আজকের রাতের ফযিলত কি?


 দয়াকরে বিস্তারিত জানাবেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

শবে বরাতের ফযিলতঃimage



আজ ১৪ শাবান রোববার দিবাগত রাত পবিত্র শবে বরাত। আল্লাহপাক যে ক’টি রাতকে মোবারক বলে ঘোষণা করেছেন তন্মধ্যে শবে বরাতও একটি অন্যতম বরকতময় রাত। ‘শব’ ফার্সি শব্দ। অর্থ-রজনী। বরাত অর্থ মুক্তি, নিষ্কৃতি। এ রাতকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। এ রাতে আল্লাহপাক বিশ্ববাসীর তাকদীর সম্পর্কীয় যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার জন্যে ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করেন। যার মধ্যে জন্ম- মৃত্যু, রিজিক, ধন-দৌলত, সুখ-দুঃখ সবকিছুই সন্নিবেশিত থাকে। সুতরাং আজকের রাতটির গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বিপুল। এ রাতে আল্লাহপাক মানবজাতির জন্যে নাযিল করেন প্রভুত কল্যাণ ও অসীম রহমত। এ রাত সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন- এ রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রেখো। কেননা, এ রাতে সন্ধ্যার পর থেকেই আল্লাহপাক প্রথম আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছো কি? যাকে আমি ক্ষমা করবো। কেউ রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? যাকে আমি রিজিক দেবো। কেউ বিপদগ্রস্ত আছো কি? যাকে আমি বিপদ থেকে উদ্ধার করবো। এমন কি কেউ নেই? এমন কি কেউ নেই? এমনিভাবে আল্লাহপাকের মহান দরবার থেকে আহবান অব্যাহত থাকে সুবহি সাদিক পর্যন্ত। -(মিশকাত আল-মাসাবীহ)।
এ মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে রাসূল (সা.) মিশকাত শরীফের অন্য হাদিসে বলেছেন- হে আয়শা! তুমি কি জানো এ রাতে কি রয়েছে? হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রা.) বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বলুন, এ রাতে কি রয়েছে। তখন রাসূল (সা.) বললেন- আগামি বছর যতো আদম সন্তান জন্ম নেবে এবং যারা মারা যাবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে এবং এ রাতে বিশেষভাবে বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে এবং তাদের রিজিক নাযিল করা হবে। -(মিশকাত আল-মাসাবীহ)। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) এ রাতে দেখলেন রাসূল (সা.) সিজদায় অবনত হয়ে কাঁদছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মাথা তুলে বললেন-তুমি জানো এটা কোন রাত? হযরত আয়শা (রা.) বললেন- না। তখন রাসূল (সা.) বললেন-এটি শা’বানের মধ্যবর্তী রাত। এ রাতে যারা যতো বেশি ইবাদত করবে এবং আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে তিনি ততো বেশি গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। যদিও গুনাহ্র পরিমাণ পাহাড়সম হয়।
প্রখ্যাত সাহাবী ও সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- শা’বানের মধ্যবর্তী (১৫ শা’বান) রাতে হযরত জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে এসে বলেছেন- হে মুহাম্মদ (সা.)! আজ আপনার মাথা আসমানের দিকে উঠান। কেননা, আজকের রাত বরকতময়। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, এতে কি বরকত নিহিত রয়েছে? তখন জিবরাঈল (আ.) জবাবে বললেন- এ রাতে আল্লাহপাক তাঁর রহমতের তিনশ’ দ্বার খুলে দেন। মুশরিক, গনক, সর্বদা মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী এবং সুদখোর ছাড়া সকলকে আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন। -(আবু দাউদ)। অবশ্য এসব অপকর্ম ত্যাগ করে খাঁটি নিয়তে তাওবা করলে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে মাফ করে দিতে পারেন।
হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন- এক রাতে আমি রাসূল (সা.) -কে পেলাম না। তখন আমি খুঁজে দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করছেন। তখন রাসূল (সা.) আমাকে দেখে বললেন- হে আয়শা! তুমি কি মনে করছো যে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করেছে? তখন আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বললেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমি ধারণা করেছিলাম আপনি অপর কোনো স্ত্রীর ঘরে গেছেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, অর্ধ শা’বানের রাতে (শবে বরাতে) আল্লাহপাক নিকটতর আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বনি কলব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।
-(তিরমিজি, ইব্ন মাজাহ্)।
এ রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করার ওয়াদা দিয়েছেন; কিন্তু রাতের কোন অংশে কবুল করা হবে তা নির্দিষ্ট করে বলেনি। কাজেই আমাদের উচিত সারা রাত ধরে আল্লাহর ইবাদতে মাশগুল থাকা। মাগরিবের নামাজ, এশার নামাজ ও ফজরের নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করার পাশাপাশি এ রাতে প্রচুর পরিমাণ নফল নামাজ আদায়, জিকর-আজকার, কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, দান-খায়রাত করা, ফকির-মিসকিনকে খানা দান করা, আমাদের পূর্বপুরুষসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জন কবরে শায়িত রয়েছেন তাঁদের জন্য কবর জিয়ারত, জীবনের অসংখ্য গুনাহ ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দরবারে কাঁন্নাকাটি, ইস্তিগফার, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ওস্তাদ ও বিশ্বের সকল মুসলিম-মুসলিমাত ও মু’মিন-মু’মিনাতের জন্যে দোয়া করা উচিত।
এ রাতে বেশি বেশি করে কুরআন পড়ুন। কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সাওয়াব সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে ব্যক্তি এর বদলে একটি নেকী লাভ করবে। আর একটি নেকী হলো দশটি নেকীর সমান। -(তিরমিজি)। রাসূল (সা.) আরও বলেছেন- কুরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদত। হাদিসের মধ্যে আরো এসেছে- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা কুরআন পড়ো। কেননা, এ কুরআন কিয়ামতের দিন পাঠকারীদের জন্যে সুপারিশ করবে।-(মুসলিম)। রাসূল (সা.) অন্য হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেছেন-‘যে ব্যক্তি কুরআনুল করিম অধ্যয়ন করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে কিয়ামতের দিন তাঁর পিতা-মাতাকে এমন একটি মুকুট পরিধান করা হবে, যার জ্যোতি সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল হবে।’
আর এ রাতে বেশি বেশি করে গুনাহ মাপের জন্যে কাঁন্নাকাটি করুন। মানুষ শয়তানের প্রলোভনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পাপ কাজে লিপ্ত হয় এবং অন্যায় অবিচার নির্যাতন ও জুলুম করে থাকে। সমস্ত গুনাহের জন্যে লজ্জিত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। হাদিসে এসেছে, কোনো বান্দা নফসের প্রলোভনে ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কোনো গুনাহর কাজ করার পর যদি আল্লাহর দরবারে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
শাবানের মাসকে গ্রাম বাংলার মানুষ ‘রুটির চাঁদ’ও বলে। শবে বরাতে আমাদের সমাজে বাড়িতে বাড়িতে হালুয়া-রুটি তৈরি করে এবং তা আত্মীয় স্বজন ও গরিব-মিসকিনকে দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। এটি আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মাধুর্য সৃষ্টি করেছে। শহরেও এ রীতি চালু রয়েছে। এ ছাড়াও ধনী ও মধ্যবিত্ত সমাজে এ রাতে হালুয়া-রুটির পাশাপাশি নানা ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করে। আমাদের মাঝে আদান প্রদানের যে রীতি চালু রয়েছে তা আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এরই মাধ্যমে এ রাত হয়ে উঠেছে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রাত।
এ রাতে যতো বেশি পারা যায় নফল নামাজ পড়ুন। এতে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। তবে জানা থাকলে সুরা ইয়াসিন, সুরা আর-রহমান, সুরা মুলুক, সুরা দুখান ইত্যাদি বড়ো বড়ো ফজিলতপূর্ণ সুরা দিয়ে পড়া ভালো। আর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করুন। আর মা-বাবা অথবা আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করুন। এ সম্পর্কে আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন- আমি হযরত মুহাম্মদ (সা.)- কে দেখেছি যে, তিনি এ রাতে মদীনার কবরস্থানে গিয়ে মুসলিম নর-নারী ও শহীদগণের জন্যে দোয়া করতেন। এরপর কবরস্থান থেকে ফিরে এসে নামাজ পড়তেন।
আমাদের বর্তমান যুগে মুসলিমদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ ভুলে এবং এ পুণ্যময় রাতের মাহাত্ম্য, পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য বজায় না রেখে উৎসব পালনের নামে আতশবাজি, পটকাবাজি, অহেতুক আলোকসজ্জা, কবরস্থানে মোমবাতি ইত্যাদি শরীয়ত বিরোধী কাজকর্ম করতে দেখা যায়। এ সব কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাই আমাদের উচিত হবে এসব কর্মকাণ্ড যাতে হতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখা। এ ফজিলতময় রাতে কায়মনে বাক্যে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় শবে বরাত পালন করলেই এর সার্থকতা হবে। আমাদের সবসময় স্মরণ রাখতে হবে কুরআনুল করিমের এ আয়াত- ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্য়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। অর্থাৎ, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং মরণ সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যে।
পরিশেষে বলতে পারি শবে বরাত আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার রাত। সুতরাং আমরা যেনো এ মর্যাদাবান রাতে অহেতুক সময় নষ্ট করে গল্প গুজবে লিপ্ত না হই। যাতে এ রাতের ভাবগাম্ভীর্যতা ক্ষুণ্ন হয় এ ধরনের কাজ না করি। আল্লাহকে খুশি করার জন্যে সারা রাত ইবাদতে নিমগ্ন থেকে মুক্তির রজনীর ফজিলত অর্জন করি। আল্লাহপাক আমাদের তওফিক দান করুন

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাত্রিতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে নেমে আসেন। অনন্তর বানূ কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের সংখ্যার চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন। শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত সম্পর্কেঃ আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো এবং এর দিনে সওম রাখো। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেনঃ কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছো এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত 'তিনি এভাবে আহবান করেন'। (সূনান তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৭৩৭ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নম্বরঃ ১৩৮৮ হাদিসের মানঃ যঈফ)। আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নম্বরঃ ১৩৯০ হাদিসের মানঃ হাসান)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
RushaIslam

Call

শবে বরাত’ দু’টি ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ—রাত বা রজনী। ‘বরাত’ অর্থ—ভাগ্য। দু’টো একত্রিত করলে অর্থ দাঁড়ায়—ভাগ্যের রজনী। শবে বরাতকে আরবীতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ অর্থাত্, মুক্তির রাত বলা হয়। পবিত্র কুরআনে এ রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ্’—বরকতময় রজনী বলা হয়েছে। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ —শা’বানের মধ্যরজনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাফসীরের কিতাব, হাদীসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও ফিকাহ্র গন্থসমূহে শবে বরাতের উল্লেখিত নাম ছাড়া আরো বিশেষ কিছু নাম এসেছে। যেমন—‘লাইলাতুল কিসমাহ্’ —ভাগ্যের রাত, ‘লাইলাতুত তাজবীয’ —রিযিক বণ্টনের রাত, ‘লাইলাতুল ফায়সালাহ্’ —তাকদীর নির্ধারণের রাত, ‘লাইলাতুল আফঊ’ —ক্ষমার রাত, ‘লাইলাতুল কারামি’ —দয়ার রাত, লাইলাতুত তাওবাহ্’ —তাওবার রাত ও ‘লাইলাতুন্ নাদামাহ্’  —মিনতির রাত।

শা’বান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে শবে বরাত। শা’বান মাস আল্লাহ্র কাছে অধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসকে রমজানের প্রস্তুতি মাস বলা হয়েছে। নবী করীম (স) অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি নফল রোজা পালন করতেন।

শবে বরাতের ফযিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে— আম্মাজান আয়েশা (রা) বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ (স) কে না পেয়ে তাঁর সন্ধানে বের হলাম। গিয়ে দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে অঝোর নয়নে কাঁদছেন। নবীজী আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আয়েশা! ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমার ওপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম—হে আল্লাহ’র রসূল! না; আমি ধারণা করেছিলাম, আপনি হয়ত অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (স) বললেন, হে আয়েশা আজকের রাত সম্পর্কে তুমি জেনে রেখো, মহান আল্লাহ এই রাতে দুনিয়ার প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং কাল্ব গোত্রের ছাগপালের পশমের চেয়ে অধিক বান্দাকে তিনি ক্ষমা করেন। ‘কাল্ব’ হচ্ছে আরবের একটি প্রসিদ্ধ গোত্র, যারা অধিক পরিমাণে বকরি লালন-পালন করত। যেহেতু তাদের বকরির সংখ্যা ছিল বেশি, তাই নবীজী তাদের বকরিপালের পশমের কথা উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন।

ইবনে মাজাহ্ শরীফের এক হাদীসে এ রাতের মর্যাদা উল্লেখ করে বলা হয়েছে—হযরত আলী (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, যখন শাবানের মধ্য রাতটি আসবে তখন তোমরা সে রাতে কিয়াম তথা রাতভর নামাজ পড়বে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কেননা সেদিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহতাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন—আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী যাকে আমি ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিযিক প্রার্থনাকারী যাকে আমি রিযিক দিব। আছে কি কেউ সমস্যাগ্রস্ত যে আমার কাছে পরিত্রাণ চায় আমি তাকে উদ্ধার করব। এভাবে আল্লাহ ফজর পর্যন্ত বান্দাহেক তাঁর কুদরতী জবান দ্বারা আহ্বান করেন।

আল্লাহ এ পুণ্যময় রজনীতে অসংখ্য বান্দা-বান্দীকে ক্ষমা করেন, তবে দু’শ্রেণির লোককে তিনি ক্ষমা করেন না। (এক) ‘মুশরিক’— যারা আল্লাহ’র সাথে শরীক করে, (দুই) যারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। আল্লাহ্র কাছে পাঁচটি রাত খুবই মর্যাদার। এর মধ্যে শবে বরাতের রাতও রয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে—‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রির দোয়া নিশ্চতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (এক) রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া, (দুই) শবে বরাতের দোয়া, (তিন) শবে কদরের দোয়া, (চার) ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া ও (পাঁচ) ঈদুল আযহার রাতের দোয়া।’

এ রাতটি আমরা কিভাবে পালন করবো সে সম্পর্কে বুজুরগানে দ্বীন বলেছেন—এ রাতের আমল হচ্ছে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, দরূদ পাঠ করা, নীরবে নিভৃতে আল্লাহ’র জিকিরে মশগুল থাকা, তাওবা-ইস্তেগফার করা, কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, মাতা-পিতা ও আপনজনের কবর জিয়ারত করা, গরিব-মিসকিনকে দান-সাদকা করা ইত্যাদি।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে অন্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এ রাতে কোনো ইবাদত করা হলে আল্লাহ তা কবুল করবেন না। এ রাতে জাগ্রত থাকতে গিয়ে ফজরের নামাজ যেন ফওত না হয় সে দিকেও সবার খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, শবে বরাতের সারারাতের আমল কখনো ফজরের ফরয নামাজের সমতুল্য হবে না। সঠিক নিয়ম পালন করে এ রাতের আমল করলেই কেবল এ রাতের বরকত ও ফযিলত লাভ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে এ রাতের গুরুত্ব বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। —আমীন!

সুত্র:ইত্তেফাক

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
MdAbuSaeed

Call

ভিডিওটি দেখেন সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আর সবাই যেসব হাদিস বলছে সেগুলা সহিহ না জাল সেগুলো ও জানতে পারবেন। সব হাদিস তো সহিহ না। 

https://youtu.be/TCU-CbiLGUE

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ