মোনাজাত কি? জামায়াত এ সালাত আদায় করার পরে ইমাম সাহেব যে দুই হাত তুলে দুয়া করেন, এইটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?? নবি করিম (সা:) তো নামাজ শেষে কিছু নির্দিষ্ট দুয়া করতেন, তিনি কি আসলেই দু হাত তুলে দুয়া করতেন? রেফারেন্স সহ উত্তর জানাবেন। কেননা এই সমাজ,জাতি খুবই দ্বিধাগ্রস্ত। ধন্যবাদ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

১য় প্রশ্নের জবাব: মোনাজাত অর্থ- মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা।

২য় ও ৩য় প্রশ্নের জবাব:

ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের বিষয় বুঝতে হলে তিনটি পয়েন্ট ভাল করে বুঝতে হবে। যথা-

১ ফরজ নামাযের পর মুনাজাত প্রমাণিত কি না?

২ সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না?

৩ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী?

১ম বিষয়: ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-

ক)হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুহাম্মদ! যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দুআ করবে- হে আল্লাহ!আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৩৩}

খ) ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন- হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায শেষে দুআ করতেন। {আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০}

গ)হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল সাঃ এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল সাঃ সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচেসুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। {আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪১১}

ঘ) হযরত সাদ রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯}

ঙ)হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ কে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪}

এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন।

২য় বিষয়: পূর্বের আলোচনা দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, রাসূল সাঃ ফরজ নামায শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এখন প্রশ্ন হল, রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করা প্রমাণিত কি না?

নিচে কয়েকটি হাদীস দেয়া হল। যা পরিস্কারভাবে সম্মিলিত দুআ করা ও সম্মিলিত দুআর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

১ হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সাঃ এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯}

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ