শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Yakub Ali

Call

তারাবির নামাজ বিশ রাকাত, আপনি 8 রাকাত

পড়লে 8 রাকাতের সওয়াব পাবেন।

12 রাকাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন।

প্রতিটি মুসলমানের উচিত 20 রাকাত পড়া

রাসুল (সঃ) 20 রাকাত তারাবির নামাজ

পড়তেন। তাই 8 রাকাত পড়লে গুনাহ হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

সকলের অনগতির উদ্দেশ্যে তারাবীর নামাজ নিয়ে নিচের তথ্যটি:- তারাবিহ সালাত নিয়ে দুটি মত প্রচলিত আছে।হানাফি,হাম্বলি,মালেকি,শাফেই মাজহাব মতে তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত সুন্নাহা।আহলে হাদিস মাজহাব অনুসারে তারাবি নামাজ হচ্ছে ৮ রাকাত।আমি এখানে উভই পক্ষের দেয়া দলিলগুলি বিশ্লেষণ করব।তাহলে এমনিতেই আপনি বুঝতে পারবেন তারাবি নামাজ আসলে কয় রাকাত। ৮ রাকাত তারাবীর পক্ষে দলিল বিশ্লেষণঃ 1. হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল *রামাযান ও রামাযান ছাড়া* ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪) জবাবঃ (i) খেয়াল করুন হাদিসের শব্দ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ নবীজী রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা।এর অর্থ হচ্ছে এমনিতে রাসুল (সঃ) ১১ রাকাত (৮ রাকাত তাহাজ্জুদ +বিতর ৩=১১) পড়তেন।রমজান ছাড়া যে রাসুল (সঃ) যে নামাজ পড়তেন সেটা তো তারাবীহ হওয়ার সুযোগ নেই।তারাবীহ কেবল রমজানেই পড়া হয়।তাই প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা স্বাভাবিক ছিল। (ii) মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী রহঃ তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫) ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “ ﻋﺪﺩ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ ﺍﻟﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﻬﺎ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ” (রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি। (iii) তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য: তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম হয় কুরআনের সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার দিয়ে,আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন। আর তারাবীহ এর হুকুম হয় আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর এই বাণীর মাধ্যমে-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮) তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয় তারাবীহতে জায়েজ। তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর। মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন। মন্তব্যঃ আহলে হাদিসদের দাবীকৃত 1 নং হাদিসটি তারাবীহ সংক্রান্ত নয় তাহাজ্জুত সংংক্রান্ত।তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পৃথক দুটি ইবাদত।সুতরাং এই হাদিস দিয়ে প্রমাণিত হয় না তারবাই নামাজ ৮ রাকাত। 2.হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।(কিয়ামুল লাইল-৯০) জবাবঃ (i)হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে। ইমাম বুখারী রহঃ বলেন-এতে আপত্তি আছে। ইমাম নাসায়ী রহঃ বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়। (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০) আল্লামা জাহাবী বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল (মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১) আবু দাউদ রহঃ বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়। (ii)হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রাঃ থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। দেখুন বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩ এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার আশংকার কথা বলা হয়েছে অথচ অন্য সহীহ হাদিসে তারাবীহ ফরয হয়ে যাবার আশংকা উল্লেখে করা হয়েছে। (মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২-৪৩) মন্তব্যঃ ইসলামের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের মতে হাদিসটি অগ্রহনযোগ্য। 3.মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজীদ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথে ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(মুয়াত্তা মালিক-৯৮) জবাবঃ (i) হাদিসটির শব্দে পরস্পর বিরোধীতা রয়েছে। যেমন এই হাদিসের সূত্রের একজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তার সাগরীদ ৫ জন। তার মধ্যে ৩জন ১১ রাকাত আর ১জন ১৩ রাকাত ও ১জন ২১ রাকাতের বর্ণনা নকল করেন। এছাড়া যারা ১১রাকাতের কথা বর্ণনা তাদের বর্ণনার শব্দেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। যথা- ক. ইমাম মালিক এনেছেন ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথ ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খ. হযরত ইয়াহইয়া আল কাত্তান বর্ণনা করেন-ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব ও তামিমে দারী এর কাছে লোকদের একত্র করেন আর তারা দু’জন ১১ রাকাত নামায পড়াতেন। গ. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ রহঃ এর বর্ণনায় এসেছে-আমরা হযরত ওমর রাঃ এর আমলে ১১ রাকাত নামায পড়তাম। বর্ণনাকারীর বর্ণনার ঠিক নেই, সাথে সাথে যারা এক কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যটিও পরস্পর বিরোধী এমন বর্ণনা পরিত্যাজ্য। (ইলাউস সুনান-৭/৪৮) (ii) এই বর্ণনাটি হযরত ওমর রাঃ থেকে আরেকটি সহীহ ও শক্তিশালী বর্ণনার বিপরিত। হযরত ওমর রাঃ থেকে ২০ রাকাত তারাবীহের কথা ইমাম মালিক রাহঃ তার মুয়াত্তার ৪০ নং পৃষ্ঠায় ও হাফেজ ইবনে হাজার ফাতহুল বারীর ৪ নং খন্ডের ২১৯ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন।যদি হযরত ওমর রাঃ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি সহীহ হত তাহলে পরবর্তীতে হযরত উসমান রাঃ ও আলী রাঃ থেকে এরকম বর্ণনা ও আমল প্রমাণিত হত, অথচ তাদের থেকে এরকম বর্ণনা প্রমাণিত নয়। মন্তব্যঃ পরস্পর বিদ্বেষী মত থাকায় ইমাম মালেক নিজেই হাদিসটি আমল করতেন না ২০ রাকাত তারাবীর পক্ষে দলিল সুমহঃ 1.হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবিহ ও বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৩৯৪, ৭৭৭৪)। (i) মুহাদ্দিসে কেরাম হাদিসটিকে সনদের দিক থেকে দুর্বল বলেছেন 2.রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজানুল মোবারকের ২০ রাকাত নামায পড়ার পর বেতের পড়েন। (দ্রঃ মাতালিবুল আলীয়া খন্ড ১ পৃষ্টা ১৪৬ হাদিস নং – ৫৩৪) (i) মুহাদ্দিসে কেরাম হাদিসটিকে সনদের দিক থেকে দুর্বল বলেছেন 3.সাঈব বিন য়্যাযিদ বলছেন, আমরা সাহাবীরা ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়তে অভ্যস্ত হয়েছিলাম এবং খলিফা হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাব-এর সময় থেকে সর্ব সম্মতভাবেই ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (মিরক্কাত আল মাফাতিহ-আনওয়ারুল হাদীস গ্রন্থের ভলিয়ূম ২ এর পৃষ্টা ১৭৫ এ বর্ণিত রয়েছে) তারাবিহ নামাজ আসলে কয় রাকাত? উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম ৮ রাকাত ও ২০ রাকাত তারবীহ নামাজের উভয় পক্ষে যে দলিলগুলি রয়েছে তা দুর্বল (জইফ)।এখন আমাদের কি করনীয়? জইফা মানে বাতিল বা পরিত্যাজ্য নয়।উসুলে হাদিসের নিয়ম হচ্ছে যে জইফ হাদিস সাহাবীদের আমলের সাথে মিলবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা সে সময় আমার সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা । (দেখুন: আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুস্ সুন্নাহ, তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুল ইল্ম। ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীছটি হাসান সহীহ। মুসনাদে আহমাদ, (৪/১২৬), মাজমুওয়ায়ে ফাতাওয়া (১০/৩৫৪।) উপরের হাদিস মতে আমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দিলে এবং তা সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর জীবনীতে না পাওয়া গেলে খুলাফায়ে রাশেদা অর্থাৎ ৪ খলিফাকে অনুসরন করতে বলা হয়েছে।চলুন দেখা যাক খুলাফেয়া রাশেদা কয় রাকাত তারবীহ আদায় করতেন হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে তারাবিহঃ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় তারাবিহ যেভাবে পড়া হতো প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগেও সেভাবেই পড়া হতো। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করে এতে কোনো পরিবর্তন বা সবাইকে এক ইমামের পেছনে জামাতবদ্ধ করার প্রয়োজন মনে করেননি। হজরত উমর (রা.)-এর যুগে তারাবিহঃ সাহাবি হজরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.) বর্ণনা করেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ) হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর যুগে ২০ রাকাত পড়তেন। তিনি আরো বলেন, তারা নামাজে ১০০ আয়াত বিশিষ্ট সুরা পড়তেন এবং হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ সময় নামাজের কারণে তাঁদের লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতে হতো (আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি ২/৪৯৬ (সনদ সহিহ)। হজরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমরা উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর যুগে ২০ রাকাত এবং বিতর পড়তাম। (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, বাইহাকি ২/৩০৫ (সনদ সহিহ) হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে তারাবিঃ তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর যুগেও তারাবিহর নামাজ এশার জামাতের পর ২০ রাকাত জামাতবদ্ধভাবে পড়া হতো। হজরত সায়েব (রা.)-এর বর্ণনায় হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালের অবস্থা বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে উসমান (রা.)-এর যুগের পরিস্থিতিও প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ আছে, যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। হজরত আলী (রা.)-এর যুগে তারাবিহঃ ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর যুগেও তারাবিহর নামাজ ২০ রাকাত আদায় করা হতো। তিনি ইমামদের ২০ রাকাত পড়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তাবেয়ী আবু আবদুর রহমান আস-সুলামী আলী (রা.)-এর ব্যাপারে বলেন, হজরত আলী (রা.) রমজান মাসে কারীগণকে ডাকলেন এবং আদেশ দিলেন তাঁরা যেন লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়ান। আর বিতর পড়াতেন আলী (রা.) নিজেই। (আস-সুনানুল কুবরা বাইহাকি ২/৪৯৬/৪৬২০ (বর্ণনাটি হাসান, গ্রহণযোগ্য) ইজমায়ে উম্মতের আলোকে তারাবিহঃ ইমাম তিরমিযীঃ আহলে ইলম (জ্ঞানীলোক) রমযানের রাতের সালাত (এর রাকাআত সংখ্যা) নিয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ বলেছেন,বিতর সহ ৪১ রাকাআত পড়তে হবে এবং এটি হল মদীনাবাসীর ভাষ্য এবং এরকম আমলই ছিলমদীনাতে। অধিকাংশ আহলে ইলম এর মতে এটি ২০ রাকাআত যা হযরত উমর (রদ্বিঃ), হযরত আলী(রদ্বিঃ) এবং নবী (সঃ) এর অন্যান্য সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে।'আল জামি' কিতাব(৩/১৬৯-১৭০, নং-৮০৬) ইমাম আবু হানিফাঃইমাম আবু হানিফার মতে তারাবী বিশ রাকাত (তুহফাতুলমুলুক (১/৮০, দারুল বাশাইর আল ইসলামিয়া, ১ম সম্পাদনা, ১৪১৭ হিঃ) ইমাম মালিকঃ কিতাবে ইমাম মালিকের মাযহাবের রায়লিখা হয়েছে এভাবেঃ " ইবনে আল ক্বাসিম বলেনঃ রাকাআত (তারাবীহ) হল বিতর সহ ৩৯,৩৬ রাকাআত (তারাবীহ) এবং ৩ রাকাআত বিতর। " ইমাম শাফীঃ ইমাম শাফী তাঁর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ 'কিতাবুলউম্ম' এ লিখেনঃ " তারাবীহ এর নামায ২০ রাকা'আত পড়া আমার কাছে পছন্দনীয়। কেননা,উমর (রাঃ) থেকে এমনই বর্ণিত আছে। আর মক্কাবাসীগণও তারাবীহ এর নামায এভাবেই আদায় করেন এবং তিন রাকা'আত বিতর পড়েন। " ('কিতাবুল উম্ম' ১/১৪২, দারুল মারিফা সম্পাদনা,বৈরুত, ২য় সম্পাদনা, ১৩৯৩ হিঃ) ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বলঃ ইমামআহমেদ ইবনে হাম্বলের রায় হচ্ছে তারাবীহ ২০ রাকাআত।হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ 'রওয আল রিয়ায' এ উল্লেখ আছে যে তারাবীহ নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটি ২০ রাকাআত। ইমাম ইবনে তাইমিয়াঃ এটা অবশ্যই প্রমাণিত যে,উবাই ইবনে কা'ব(রদ্বিঃ)রমজানের তারাবীতে লোকদের নিয়ে ২০ রাকা'আত পড়তেন এবং তিন রাকা'আত বিতর পড়তেন। তাই অসংখ্য আলেম এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে,এটিই সুন্নত। কেননা উবাই ইবনে কা'ব(রদ্বিঃ)মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের মধ্যে ২০ রাকা'আত পড়িয়েছেন। আর কোন একজনও তাতে আপত্তি করেননি। " (মাজমূউলফাতাওয়া কিতাবে ২৩/১১২-১১৩) পবিত্র কাবায় তারাবিহঃ রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবা এবং তাবেঈনের যুগ থেকে পবিত্র মক্কা শরিফে ২০ রাকাত তারাবিহ আজ পর্যন্ত নিয়মিত চলে আসছে। কোনো যুগেই এর কম বা বেশি পড়া হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় নেই। মদিনা শরিফে তারাবিহঃ প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হজরত আব্দুল আযীয বিন রুফাই (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত উবাই বিন কা’ব (রা.) রমজান মাসে লোকদের নিয়ে মদিনায় ২০ রাকাত তারাবিহ এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৩৯৩, ৭৭৬৬) মোটকথা, ১৫০০ বছরের ইতিহাসে মদিনা শরিফে ২০ রাকাতের কম তারাবিহর নামাজ কেউ পড়েননি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Rakibulbdm

Call


রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত।রামাযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে‘তারাবীহ’ এবং রামাযান ও অন্যান্যসময়ে শেষরাতে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয়।


তারাবীহ :    মূল ধাতু رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ(রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন)অর্থ :সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসেতারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ :প্রশান্তির বৈঠকসমূহ(আল-মুনজিদ)


তাহাজ্জুদ :    মূল ধাতু هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা।সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকেজেগে ওঠা বা রাত্রিজেগে ছালাত আদায় করা(আল-মুনজিদ)।


উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুললায়েল সবকিছুকে এক কথায় ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘রাত্রির নফল ছালাত’ বলা হয়।রামাযানে রাতেরপ্রথমাংশে যখন জামা‘আত সহ এই নফল ছালাতের প্রচলন হয়, তখন প্রতি চার রাক‘আতঅন্তর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হ’ত। সেখান থেকে ‘তারাবীহ’ নামকরণ হয়(ফাৎহুল বারী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব)।এই নামকরণের মধ্যেই তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যে, তারাবীহ প্রথম রাতে একাকী/জামা‘আত সহ এবং তাহাজ্জুদ শেষরাতেএকাকী পড়তে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানের রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদদু’টিই পড়েছেন মর্মে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না’।  মির‘আত ৪/৩১১ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ-৩৭


রাক‘আত সংখ্যা


সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদিসের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ(সঃ)  থেকে ৩ ধরনের সংখ্যা বর্ননা করা হয়েছে।


ক)   ১১ রাকাতঃ-  আয়িশাহ(রাঃ) থেকে বিভিন্ন সনদে ও ভংগিতে বর্নিত হয়েছে যে, নাবী(সঃ) রাত্রিকালে ইশার পরের ২ রাকাত ও ফাজরের পূর্বের ২ রাকাত সুন্নাত ছাড়া মোট ১১ রাকাত সলাত আদায় করতেন।এক বর্ননায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ(সঃ) রমাযান ও অন্যান্য মাসেও রাত্রে ১১ রাকাতের বেশী নফল আদায় করতেন না। বুখারী-১১৪৭,১১৩৯,৯৯৪,২০১৩  মুসলিম- সলাতুল্লাইল ওয়াল বিতর-৬/১৬, ১৭ ,২৭


বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩য় খন্ড- হাদীস নং- ১৫৯২-১৫৯৭,  বুখারী আজিজুল হক- ১ম খন্ড-হাদিস নং-৬০৮,  বুখারী আধুনিক প্রকাশনী-১ম খন্ড-হাদিস-১০৭৬-দ্বিতীয় খন্ড-হাদীস-১৮৭০,  মিশকাত-নূর মোহাম্মাদ আযমী-৩য় খন্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য বই-২য় খন্ড হাদিস নং-১২২৮,   হাদিস শরীফ  মওলানা আবদুর রহীম-২য় খন্ড-৩৯০ পৃষ্টা,  বুখারী-১ম খন্ড-১৫৪-২৬৯ পৃষ্ঠা,  মুসলিম-২৫৪ পৃষ্ঠা,আবু দাউদ-১ম খন্ড-১৮৯ পৃষ্ঠা,নাসাঈ-১৪৮ পৃষ্ঠা,  তিরমিযী-৯৯ পৃষ্ঠা,  ইবনু মাজা-৯৭-৯৮ পৃষ্ঠা,  মুয়াত্তা মালিক-১৩৮ পৃষ্ঠা, সহীহ ইবনে খুজায়মা-৩য় খন্ড-৩৪১ পৃষ্ঠা,যাদুল মাআদ- ১ম খন্ড-১৯৫ পৃষ্ঠা, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,   মিশকাত হা/১১৮৮ ‘রাত্রির ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩১,   বুখারী ১/১৫৪ পৃঃ, হা/১১৪৭;  মুসলিম ১/২৫৪ পৃঃ, হা/১৭২৩;    তিরমিযী হা/৪৩৯;    আবুদাঊদ হা/১৩৪১;    নাসাঈ হা/১৬৯৭;   মুওয়াত্ত্বা, পৃঃ ৭৪, হা/২৬৩;  আহমাদ হা/২৪৮০১;   ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১১৬৬;    বুলূগুলমারাম হা/৩৬৭;    তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৪৩৭;   বায়হাক্বী ২/৪৯৬ পৃঃ, হা/৪৩৯০;    ইরওয়াউল গালীল হা/৪৪৫-এর ভাষ্য, ২/১৯১-১৯২;    মির‘আতুল মাফাতীহ হা/১৩০৬-এর ভাষ্য, ৪/৩২০-২১


খ)    ১৩ রাকাতঃ-   ইবনু আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাত্রিকালে রসুলুল্লাহ(সঃ) ১৩ রাকাত নফল সলাত আদায় করতেন।  বুখারী-১১৩৮, তিরমিযী-(তুহফাসহ)-৪৪০


ইবনু আব্বাসের(রাঃ) হাদীসে ১১ রাকাতের চেয়ে ২ রাকাত বেশী পাওয়া যায়।বাড়তি এই ২ রাকাতের  ব্যাখ্যা বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায়।নাসাঈ গ্রন্থে ইবনু আব্বাসের(রাঃ) হাদীসের ১৩ রাকাতের বর্ননা এসেছে। ৮রাকাত রাতের সলাত , ৩ রাকাত বিতর ও ২ রাকাত ফজরের পূর্বের সুন্নাত। (নাসাঈ-৩/২৩৭,ফাতহুল বারী-২/৫৬২)।   ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত ধরে আয়েশাও(রাঃ) ১৩ রাকাতের কথা বর্ননা করেছেন। বুখারী-১১৪০, মুসলিম- সলাতুল লাইলি ওয়াল বিতর-৬/১৭-১৮ ,ফাতহুল বারী-২/৫৬২,  বুখারীতে আয়েশা(রাঃ)এর  কোন কোন বর্ননায় ১১ ও ২ রাকাতকে পৃথক করে দেখানো হয়েছে। বুখারী-৯৯৪,১১৪০


       যে সমস্ত বর্ননায় ১৩ রাকাতের বিস্তারিত বিবরন আসেনি, সেগুলো  এশার ২ রাকাত কিংবা ফজরের সুন্নাত উদ্দেশ্যে।  ফাতহুল বারী-২/৫৬২  কোন কোন বর্ননায় এসেছে রাসুলুললাহ(সঃ) রাত্রের সলাত উদ্বোধন করতেন, হালকা ২ রাকাত সলাত আদায়ের মাধ্যমে।হতে পারে এই ২ রাকাত নিয়ে ১৩ রাকাত।কিন্তু এই ২ রাকাত সলাত বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে এশার সলাত বলেই মনে হয়(‘সালাতুত তারাবী-আলবানী–১৭ নং টীকা)।


গ)    ১৫ রাকাতঃ-     ঈশার পরের ও ফজরের পূর্বের ২ রাকাত সুন্নাত সলাতসহ আয়েশা ও ইবনু আব্বাস(রাঃ) উভয়েই ১৫ রাকাত বর্ননা করেছেন। সহীহ হাদিস সমূহের মাধ্যমে ও পূর্বাপর সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহগনের মতে রাসুলুল্লাহ(সঃ) ১১ বা এশা/ফজরের সুন্নাত  মিলিয়ে ১৫ রাকাতের বেশী রাতের সলাত পড়েননি। রমজান সম্পর্কিত রিসালাহ – আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম


ঘ)      সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন,   ‘খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হযরত উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীমদারী (রাঃ)-কে রামাযানের রাত্রিতে ১১ রাক‘আত ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়েরনির্দেশ প্রদানকরেন। এই ছালাতফজরের প্রাক্কাল (সাহারীরপূর্ব) পর্যন্ত দীর্ঘ হ’ত’।


 মুওয়াত্ত্বা (মুলতান, পাকিস্তান: ১৪০৭/১৯৮৬) ৭১ পৃঃ,    রামাযানে রাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৩০২ ‘রামাযান মাসেরাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ-৩৭; মির‘আত হা/১৩১০, ৪/৩২৯-৩০, ৩১৫ পৃঃ;    বায়হাক্বী ২/৪৯৬, হা/৪৩৯২;  ত্বাহাভী শরহ মা‘আনিল আছার হা/১৬১০

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ