ভালবাসা হচ্ছে প্রতিটা মানুষের সুক্ষ অনুভূতি আবেগ আর দায় দায়িত্ববোধ থেকে জন্ম নেয়া একটা মানবিক গুন্. তবে আজকাল ভালবাসা বলতেই নারী পুরুষের সম্পর্ককে বুঝানো হয়. আমি এর সাথে একমত নই.
প্রকৃত ভালবাসা সার্বজনীন. ভালবাসা বিশ্ব সংসারে জন্য, ভালবাসা নিজের জন্য, ভালবাসা পিতামাতা, পরিবার পরিজন, পাড়া - প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, আপন পর কম বেশি সবার জন্য. তাই ভালবাসার মতো একটা মানবিক গুনকে কেবল মাত্র দুটি নারী পুরুষের সম্পর্কের মাঝে তথা দৈহিক সম্পর্ক ক্ষেত্র বেশেষে সন্তান জন্ম দেবার মতো একটা মানদন্ডে বিচার করলে সত্যিকার ভালবাসাকে অর্থাৎ সার্বজনীন ভালবাসাকে অতিশয় ছোট করা হবে তথা যারা যুগে যুগে তাঁদের ভালবাসা দিয়ে মানবতাকে যার যার স্থান থেকে সর্বোচ্ছ স্থানে রেখেছেন তাঁদেরকে অপমান করা হবে..
১. কঠিনঃ- এই প্রেম খুব শক্ত হয়। এই প্রেম কারো মনে আসলে সে অই ব্যক্তিকে ছাড়া আর কাউকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু এই প্রেমের একটি সমস্যা হল এর প্রকাশ খুব কম, কারণ এটাকে সত্যিকারের প্রেম বলে। আর কবি গুরু বলেছেন “যার ভালবাসা যত গভীর, প্রতাশ করার ক্ষমতা তার তত কম”। এই প্রেম যার মনে একবার বাসা বেঁধেছে সে অই ব্যক্তিকে না পেলে চিরকুমার থাকার মতও ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। কারণ সে মনের মধ্যে তাকে এমন শক্ত করে আকড়ে ধরে যে সেখানে অন্য কোন তরুন বা তরুণীর ছবি আঁকা বা স্থান দেয়া দুষ্কর হয়ে পরে।শত কষ্টের মাঝেও দুজন দুজনকে ছাড়ে না, তখন অভাব ঘরের দরজায় না, চারিদিক ঘ্রাস করলেও ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায় না। এটাকে বলে সত্যিকারের প্রেম। এই প্রেমে রাগ অভিমান ইত্যাদি বেশি থাকলেও ভাঙ্গন খুব কম। একান্ত কারণ ছাড়া এই প্রেম ভাঙ্গবে না। কখনো কখনো এই প্রেম মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়ে থাকে।
০২. তরলঃ- এই প্রেম বা ভালবাসার কোন ভিত্তি নেই। এই ভালবাসার ছেলে/মেয়েরা তরলের মতই যেই পাত্রে স্থান পায় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে, মানে যেখানে সে তার প্রতি অন্যকারো দুর্ভলতা বুঝতে পারে সেই মনে সে তাকে সপে দেয়। এমন করতে করতে কখনো সে অজানা ভাবেই সেঞ্চুরি করে থাকে। এই প্রেম চায়না মালের মত। আওয়াজ বেশি স্থায়ীত্ব কম, মানে ভালবাসি ভালবাসি বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলে ফেললেও কখনো টেকসই হয় না। কারণ এই ভালবাসার কারণে কপোত/কপোতি বিভিন্ন মানুষকে তার মন দান করে থাকে, তার চোখে সবাইকে ভাল লাহে। আলাদা করে কাউকে সে নিতে পারে না। তাই এই প্রেম তরল প্রেম।
০৩. বায়বীয়ঃ এটা আরো মজার প্রেম। এই ভালবাসার ছেলে/মেয়েরা ভালবাসে কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। বায়ু যেমন অদৃশ্য থেকে সব কিছুকে দোলা দিয়ে যায়, ঠিক তেমনি এই ভালবাসা মনের মধ্যে থাকে নিজেকে নিজে দোলা দিয়ে যায়। প্রকাশ না করার কারণে কখনো কখনো মনের মানুষটাকে কোনদিন বলাই হয় না। আর না বলার কারণে ঘর বাঁধার স্বপ্নও আসে না। এই ভালবাসার কপোত/কপোতিগুলো তার ভালবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে দেখলে রাগ করবে অভিমান করবে কাঁদবে কিন্তু কখনো প্রকাশ করবে না। সে চায় তার ভঙ্গিমাতে অপরপক্ষ্য বুঝে নিক যে তাকে সে ভালবাসে। বায়ুর মতই অদৃশ্য থাকে বলে একে বায়বীয় প্রেম বলে।
আশা করি বুঝতে পারছেন।
ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হতে পারে:
১। প্রথম দেখায় প্রেম=
প্রথম দেখাতেই এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই একতরফা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়। এ ধরনের প্রেমে প্রায় অবধারিতভাবেই তৃতীয় পক্ষের সাহায্যের দরকার পড়ে। এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাতে রূপ স্মরণীয় ও দৈহিক সৌন্দর্যের ভূমিকাই বেশি।
২। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম-
এই ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিক ও প্রেমিকা দু’জনেই প্রথমে বন্ধু থাকে। তবে এধরনের প্রেম অনেক সময়ই অকালে ঝরে যায় কোন একতরফা সিদ্ধান্ত বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। অনেকে বন্ধুত্বের এই রূপান্তর মেনে নিতে পারেনা বলে অনুশোচনায় ভোগে। বিশেষত মেয়েরা।
৩। বিবাহোত্তর প্রেম-
এই প্রেম শুধুমাত্র স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা যায়। বিয়ের ঠিক পর পর প্রথম কয়েক মাস এই প্রেম প্রবল থাকে। বিবাহোত্তর প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই।
৪। পরকীয়া প্রেম-
বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে। এই পরকীয়া প্রেমতো আদিযুগ থেকে চলে আসছে।
৫। অপরিণত প্রেম-
এ ধরনের প্রেম সাধারণত স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় হয়ে থাকে। মেয়েরাই এ ধরনের প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও যে পড়ে না তা বলা ভুল হবে। প্রেমিক প্রেমিকাদের দু’জনই সমবয়সী হতে পারে।
৬। কর্মক্ষেত্রে প্রেম-
কর্মসূত্রে দু’জন মানুষের পরিচয়ের মাধ্যমে এ ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। বেসরকারী সংস্থাতে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।
৭। মোবাইল প্রেম-
বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বা ফোনবুক থেকে চুরি করে, পাড়ার ফোনের দোকান থেকে সংগ্রহ করে, অন্য কোন সূত্র থেকে নাস্বার পেয়ে বা নিতান্তই মনের মাধুরী মিশিয়ে কোন নাম্বার বানিয়ে তাতে ফোন করে কোন মেয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত।
৮। ইন্টারনেটে প্রেম-
ইন্টারনেটে চ্যাটিংয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রেম এটা এখন হামেশাই হচ্ছে। দু’জনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেমে উভয়পক্ষেরই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে অনেক।
৯। ত্রিভুজ প্রেম-
এ ধরনের প্রেমকে বলা যেতে পারে একজন মেয়েকে নিয়ে দু’জন ছেলের দড়ি টানাটানি। একই মেয়ের প্রতি দু’জন ছেলের ভালোবাসা এই প্রেমের মূলকথা। উক্ত মেয়েকে পেতে দু’জন ছেলেই পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে থাকে।
১০। বহুভুজ প্রেম-
একই মেয়ে বা ছেলের প্রতি দু’এর অধিক ব্যাক্তির অনুরাগই মূলত, বহুভুজ প্রেম। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়ে বা ছেলেটি স্বভাবতই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। সবাই তার সাথে প্রেম করতে চায় এই বিষয়টি তাকে ব্যাপক আনন্দ দেয়।
১১। ঘানি টানা প্রেম-
প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছ থেকে কোন বিশেষ সুবিধা লাভই এ ধরনের প্রেমের উদ্দেশ্য। মেয়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রেমের প্রচলন বেশি দেখা গেলেও ছেলেদেরকেও মাঝে মাঝে করতে দেখা যায়।
১২। অব্যক্ত প্রেম-
নীরবে এক অপরকে ভালোবেসে গেলেও পরিস্থিতি, সময় বা মনোবলের অভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে কেউই একে অপরকে কোনোদিন বলেনি। অব্যক্ত প্রেম হারানোর বেদনা খুব কষ্টদায়ক, জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে মনে থাকে।
১৩। সুপ্ত প্রেম-
একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু কেউই কাউকে বলছে না, পুরো ব্যাপারটাই লুকিয়ে যাচ্ছে এমন প্রেমই সুপ্ত প্রেম। সুপ্ত প্রেম আজীবন সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত প্রেমে।
১৪। চুক্তিবদ্ধ প্রেম-
এ ধরনের প্রেম হয় পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে। সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে যা বোঝায় তা এই ধরনের প্রেমে অনুপস্থিত থাকে। কোন ভবিষ্যৎ থাকেনা এসব সম্পর্কের।
১৫। অসাম্প্রদায়িক প্রেম-
এ ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দু’জনে দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হয়ে থাকে। সমাজ এ ধরনের সম্পর্ককে সমর্থন করেনা। বিশেষত, হিন্দু-মুসলমান ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করে।
১৬। ভাড়াটে প্রেম-
এ ধরনের প্রেমের প্রেমিক বা প্রেমিকারা বলতে গেলে ভাড়া খাটে। তারা সকালে একজনের গার্লফ্রেন্ড তো বিকেলে আরেকজনের। কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা নেই। ব্যাপারটা অনেকটা মাসে মাসে মোবাইল হ্যান্ডসেট চেঞ্জ করার মতো।
১৭। ঝগড়াটে প্রেম-
সারাক্ষণ দু’জনের মধ্যে খিটির-পিটির লেগে থাকাটা এই প্রেমের বৈশিষ্ট্য এ ধরনের প্রেমে ঝগড়াগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু খুব ঘনঘন হয়। ঝগড়াগুলো অধিকাংশই হয় ফোনে।
১৮। ‘আজো তোমায় ভালোবাসি’ প্রেম-
এই প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ ঘটেছে আগেই। তবুও আজো তারা একে অপরকে ভালোবাসেন। হাই হুতাশ আর চোখের পানিতেই কেটে গেলো এই প্রেম।
১৯। ব্যর্থ প্রেম-
সবশেষে আছে ব্যর্থ প্রেম। এ প্রেম শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। ব্যর্থ প্রেমের শেষটা হয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান দিয়ে। কখনো কখনো ছেলেদের ভাগ্যে জোটে থাপ্পড়, মেয়েদের জুতার বাড়ি আবার কখনও উধুম গণধোলাই।
বিশেষ কারো জন্য মনের এক নিঃস্বার্থ সুন্দর অনুভূতি। যা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে উপহার স্বরুপ। যার কখনো পরিবতর্ন হয় না।
ভালোবাসা হতে পারে বিভিন্ন প্রকারের। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিম্নরুপ-
যে ভালোবাসা কথার মাধ্যমে প্রকাশ হয় তাকে কথ্য ভালোবাসা বলে। যেমন: I♥ U- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
যে ভালোবাসা চিঠি পত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে লেখ্য ভালোবাসা বলে। যেমন: প্রাচীন ও বর্তমান যুগের ভালোবাসা।
যে ভালোবাসা মনের আবেগ থেকে হয় তাকে মৌন ভালোবাসা বলে। যেমন: বাবা-মার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা।প্রকৃত প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা।
যে ভালোবাসা আকার ইঙ্গিত বা ভাবের মাধ্যমে বোঝানো হয় তাকে ইঙ্গিতপূর্ণ ভালোবাসা বলে। যেমন:চোখমারা,সামনে গিয়ে হাসা ইত্যাদি।