জন্মের পূর্ববালীন কারণ-যেমন মায়ের কিছু নির্দিষ্ট রোগের কারণে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। মায়ের যদি জার্মানহাম, চিকেনপক্স, মাম্পস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, রুবেলা ভাইরাস, এইডস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় এবং সে সময় যদি তিনি গর্ভাবস্থায় থাকেন, তবে এর প্রভাবে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, মায়ের অপুষ্টি শিশুকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী করতে পারে। আমাদের মতো গরিব দেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বেশি। গর্ভাবস্থায় মা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খায়, তাহলেও অনেক ওষুধের কারণে ভ্রূণের অঙ্গ সৃষ্টিতে বাধার সৃষ্টি হতে পারে, ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মায়ের বয়স যদি কম হয় তাহলেও শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। আবার বেশি বয়স করে অর্থাত্ ৩৫ বছরের পর কোনো মহিলা মা হলে তার প্রতিবন্ধী শিশু জন্মগ্রহণ করার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় যদি মা ঘনঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হয় তবে শিশুর অক্সিজেনের অভাব ঘটে ও তার মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মায়ের শরীরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রবেশ হলে অথবা বাবা মায়ের রক্তে Rh উপাদান থাকলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হবে। আবার আমাদের মতো দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর অভাব এবং শিশু জন্মের সময় বেশি হলে বা জন্মের সময় মস্তিষ্কে কোনো আঘাত পেলেও শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে। নবজাতক যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়, শৈশবে যদি হঠাৎ করে পড়ে যায়, পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থ থাকলে ও পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি হলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিংবা অটিস্টিক শিশু কেন জন্ম নেয়! এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তঃসত্ত্বা মা যদি সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় যথেষ্ট পরিমাণ thyroid হরমোন তৈরি করতে না পারে তবে ঐ মায়ের গর্ভে অটিজমে আক্রান্ত শিশু জন্ম হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
আমেরিকার Houston Methodist Neurological Institute এর গবেষকরা কেন অটিস্টিক শিশু জন্ম নেয় সেই বিষয়ে একটি বিস্তারিত গবেষণা চালান এই গবেষণায় গবেষকদল ৪,০০০ মা এবং তাঁদের সন্তানের উপর জরিপ চালান বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে। গবেষকরা এই গবেষণায় দেখতে পান একটি শিশু জন্মের পর কেন অটিস্টিক হয়! তারা এর মূল কারণ হিসেবে আবিষ্কার করেন শিশু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় যদি যথেষ্ট পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন তৈরি না হয় তবে ঐ সব শিশু অটিস্টিক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
একই ধরনের আরেক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, গর্ভবতী মায়ের গর্ভে শিশু বৃদ্ধি হওয়ার সময় তার মস্তিষ্ক গঠনের মূল পর্যায়ে ভ্রূণ উন্নয়ন ত্রুটির কারণে একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এতদিন অনেকের ধারণা ছিল বংশগত কারণেই একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আসল ঘটনা তা নয়! অটিজম একটি গর্ভকালীন ত্রুটি এবং এটি সচেতনতার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব!
গবেষণায় আরও দেখা গেছে অটিজম আক্রান্ত শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায় যদি শিশুর জন্মের সময় মায়ের T4 যাকে thyroxine বলা হয় এর উৎপাদন কম হয়। সুতরাং মায়ের গর্ভে থাইরয়েড হরমোন সঠিক উৎপাদন নিশ্চিত করতেT3,T4অত্যন্ত গুরুত্ব পর্ণ এই দুইটি যদি নিশ্চিত করা যায় তবে শিশু অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
Erasmus Medical Centre এর ডাক্তাররা ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চালানো একটি জরিপে দেখেন, প্রতি ৪০৩৯ জন জনগণের মাঝে ৮০ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই জরিপে আরও দেখা যায় ১৫৯ জন মা তাঁদের শরীরে T4 এর স্বাভাবিক জটিলতায় ভুগছেন এবং ১৩৬ জন মা তাঁদের শরীরে মধ্যম আকারের T4 জটিলতায় ভুগছেন। যাই হোক সত্যি যদি এই গবেষণা অটিস্টিক শিশু জন্ম নেয়ার বিষয়ে সঠিক ধারণা দিয়ে থাকতে পারে এবং সেইঅনুযায়ী বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা চালান কি করে এই ধরনের শিশু জন্ম নেয়ার আশঙ্কা কমানো যাবে। তবে তা অত্যন্ত সুখবর বলেই ধারণা করা যায়। সূত্র: নিরাময় ২৪.কম