বর্তমানে করোনা ভাইরাসের জন্য বাংলাদেশের অনেক মসজিদে ১ ফিট/২ফিট/৩ফিট ফাঁকা রেখে জামাত করা হচ্ছে এটার ব্যাপারে ইসলাম কি বলছে? আমরা জেনে আসছি তো নবী করিম (সঃ) বলেছেন তোমরা যখন সালাত আদায় করবে তখন তোমরা কাঁধ বরাবর সমান করে কোনো ফাঁকা না রেখে জামাত করে সালাত আদায় কর। কিন্তু বর্তমানে এই মহামারীর জন্য এই ফাঁকা রেখে জামাত করা কতটুকুই ইসলাম শরীয়ত মোতাবেক? রেফারেন্স দিয়ে জানাবেন। 


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
FoyEz00

Call

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ভারী বৃষ্টির দরুন মসজিদে জামাত আদায় না করে বাড়িতে পড়ার দৃষ্টান্ত আছে। ইসলাম বাস্তবতা বুঝে সেই বাস্তবতার আলোকে চলতে বলে। এ যুক্তিতেই আজানে নামাজের জন্য আহ্বান জানানো এবং ‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ ‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম’ বলে ঘরে বা বাড়িতে নামাজ পড়ার উৎসাহ দেওয়াকে সমর্থন করা যায়। কারণ মানুষের নিরাপত্তা, জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানকে ইসলাম অবশ্যই গুরুত্ব দেয়। আর বাস্তবতার আলোকে এসব বিষয় অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতি না থাকলে কিংবা কোনো সংক্রমণের ভয় না থাকলে মসজিদ কিংবা অন্য কোথাও নামাজে জামাআত অনুষ্ঠিত হলে তাতে মুসল্লিরা একে অপরের সাথে মিলে, ফাঁকা বন্ধ করে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো সুন্নত৷ দুজন মুসল্লির মাঝে একজন দাঁড়াতে পারে এ পরিমাণ ফাঁকা রাখা সুন্নাতের পরিপন্থী৷ হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। এ সম্পর্কিত কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো-

- নামাজে কাতার সোজা করা এবং পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ানো সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে-
أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّوا
অর্থ : আপনারা আপনাদের কাতার সোজা করুন এবং পরস্পর মিলে দাঁড়ান।' (বুখারি)

- বুখারি মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে-
سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَاِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِن اِقَامَةِ الصَّلاةِ
অর্থ : ‘কাতার সোজা করুন, কারণ কাতার সোজা করা নামাজ প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি-মুসলিম)

- নাসাঈ ও আবু দাউদের এক বর্ণনায় এসেছে-
‘কাতার সোজা করুন, কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে দাঁড়ান, কাতারের মাঝে ফাঁক বন্ধ করুন, হাতগুলো সহজ ও স্বাভাবিকভাবে রাখুন, শয়তানের জন্য কাতারের মধ্যে খালি জায়গা বন্ধ করুন। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তাকে মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ)

- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَدّ فُرْجَةً فِى صَفٍّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَ بَنٰى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنّةِ
যে ব্যক্তি কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন।' (তাবারানি, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

 জামাআতে দূরত্ব রেখে দাঁড়ালে নামাজ হবে কি? 

হাদিস পাকে কাতার সোজা এবং ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। তবে ইসলামিক স্কলারদের মতে নামাজের কাতার সোজা এবং ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানো উত্তম কিন্তু কাতারের ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানো নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কোনো রোকন নয়। এমন নয় যে, কাতারে ফাঁকা থাকলে নামাজ হবে না।নামাজের কাতারে ফাঁকা থাকলে কিংবা কাতারে ফাঁকা রেখে নামাজ পড়ে ফেললে তা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেছেন যে, নামাজ আদায় হয়ে যাবে তবে তা মাকরূহ হবে। নামাজে এমন অনেক বিষয় আছে যা মেনে চলা জরুরি।

তবে ফোকাহায়ে কেরামের কাছে একটি বিষয় এমন যে, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ অবশিষ্ট থাকে না। পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনের তাগিদে অনেক নিষিদ্ধ বিষয়ও মানুষের জন্য বৈধ।

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবের সময় মসজিদে জামাআতে নামাজ পড়ার সময় কাতারবন্দি মানুষের জন্য ফাঁকা হয়ে দাঁড়ানোয় কোনো ক্ষতি নেই। ফাঁকা হয়ে দাঁড়ালে নামাজ হবে না এমনটি নয়। করোনায় সংক্রমণের সম্ভাবনায় ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে কোনো ক্ষতি হবে।
এ কারণেই বর্তমানে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে মসজিদে কাতার সোজা করার পাশাপাশি ইমাম-মুয়াজ্জিনরা গায়ে গায়ে মিশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেন।
মনে রাখতে হবেভয়াবহ কোনো পরিস্থিতি না থাকলে কিংবা কোনো সংক্রমণের ভয় না থাকলে মসজিদ কিংবা অন্য কোথাও নামাজে জামাআত অনুষ্ঠিত হলে তাতে মুসল্লিরা একে অপরের সাথে মিলে, ফাঁকা বন্ধ করে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো সুন্নত৷ দুজন মুসল্লির মাঝে একজন দাঁড়াতে পারে এ পরিমাণ ফাঁকা রাখা সুন্নাতের পরিপন্থী৷ হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। এ সম্পর্কিত কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো-
- নামাজে কাতার সোজা করা এবং পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ানো সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে-أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّواঅর্থ : আপনারা আপনাদের কাতার সোজা করুন এবং পরস্পর মিলে দাঁড়ান।' (বুখারি)
- বুখারি মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে-سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَاِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِن اِقَامَةِ الصَّلاةِ অর্থ : ‘কাতার সোজা করুন, কারণ কাতার সোজা করা নামাজ প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি-মুসলিম)
- নাসাঈ ও আবু দাউদের এক বর্ণনায় এসেছে-‘কাতার সোজা করুন, কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে দাঁড়ান, কাতারের মাঝে ফাঁক বন্ধ করুন, হাতগুলো সহজ ও স্বাভাবিকভাবে রাখুন, শয়তানের জন্য কাতারের মধ্যে খালি জায়গা বন্ধ করুন। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তাকে মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-مَنْ سَدّ فُرْجَةً فِى صَفٍّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَ بَنٰى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنّةِযে ব্যক্তি কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন।' (তাবারানি, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে মসজিদে জামাআতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শক্রমে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে জামাআতে দাঁড়াবে। এ পরিস্থিতিতে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে নামাজে দাঁড়ালেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে জামাআতে নামাজ আদায়ে রাষ্ট্রীয় ও চিকিৎসকদের মতামত মেনে জামাআতে নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ