতে ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য সুরাও মিলাতেন, আর শেষের দুই রাকাতে শুধু ফাতেহা পড়তেন।

ইবনে সিরিন (রহঃ) এর বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরামের মাঝে বিষয়টির ওপর ইজমা হয়ে গেছে যে, ফরজ নামাজের শেষের দুই রাকাতে শুধু ফাতেহা পড়বে। অন্য সুরা মিলাবে না।

ইবনে সিরিন (রহঃ) বলেন, আমি সাহাবাদের সম্পর্কে জানি না যে, তারা ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা আর শেষ দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়ার ব্যাপারে কখনো মতবিরোধ করেছেন। (আল মুগনি: ২/২৮১)।

হজরত উমর (রাঃ) বিখ্যাত তাবেয়ি শুরাইহ ইবনে হানি (রহঃ) এর কাছে লিখেন যে, প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মিলাও আর পরের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়। (আল-মুজামুল আওয়াসত: ৩/২৬৮)।

অন্যদিকে মুজাহিদ (রহঃ), ইবনে সিরিন ও হাসান বসরি (রহঃ) প্রমুখ তাবেয়িগণের আমলও আবু কতাদা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসের সঙ্গে মিলে। এ বিষয়ে মু্সান্নাফে ইবনে আবি শাইবায় দুইটি বর্ণনা রয়েছে।

আবু কতাদা তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সাঃ) ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা পড়তেন। আর শেষের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩/২৬৫; হাদিস নং: ৩৭৬২)।

ইবনে সিরিন (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জোহর ও আসরের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও কোরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় পড়তেন। আর পরের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৩/২৬১, হাদিস নং: ৩৭৪৩)।

অতএব ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে কেবল সুরা ফাতেহাই পড়বে। ইচ্ছাকৃত অন্য সুরা পড়বে না। তবে মিলিয়ে ফেললে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে না। (আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯)।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ