ইসলামি বিধান অনুযায়ী বিবাহের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে করতে হয় বিস্তারিত জানাবেন ? ধন্যবাদ।। 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

একজন ছেলে ও একজন মেয়ের একসঙ্গে থাকার সামাজিক বৈধতার অপর নাম বিয়ে। একেক ধর্মে একেকভাবে বিয়ের নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। ইসলামে বিয়ের মাসলা-মাসায়েল ব্যাপক। "তোমরা তাদের অভিবাবকদের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে করো, যথাযথভাবে তাদের মোহর প্রদান করো, যেন তারা বিয়ের দুর্গে সুরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে এবং অবাধ যৌনচর্চা ও গোপন বন্ধুত্বে লিপ্ত হয়ে না পড়ে।" (সূরা নিসা-২৫) বিয়ে সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) বলেছেন “ দুনিয়ার সব কিছুই (ক্ষনস্থায়ী) সম্পদ, তবে সব সম্পদের তুলনায় সতী-সাধ্বী রমণীই হলো সর্বোত্তম সম্পদ। (মুসলিম) আল্লাহ তাআলা প্রথম মানব ও প্রথম নবী হজরত আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করার পর তিনি একাকিত্ব অনুভব করলেন। আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর এই একাকিত্ব দূর করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গী হিসেবে আদি মাতা বিবি হাওয়া (আ.)–কে সৃষ্টি করলেন। এখান থেকেই শুরু নারী ও পুরুষের দাম্পত্য জীবনের। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহাপরিকল্পনায় বাবা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় এলেন। তাঁদেরই ঔরসজাত সন্তানেরাই পৃথিবী সাজিয়েছে। আর সেই সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এই বিয়ের রীতি। নারী ও পুরুষের যুগলবন্দী হওয়ার পদ্ধতিকে বাংলা পরিভাষায় ‘বিবাহ’ বা ‘বিয়ে’ বলা হয়। আরবিতে বলা হয় ‘নিকাহ’। বিয়ে সম্পাদনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘আক্দ’। প্রস্তাব, গ্রহণ, সাক্ষী ও দেনমোহর হলো ‘আক্দ’ সম্পন্ন হওয়ার মৌল তিন উপকরণ। এর লিখিত রূপ হলো ‘কাবিন’। অনেক সময় কাবিনে উল্লিখিত বা নির্ধারিত দেনমোহরকেও ‘কাবিন’ বলা হয়ে থাকে। কখনো দেনমোহর অনির্ধারিত বা ঊহ্য থাকলে ‘মোহরে মিছল’ বা ‘সমমান মোহর’ বর্তাবে। ‘মোহরে মিছল’ বা ‘সমমান মোহর’ হলো, অন্য কোনো মেয়েকে দেওয়া সমমানের মোহর। ‘মোহর’ হলো বিয়ের সময় বর কর্তৃক কনেকে প্রদত্ত সম্মানী; যার মাধ্যমে তিনি স্বামীর অধিকার লাভ করেন। মোহর নগদে প্রদান করা উচিত। উভয় পক্ষের সম্মতিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ বাকিও থাকতে পারে। তবে তা অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। জীবনে পরিশোধ না করলে মৃত্যুর পর ঋণ হিসেবেও সম্পদ বণ্টনের আগে পরিশোধ করতে হবে। বিয়ে বিধিবদ্ধভাবে রেজিস্ট্রি হওয়া আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। এতে পূর্বাপর অনেক অহেতুক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যায়। যেমন স্বামী বা স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করা, সন্তানের দায়দায়িত্ব ও ভরণপোষণ ইত্যাদি। বিবাহের চারটি শর্তাবলী ও রুকনঃ ১। পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, ২। উভয়ের সম্মতি, ৩। মেয়ের ওয়ালী থাকা এবং ৪। দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা। বিবাহের দু’টি রুকন হলো ঈজাব ও কবূল। (সূরা নিসা : ১৯) ইজাব ও কবুল বিয়ের মূল উপকরণ। উক্ত শর্তাবলীর কোন একটি পূরণ না হলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। ইসলামী বিবাহে বর, কনে এবং কনের অভিভাবকের (ওয়ালী) সম্মতির (কবুল) প্রয়োজন হয়। বৈবাহিক চুক্তিটি অবশ্যই কনের অভিভাবক (ওয়ালী) এবং বরের দ্বারা সম্পাদিত হতে হবে; বর এবং কনের দ্বারা নয়। ওয়ালী সাধারণত কনের পুরুষ অভিভাবক হন। প্রাথমিকভাবে কনের বাবাকেই ওয়ালী হিসেবে গণ্য করা হয়। অবশ্য বাবা ছাড়াও ওয়ালী হতে পারে। মুসলিম বিয়েতে ওয়ালীকেও অবশ্যই একজন মুসলিম হতে হবে। উল্লেখ্য যে, যে মেয়ের ওলী নেই, তার ওলী হবেন সরকার। বৈবাহিক চুক্তির সময় চাইলে কনেও সে স্থানে উপস্থিত থাকতে পারে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। বিয়ের পর ঘোষণা করে বা অন্য যে কোন পন্থায় সামাজিকভাবে তা জানিয়ে দিতে হবে, যাকে "এলান করা" বলা হয়। ইসলামী পদ্ধতিতে বিয়ের জন্য নিম্নোক্ত ৮টি কাজ আবশ্যক ১। পাত্র-পাত্রীর সম্মতি, ২। অভিভাবকের সম্মতি, ৩। পাত্র পাত্রীর মাঝে সমতা, ৪। নিয়ত শুদ্ধ করা, ৫। পাত্র-পাত্রী দর্শন, ৬। বিবাহের প্রস্তাব, ৭। সাক্ষী এবং ৮। বিয়ে পড়ানো। "স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ আর তোমরাও তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।" (সূরা বাকারাহ-১৮৭) আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, "যদি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা কোন মুসলিম যুবকের দ্বীন এবং ব্যবহার (চরিত্র) তোমাকে সন্তুষ্ট করে তাহলে তোমার অধীনস্থ নারীর সাথে তার বিয়ে দাও। এর অনথ্যায় হলে পৃথিবীতে ফিতনা ও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে।” [আল-তিরমিযি, আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। —(আল-তিরমিযি, মুসলিম পণ্ডিত নাসিরুদ্দিন আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলে সাব্যস্ত করেছেন।) ইসলাম ধর্ম মতে, কনে তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী বিয়েতে মত বা অমত দিতে পারে। একটি আনুষ্ঠানিক এবং দৃঢ় বৈবাহিক চুক্তিকে ইসলামে বিবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বর ও কনের পারষ্পারিক অধিকার ও কর্তব্যের সীমারেখা নির্ধারণ করে। ইসলামী বিয়ে হল সুন্নাহ বা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর আদর্শ। তাছাড়া ইসলামে বিয়ে করার জন্য অত্যন্ত জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিয়ে ইসলামী বিবাহের মৌলিক বিধিবিধান অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হয়।তথ্যসুত্রঃ বিজনেস আওয়ার/ আর আই

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

বিবাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো "সুন্নাতি বিবাহ"। এছাড়াও, বিবাহ অনেক ধরনের হতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো 'মাসনূন 'বিবাহ। মাসনূন বিবাহের প্রথম দিক হলোঃ বিবাহটি সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গান-বাদ্য, ভিডিও-অডিও মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না। (তাবরানী আউসাত, হাদীস নং ৩৬১২)।

দ্বিতীয়, সৎ ও আল্লাহভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৯০)।

তৃতীয়, বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বণ্টন করা। (বুখারী)।

চতুর্থ, বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দু‘আ পড়া। হরকত দিয়ে দিলাম, যাতে পড়তে সমস্যা না হয়।(اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْه" অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।" (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

পঞ্চম, স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করতে হবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন এই দু‘আ পড়ে নিতে হবে। (بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا) "অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন। (সহীহ মুসলিম)। বি.দ্র. উপরোক্ত দু‘আ না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। সুতরাং এটা পড়া জরুরী।

ষষ্ঠ, বাসর রাতের পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং গরীব-মিসকীনদের তাওফীক অনুযায়ী ওলীমা বা কোনো কিছু খাওয়ানোর আয়োজন করা। (সহীহ মুসলিম)। বিঃদ্রঃ কোনো পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং যৌতুক চাওয়া হারাম।

তবে, এবিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে - শর্ত আরোপ করে বর-যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা এক জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক।

সপ্তম, ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকীনদের দাওয়াত করা হয় না, সেটা নিকৃষ্টতম ওলীমা। (আবু দাউদ)।

বিঃদ্রঃ- ওলীমার মজলিসে হাদিয়া লেন-দেন ঠিক নয়। কেউ হাদিয়া দিতে চাইলে নিজের সুযোগ মত পাঠিয়ে দিবে, প্রচার করবেন না। গোপনে দিবেন, আর, এটাই হাদিয়ার সুন্নাত।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ