আমার খুব ভয় ভয় লাগে কেন এমন লাগে?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

ভয় রোগে আক্রান্ত ৭০ থেকে ৯০ ভাগ রোগী চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অতি শিগগির চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। দেরিতে চিকিৎসা করালে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। সাধারণত নবযৌবন বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই এ রোগ হয়ে থাকে। মহিলাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার পুরুষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ও সব জাতিই ভয় রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে রোগের উপসর্গের মধ্যে জাতিগত কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। ভয় যখন কোনো ব্যক্তিকে বারবার আক্রান্ত করে তখন তাকে বলা হয় ভয়রোগ। এ ক্ষেত্রে আরেকটি ভয় তাকে আক্রমণ করতে পারে এই ভেবেই মানুষ চিন্তিত থাকে। এই ভয় মানুষের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই অবস্থান করে ও তার জীবনকে নষ্ট করে দেয়। অতীতে কোনো একটি পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে থাকলে সেই পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে অনেকে ভয় পেয়ে যান। এ ধরনের ভয়কে আতংক বলে। যাদের মধ্যে আতংক বা ভয়রোগ রয়েছে তারা যে সব পরিস্থিতিতে ভয় পায় সে সব পরিস্থিতি প্রায়ই এড়িয়ে চলে। ফলে তাদের জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তারা সময় মতো কর্মস্থলে যায় না। এর ফলে ভালো কর্মীও হতে পারে না। মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও হয় অস্বাভাবিক ধরনের। ভয়ের কারণে মানুষের ঘুমের সমস্যা হয়। এর ফলে মানুষ ঘুমাতে পারে না ও রাতে জেগে থাকতে বাধ্য হয়। যাদের রাতকালীন ভয়রোগ আছে তাদের অবস্থা এতটাই করুণ যে, তারা ঘুমাতে যেতেও ভয় পায়। এমনকি রাতকালীন ভয় না থাকলেও ভয়সংক্রান্ত উদ্বিগ্নতার কারণেও ঘুমে সমস্যা হতে পারে। ভয়রোগে আক্রান্ত অনেকেই তাদের রোগের উপসর্গ নিয়ে খুব চিন্তায় থাকে। এমনকি ডাক্তার যদি বলেন, এ সব উপসর্গ মারাত্মক কিছু নয় তবুও তারা দুশ্চিন্তা করে। তারা অনেক সময় অকারণে নিজেদের হার্টের রোগী, নিউরোলজিক্যাল রোগী, কোনো খারাপ অসুখের রোগী মনে করে ভয় পায় ও প্রায়ই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য ছুটে যায়। অনেকে আবার ৭-৮ জন ডাক্তার দেখায় এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য কতগুলো অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে থাকে। আসলে এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ ভয়ের কারণে রোগীর এ সমস্যা দেখা দেয়, তাই ভয়রোগের চিকিৎসা করালে রোগী তার যাতনা বা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারে। একেবারেই সাধারণ কাজ থেকে প্রাথমিক ভয় সৃষ্টি হতে পারে, এ অবস্থায় মানুষ হঠাৎ ভয় পায় এবং তার মধ্যে ভয়ের উপসর্গ প্রকাশ পায়। এমতাবস্থায় মানুষ বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বা ভয় নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে। ভয়ের উপসর্গগুলো সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। উপসর্গগুলো আস্তে আস্তে বিলীন হওয়ার জন্য ঘণ্টাখানেক বা অনেক বেশি সময়ও লাগতে পারে। যারা ভয় পায় তারা ভয়ের সময় তাদের ভেতরের অসহ্য অস্থিরতার কথা বলে থাকে। অনেক সময় তারা পাগলামিও করতে পারে। অনেক সময় তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও গিয়ে থাকে। মানুষ প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়লেও ভয় সৃষ্টি হয়, মারাত্মক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, সন্তান জন্ম দেয়া প্রভৃতি কারণেও ভয় সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়া, কোকেন বা অন্য কোনো উত্তেজক ওষুধ ব্যবহারের ফলেও ভয়ের সৃষ্টি হতে পারে। ভয় মানুষকে হতভম্ব করে দেয়। এর ক্ষতিকর প্রভাব কী বা কতটুকু তা আগে থেকে বলা কঠিন। যারা কখনও ভয়ে আক্রান্ত হয়নি তারা অনেক সময় মনে করে যে, ভয় হচ্ছে কোনো বিষয়ে নার্ভাস বা উদ্বিগ্ন হওয়া, যা কম-বেশি সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। অনেক সময় কেউ ভয় পেলে তার মনের ভেতরে যে সব অস্থিরতা দেখা দেয় বাইরে থেকে তা বোঝা যায় না। যারা ২-৩বার ভয়ে আক্রান্ত হয়েছে তাদের জীবনে এর মারাত্মক কোনো প্রভাব পড়ে না। কিন্তু যারা বারবার ভয়ে আক্রান্ত হয় তাদের জীবনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। পরিবারের কোনো একজনের ভয়রোগ হলে পরিবারের অন্যদের জন্যও এটি দুঃখের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্য ভয়রোগীকে তার ভয়রোগ থেকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে বিফল হয়। রোগীর চিকিৎসার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত তাকে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। তাছাড়া অনেক সময় সাময়িক চিকিৎসা এবং থেরাপিস্টের পরামর্শেও উপকার পাওয়া যায়। ভয়রোগের উত্তম চিকিৎসা হল রোগী যে সব অবস্থা বা পরিস্থিতিতে ভয় পায় সে সব পরিস্থিতিতে তাকে নিয়ে যাওয়া। পরিবারের অন্য সদস্যরা এ কাজটি করতে পারে। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ভয়রোগে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। লেখক : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মনোরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল★ সংগৃহিত ইন্টারনেট★

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ