এ বিষয়ে ইসলামিক বা গ্রহণযোগ‍্য ব‍্যাখ‍্যা কী?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

ইসলামে হিলা বিবাহ বলতে কোনো বিবাহ নেই। তিন তালাকপ্রাপ্তা কোনো নারী যদি তার পূর্বের স্বামীর সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তবে তার সুযোগ নেই। তবে যদি কোনো রকম শর্ত, চুক্তি, পারিশ্রমিক ও সামাজিক প্রথা ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে এ পুরুষটি মৃত্যুবরণ করে কিংবা কোনো কারণে সে তালাক দিয়ে দেয় তবে নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর উক্ত মহিলা তার পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সমাজে হিলা বিবাহ নামে যে বিবাহ প্রচলিত তা শরীয়তসম্মত নয়। কারণ এ বিবাহের ভিতরে ডিভোর্স দিয়ে দেয়াটা একটা সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। সামাজিক রীতিতে ঐ লোকটির দু একদিন পর ডিভোর্স না দিয়ে কোনো উপায় নেই। আর ইসলামী আইনের স্বতঃসিদ্ধ একটি রীতি হলো, যে কাজ সামাজিক কিংবা দেশীয় রীতিতে পরিণত হয়ে যায় তা চুক্তি এবং শর্তযুক্ত কাজের পর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য হয়। সুতরাং প্রচলিত এ হিলা বিবাহ শরঈ নীতির আওতায় পড়ে না। যদিও এ ধরনের বিবাহোত্তর তালাক হয়ে গেলে এ মহিলা তার পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

(সূরা বাকারা; আয়াত ২৩০, আদদুররুল মুখতার ৫/৪৭-৪৮, তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৫৯, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ১৯/৩১৩)


ইসলামিক নিয়মে সহবাস করার পদ্ধতি


স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পাক পবিত্র থাকবে।

মুস্তাহাব হলো “বিসমিল্লাহ” বলে সহবাস শুরু করা।

সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করাও আল্লাহর রাসুলের সুন্নত।

সকল প্রকার দুর্গন্ধ জাতীয় জিনিস পরিহার করা উচিত। উল্লেখ্য যে, ধুমপান কিংবা অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আর এতে কামভাব কমে যায়। আগ্রহের স্থান দখল করে নেয় বিতৃষ্ণা।

কেবলামূখী না হওয়া।

একেবারে উলঙ্গ হবে না। 

বীর্যপাতের পর ততক্ষণাত বিচ্ছিন্ন হবে না, বরং স্ত্রীর বীর্যপাত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

বীর্যপাতের সময় মনে মনে নির্ধারিত দোয়া পড়বে। কেননা যদি সে সহবাসে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে সে শয়তানের প্রভাবমুক্ত হবে।

আমরা অনেকেই হয়ত ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক সহবাসের স্বাভাবিক নিয়ম বা পন্থা সম্পর্কে জানি না। এখানে এ বিষয়ে একটু ধারণা দেয়া হলো যদিও হাদিস থেকে বিভিন্ন আসনে সহবাস করার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তবে সহবাসের স্বাভাবিক পন্থা হলো এই যে, স্বামী উপরে থাকবে আর স্ত্রী নিচে থাকবে। প্রত্যেক প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই স্বাভাবিক পন্থা পরিলক্ষতি হয়। সর্বপরি এ দিকেই অত্যন্ত সুক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে আল কুরআনে।

আয়াতের অর্থ হলোঃ

“যখন স্বামী -স্ত্রীকে ঢেকে ফেললো তখন স্ত্রীর ক্ষীণ গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলো।”

আর স্ত্রী যখন নিচে থাকবে এবং স্বামী তার উপর উপুড় হয়ে থাকবে তখনই স্বামীর শরীর দ্বারা স্ত্রীর শরীর ঢাকা পড়বে। তাছাড়া এ পন্থাই সর্বাধিক আরামদায়ক। এতে স্ত্রীরও কষ্ট সহ্য করতে হয়না এবং গর্ভধারণের জন্যেও তা উপকারী ও সহায়ক। বিখ্যাত চিকিতসা বিজ্ঞানী বু-আলী ইবনে সীনা তার অমর গ্রন্থ “কানুন” নামক বইয়ে এই পন্থাকেই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে উলে­খ করেছেন এবং

‘স্বামী নিচে আর স্ত্রী উপরে’ থাকার পন্থাকে নিকৃষ্ট পন্থা বলেছেন। কেননা এতে পুংলিংগে বীর্য আটকে থেকে দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আনন্দঘন মুহুর্তটা পরবর্তিতে বেদনার কারণ হয়ে না দাড়ায়। তাই ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলুন আনন্দকে অনন্দ হিসেবে উপভোগ করুন। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে বিধান অনুযায়ী মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।

হযরত আলী (রাযি.) এর অসিয়ত :-

হযরত আলী (রাযি.) তাঁর অসিয়ত নামায় লিখেছেন যে, সহবাসের ইচ্ছে হলে এই নিয়তে সহবাস করতে হবে যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবেনা আর জন্ম নেবে নেককার ও সত সন্তান। এই নিয়তে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সাথে সাথে উদ্যেশ্যও পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।

আমাদের ইসলামী সমাজে প্রচলিত কিছু নিয়ম কানুন :-

ফলবান গাছের নিচে স্ত্রী সহবাস করবে না।

সহবাসের প্রথমে দোয়া পড়বেন।

স্ত্রী সহবাসের দোয়া :-

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

(বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রযাকতানা)।

‘আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন।” (সুত্র :- বুখারী ৬/১৪১, নং ১৪১; মুসলিম ২/১০২৮, নং ১৪৩৪)

তারপর স্ত্রীকে আলিঙ্গন করবেন। স্ত্রী যদি ইচ্ছা হয় তখন তাকে ভালোবাসা দিবে এবং আদর সোহাগ দিবে। চুম্বন দিবে। তখন উভয়ের মনের পূর্ণ আশা হবে সহবাস। তখন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবেন।

স্ত্রী সহবাস করার সময় নিজের স্ত্রীর রূপ দর্শন শরীর স্পর্শন ও সহবাসের সুফলের প্রতি মনো নিবেশ করা ছাড়া অন্য কোনো সুন্দরি স্ত্রী লোকের বা অন্য সুন্দরী বালিকার রুপের কল্পনা করিবে না। তাহার সাহিত মিলন সুখের চিন্তা করবেন না। স্ত্রীর ও তাই করা উচিৎ।

কখন সহবাস করা যাবে না

স্ত্রীর হায়েজ-নেফাসের সময় উভয়ের অসুখের সময় সহবাস করবেন না। চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে স্ত্রী সহবাস করবেন না।

স্ত্রীর জরায়ু দিকে চেয়ে সহবাস করবেন না। ইহাতে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়। বিদেশ যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস করবেন না। সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত বেশি কথা বলবেন না। নাপাক শরীরে স্ত্রী সহবাস কবেন না। উলঙ্গ হয়ে কাপড় ছাড়া অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করবেন না। জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস করবেন না। ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করবেন না। উল্টাভাবে স্ত্রী সহবাস করবেন না। স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস করবেন না। পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে স্ত্রী সহবাস করবেন না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

হিল্লা বিবাহ হলোঃ কোনো স্বামীর তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে এরকম বিবাহ পরিপূর্ণ হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হিল্লা বা তাহলীলকারী এবং যার ওপর তাহলীল করা হয়, উভয়কেই লা'নত করেছেন। এ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, হাদীসটি হল-

"হযরত উক্ববাহ ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলবো? তারা বললোঃ অবশ্যই হ্যাঁ আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন, হিল্লাকারী। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন।" (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৯৩৬ - তিরমিযি, হাদীস নং ১১২০)।

জনাব!, উক্ত হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী বলা যায়, হিল্লা বিবাহ হারাম এবং তা মূলত কোনো বিয়েই নয় বরং হিল্লা স্বামীর সাথে বিয়ে ও সহবাস হারাম। সে যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো, তালাকের পরে আপন স্ত্রী যদি পর নারী হয়েই যায় তবে তাকে আবার বিয়ে করা বৈধ হওয়া উচিৎ। কেননা আপন ভগ্নী, খালা-ফুফু ইত্যাদি ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করা জায়েজ। সে তো তখন ঐ গোত্রেই পরে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ