তারাবীহ নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। তারাবীহ নামায আদায়ে নারীদের আলাদা কোন নিয়ম নেই। পুরুষের মত-ই তারা মসজিদে না গিয়ে ঘরেই তারাবীহ নামায আদায় করে নেওয়া উত্তম।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিও না। অবশ্য তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম।
ইশার নামাযের ফরয চার রাকাত এবং দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করে বিতর নামাযের আগে দুই দুই রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত নামায আদায় করতে হবে।
তারাবীহ নামাযের নিয়ম বা যেভাবে আদায় করতে হবেঃ
আবারো বলি তারাবীহ নামায দুই দুই রাকাত করে পড়তে হয়। এক সালামে দুই রাকাত এভাবে ১০ সালামে ২০ রাকারত নামায পড়া সুন্নত।
প্রথমেই নিয়তঃ তারাবীহ নামাযের নিয়ত অন্যান্য নামাযের ন্যায়। অন্তরে শুধু সুন্নতে মোয়াক্কাদা তারাবীর নামাযের নিয়ত করে তাকবীর বলবে।
তাকবীরে তাহরিমা বলার পর বাঁ হাতের ওপর ডান হাত রাখুন। এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে সানা বলুন।
উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। (নাসায়ি, হাদিস : ৮৮৯)।
এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম। এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন। (তাহাবি : ১/৩৪৭)।
এবার সুরায়ে ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে অনুচ্চৈঃস্বরে আমিন বলুন।
আমিন বলার পর আবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন। সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়ুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৯৫)।
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯)।
রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)।
রুকুতে কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)।
এবার রুকু থেকে উঠে সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে মাথা ওঠান। আবার অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু রাব্বানা লাকাল হামদ বলুন।
এরপর তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৭)।
সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)।
এরপর সিজদা থেকে ওঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাতকে রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন। এরপর তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়ুন।
অতঃপর সরাসরি তাকবীর বলে দাঁড়িয়ে যান। এ পর্যন্ত প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলো।
এখন দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলো। এতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না। তবে আগের মতো সুরা ফাতিহা ও সঙ্গে অন্য একটি সুরা পড়ে রুকু-সিজদা করবেন।
দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়বেন। এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাবেন।
এভাবে আবার দুই রাকাত সম্পন্ন করুন। এভাবে চার রাকাত সম্পন্ন করার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার নামায শুরু করুন।
মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ ও অন্যান্য সব নামাজ ঘরে একাকি পড়াই শরিয়তের বিধান। এর বিপরীত করা জায়েয নয়। -আল বাহরুর রায়েক: ১/৬২৭, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৬
বিশুদ্ধ হাদিসে রয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মহিলাদেরকে মসিজেদ না এসে ঘরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিলেন তখন একজন মহিলা সাহাবি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মন চায় আপনার পিছনে নামাজ পড়তে, আমাকে অনুমতি দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তদুত্তরে যা বললেন তার মর্ম হলো, আমি তোমার আগ্রহের মূল্যায়ন করি, তা সত্ত্বেও মসজিদে নববিতে এসে পঞ্চাশ হাজার রাকাত সওয়াব পাওয়া এবং আমার পিছনে নামাজ পড়া থেকে তোমার ঘরে একা নামাজ পড়াই উত্তম।
তাই রাসূল (সা.)-এর অবর্তমানে তার প্রিয় সাহাবিগণ বিশেষ করে হজরত ওমর ও হজরত আয়েশা (রা.) মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। যার অনুসরণে দেড় হাজার বছর পর্যন্ত কোনো আলেম মহিলাদেরকে মসজিদে এসে নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করেননি এবং এর জন্য কোনো ব্যবস্থাও করেননি। -সহিহ বোখারি, হাদিস: ৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭০৯০
তারাবি নামাজের নিয়ত অন্যান্য নামাজের ন্যায়। অন্তরে শুধু সুন্নতে মোয়াক্কাদা তারাবির নামাজের নিয়ত করে তাকবির বলবে।
তারাবির নামাজের শুরুতে একবারে বিশ রাকাতের নিয়ত করার দ্বারা নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। তবে প্রত্যেক দুই রাকাতের শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ত করা উত্তম। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৬৫
আলহামদুলিল্লাহ।
তারাবীর নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। নারীদের জন্যে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) ঘরে পড়া উত্তম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিও না। তবে, তাদের জন্য ঘরই উত্তম।”[হাদিসটি আবু দাউদ তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে, ‘নারীদের মসজিদে যাওয়া’ শীর্ষক পরিচ্ছেদ ও ‘এ বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে সংকলন করেছেন। হাদিসটি ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৭৪৫৮) সংকলিত হয়েছে]
নারীর নামাযের স্থান যতবেশী নির্জনে হবে, যতবেশি ব্যক্তিগত হবে সেটাই উত্তম। যেহেতু নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহিলাদের জন্য শোয়ার ঘরে নামায আদায় করা বৈঠকখানায় নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। তাদের জন্য গোপন প্রকোষ্ঠে নামায করা শোয়ার ঘরে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম।”[আবু দাউদ তাঁর ‘সুনান’ নামক গ্রন্থের, ‘কিতাবুস সালাত’ অধ্যায়ের ‘মহিলাদের মসজিদে যাওয়া’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে হাদিসটি সংকলন করেছেন। হাদিসটি ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৩৮৩৩) রয়েছে]
আবু হুমাইদ আল-সায়েদি এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ থেকে বর্ণিত তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে নামায আদায় করতে পছন্দ করি। তখন তিনি বললেন: আমি জেনেছি আপনি আমার সাথে নামায পড়া পছন্দ করেন। কিন্তু, আপনি আপনার শোয়ার ঘরে নামায আদায় করা বৈঠক ঘরে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আপনি আপনার বৈঠক ঘরে নামায আদায় করা বাড়ীর উঠোনে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আপনি আপনার বাড়ীর উঠোনে নামায আদায় করা গোত্রীয় মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আপনি আপনার গোত্রীয় মসজিদে নামায আদায় করা আমার মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন: ফলে তিনি তার ঘরের একেবারে ভিতরে অন্ধকার স্থানে তার জন্য নামাযের জায়গা বানানোর নির্দেশ দিলেন। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সে জায়গায় নামায আদায় করেছেন।”[মুসনাদে আহমাদ, হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য]
তবে উল্লেখিত ফযিলত নারীদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। যেমনটি আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) কর্তৃক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: যদি নারীরা তোমাদের কাছে মসজিদে যেতে অনুমতি চায় তাহলে তোমরা তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিও না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন বিলাল বিন আব্দুল্লাহ্ (বিন উমর) বলল: আল্লাহ্র শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। বর্ণনাকারী বলেন: তখন আব্দুল্লাহ্ তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে তীব্র গালমন্দ করলেন; আমি তাঁর কাছ থেকে এমন কথা আর কখনও শুনিনি। এবং তিনি বললেন: আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস জানাচ্ছি। আর তুমি বল: আল্লাহ্র শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব।” [সহিহ মুসলিম (৬৬৭)]
কিন্তু, কোন নারী মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্ত রয়েছে:
১। পরিপূর্ণ হিজাব থাকতে হবে।
২। সুগন্ধি লাগিয়ে যাবে না।
৩। স্বামীর অনুমতি লাগবে।
এবং এ বের হওয়ার ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি হারাম যেন সংঘটিত না হয়; যেমন একাকী ড্রাইভারের সাথে বের হওয়া।
যদি কোন নারী উল্লেখিত শর্তগুলোর কোনটি ভঙ্গ করে সেক্ষেত্রে নারীর স্বামী কিংবা অভিভাবক তাকে মসজিদে যেতে বাধা দিতে পারবেন; বরং বাধা দেওয়া আবশ্যক হবে।
আমাদের শাইখ আব্দুল আযিযকে জনৈক নারী তারাবীর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যে, নারীর জন্য কি তারাবীর নামায মসজিদে গিয়ে পড়া উত্তম? তিনি না-সূচক জবাব দেন। কারণ মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সংক্রান্ত হাদিসগুলো সাধারণ; যা তারাবী নামাযসহ অন্য সকল নামাযকে শামিল করবে। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
আমরা আল্লাহ্র কাছে আমাদের জন্য ও সকল মুসলিম ভাইদের জন্য ইখলাস ও কবুলিয়তের প্রার্থনা করছি। তিনি যেন, আমাদের আমলগুলো তাঁর পছন্দ ও সন্তুষ্টি মোতাবেক সম্পন্ন করান। আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
আবু হুমাইদ আল-সায়েদি এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ থেকে বর্ণিত তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে নামায আদায় করতে পছন্দ করি। তখন তিনি বললেন: আমি জেনেছি আপনি আমার সাথে নামায পড়া পছন্দ করেন। কিন্তু, আপনি আপনার শোয়ার ঘরে নামায আদায় করা বৈঠক ঘরে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আপনি আপনার বৈঠক ঘরে নামায আদায় করা বাড়ীর উঠোনে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আপনি আপনার বাড়ীর উঠোনে নামায আদায় করা গোত্রীয় মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আপনি আপনার গোত্রীয় মসজিদে নামায আদায় করা আমার মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন: ফলে তিনি তার ঘরের একেবারে ভিতরে অন্ধকার স্থানে তার জন্য নামাযের জায়গা বানানোর নির্দেশ দিলেন। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সে জায়গায় নামায আদায় করেছেন।”[মুসনাদে আহমাদ, হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য]
তবে উল্লেখিত ফযিলত নারীদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। যেমনটি আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) কর্তৃক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: যদি নারীরা তোমাদের কাছে মসজিদে যেতে অনুমতি চায় তাহলে তোমরা তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিও না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন বিলাল বিন আব্দুল্লাহ্ (বিন উমর) বলল: আল্লাহ্র শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। বর্ণনাকারী বলেন: তখন আব্দুল্লাহ্ তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে তীব্র গালমন্দ করলেন; আমি তাঁর কাছ থেকে এমন কথা আর কখনও শুনিনি। এবং তিনি বললেন: আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস জানাচ্ছি। আর তুমি বল: আল্লাহ্র শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব।” [সহিহ মুসলিম (৬৬৭)]
কিন্তু, কোন নারী মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্ত রয়েছে:
১। পরিপূর্ণ হিজাব থাকতে হবে।
২। সুগন্ধি লাগিয়ে যাবে না।
৩। স্বামীর অনুমতি লাগবে।
এবং এ বের হওয়ার ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি হারাম যেন সংঘটিত না হয়; যেমন একাকী ড্রাইভারের সাথে বের হওয়া।
যদি কোন নারী উল্লেখিত শর্তগুলোর কোনটি ভঙ্গ করে সেক্ষেত্রে নারীর স্বামী কিংবা অভিভাবক তাকে মসজিদে যেতে বাধা দিতে পারবেন; বরং বাধা দেওয়া আবশ্যক হবে।
আমাদের শাইখ আব্দুল আযিযকে জনৈক নারী তারাবীর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যে, নারীর জন্য কি তারাবীর নামায মসজিদে গিয়ে পড়া উত্তম? তিনি না-সূচক জবাব দেন। কারণ মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সংক্রান্ত হাদিসগুলো সাধারণ; যা তারাবী নামাযসহ অন্য সকল নামাযকে শামিল করবে। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
আমরা আল্লাহ্র কাছে আমাদের জন্য ও সকল মুসলিম ভাইদের জন্য ইখলাস ও কবুলিয়তের প্রার্থনা করছি। তিনি যেন, আমাদের আমলগুলো তাঁর পছন্দ ও সন্তুষ্টি মোতাবেক সম্পন্ন করান। আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
মহিলাদের তারাবিহের নামায পুরুষের তারাবিহের নামাযের মতোই। তবে তারা মসজিদে না গিয়ে নিজ ঘরেই নামায আদায় করবে। রসূল (স:) এর হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, মহিলাদের জন্য ঘরেই নামায আদায় করা উত্তম মসজিদের থেকে। খোদ হারাম শরিফের দরসে বলা হয়েছে, এখানে নামাজ পড়লে ১ লাখ গুণ সওয়াব বেশি হবে, যা হাদিসে বলা হয়েছে। কিন্তু মহিলারা যদি এখানে নামাজ না পড়ে ঘরে পড়েন তবে তাদের জন্য সেখানেই এর চেয়ে বেশি সওয়াব লেখা হবে। কিন্তু মহিলারা যদি মসজিদে নামায আদায় করতে আসে তাহলে তাদের বাধা দেওয়া যাবে না। তবে তাদের আসতে হবে পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে এবং মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা কক্ষ থাকতে হবে।
তারাবিহ নামাজ আদায়ের জন্য পুরুষের
নামাজের সাথে মুহিলার নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই মুহিলাদের আলাদা কোন নিয়ম নেই,,,,তবে সাধারণ নামাজের মাঝে নারী পুরুষের যেমন পার্থক্য সেটাই চলমান রয়েছে ,,,,, এবং নারীরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে চায় তাহলে তাদের মসজিদে আলাদা কক্ষে জায়গা দিতে হবে তবে হ্যাঁ মসজিদে যাওয়া বাধা দেওয়া যাবে না
Men and women have equal rules in Tarabi prayers
বরকতময় মাহে রমজানের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তারাবির নামাজ। তারাবি হল মাহে রমজানের বিশেষ আকর্ষণ। রাসূল (সা.) তারাবির বিশেষত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সঙ্গে সওয়াবের আশায় দিনে রোজা রাখবে আর রাতে সালাত আদায় করবে আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। (নাসায়ী)।
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ মসজিদে খতম তারাবি পড়ানো হয়। এসব মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতিও লক্ষণীয়। কিছু কিছু মসজিদে পুরুষদের পাশাপাশি হাজির হয় নারীরাও। যদিও নারীরা নামাজ পড়তে পারে এমন মসজিদের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র; তবুও তারাবির নামাজে কোরআন খতম এবং জামাতের সঙ্গে আদায়ের ব্যাপারে পিছিয়ে নেই নারীরা। তারা নিজ উদ্যোগেই বাসা বাড়ির ছাদে কখনও পারিবারিকভাবে কখনও এলাকাভিত্তিক তারাবির জামাতের আয়োজন করে থাকে। এসব জামাত দিনদিন নারী মহলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তারাবি নিয়ে নারীদের ভাবনা কী? পাড়া-মহল্লার জামাতগুলো কীভাবে আরও উন্নত করা যায়? তারাবির জামাতে নারীদের সমাগম আরও বাড়ানো যায় কীভাবে? শুধু রাজধানীই নয় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নারীদের তারাবি কেমন হবে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে কোরআনপ্রেমী নারীদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন তাদের তারাবির কথা।যাত্রাবাড়ী নিবাসী সায়মা চৌধুরী বলেন, গত দুবছর আমাদের বাসার ছাদে মহল্লার মহিলাদের নিয়ে তারাবির জামাত করছি। প্রথমদিকে উপস্থিতি কম হলেও পরে তা স্থান সংকুলান পর্যায়ে পৌঁছে। জেনে খুশি হবেন তারাবি জামাতে আদায়ের ব্যাপারে নারীদের আগ্রহ এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মাত্র তিন বছরের মাথায় আমাদের মহল্লায় মহিলাদের ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামীতে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।খিলগাঁও শাহী মসজিদে নিয়মিত তারাবি পড়েন শাহিনুর আক্তার। তিনি বলেন, অনেক মহিলা ইফতারির পর অলসতা করে আর তারাবি পড়েন না। পবিত্র রমজান মাসেও তারা টিভি সিরিয়াল দেখে অথবা মার্কেটে ঘুরে ইবাদতের মূল্যবান সময় নষ্ট করেন। কিন্তু এখানের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা ইফতার এবং মাগরিবের পরপরই তারাবির প্রস্তুতি নিতে থাকি। আজানের সঙ্গে সঙ্গে দলে দলে মসজিদে সমবেত হই। এশা, তারাবি এবং বিতর পড়ে বাসায় ফিরি। মসজিদে তারাবি পড়ার কারণে আমাদের ঘরের কাজে কোনো ব্যাঘাত হয় না। তবে কিছু বোনের স্বামী তাদের মসজিদে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যা সত্যিই দুঃখজনক। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে যেতে বাধা দিও না। (বুখারি)। অন্যত্র তিনি (সা.) বলেছেন, নারীরা যদি তোমার কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় আর তখন যদি রাতও হয় তবুও তাদের অনুমতি দাও। (বুখারি)।পলাশীর বুয়েট কলোনিতে থাকেন গৃহিণী হাবিবা আক্তার আকলিমা। তিনি বলেন, উন্নত মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ মসজিদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সে সুযোগ নেই বললেই চলে। অনেক সময় আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু স্থানের অভাবে নামাজ কাজা করার মতো কবিরা গুনাহ করে ফেলি। বিশেষ করে যখন প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে থাকি তখনই এমনটি ঘটে। জানি না এর জন্য আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব। মাহে রমজানের তারাবি জামাতে পড়ার এবং কোরআনের সুমধুর তেলাওয়াত শোনার জন্য মন কাঁদে প্রতিনিয়তই। কিন্তু কে শুনবে আমাদের হৃদয়ের কান্না। রাসূল (সা.) তার পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করতেন এবং একসঙ্গে রমজানের রাতের নামাজ আদায় করতেন। (আবু দাউদ)। আমরা নারীরা ইবাদতের মৌসুমে এ সুযোগ থেকে কেন বঞ্চিত হব?জুরাইন কবরস্থানের পাশে বাবু ভিলায় প্রতি রমজানে নারীদের তারাবির জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন নার্গিস আক্তার। তিনি বলেন, ফেতনা সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় অনেকেই নারীদের মসজিদের যাওয়ার অনুমতি দেয় না। আমার প্রশ্ন হল, মক্কা-মদিনাসহ বিশ্বের অনেক মসজিদেই মহিলাদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের দেশেও স্বল্প সংখ্যক মসজিদে এ সুবিধা আছে। আজ পর্যন্ত মহিলারা মসজিদে যাওয়ার কারণে ফেতনার সৃষ্টি হয়েছে এমন একটি দৃষ্টান্ত কি কেউ দেখাতে পারবেন? মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরলেন ৪ নারী অথবা মসজিদে ইভটিজিংয়ের শিকার হলেন ৫ তরুণী এমন কোন নিউজ কি কখনও কারও চোখে পড়েছে? তাহলে কথিত ফেতনা বলে আমরা কী বুঝাচ্ছি? কেন আমরা নারীদের মসজিদমুখী না করে মার্কেটমুখী করে দিচ্ছি। অনেক পুরুষকে দেখেছি তারা নিজেরা জামাতে তারাবি আদায় করে ঠিকই কিন্তু তাদের স্ত্রীরা মার্কেটে ঘুরে সময় পার করছে। যারা ফেতনা ফেতনা করে মুখে ফেনা তুলেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ফেতনার আশংকা কি শুধু মসজিদেই থাকে? মার্কেট, হাট-বাজারসহ অন্যসব জায়গা কি ফেতনামুক্ত?জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে নিয়মিত তারাবি পড়ছেন রোকসানা আক্তার হেলেন। তিনি পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, ইসলাম সাম্যের ধর্ম। কিন্তু নারীরা আজ ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার। বায়তুল মোকাররম আমাদের জাতীয় মসজিদ। এটি আমাদের দেশের সব মসজিদের জন্য মডেল। এখানে যেমন মহিলারা স্বাচ্ছন্দ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং তারাবি আদায় করতে পারছেন, দেশের প্রত্যেকটি মসজিদেই এরকম ব্যবস্থা থাকা দরকার। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও জামাতে তারাবিসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন।