রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ব্যাপারে এমন প্রশ্ন করা অবান্তর৷ কেননা তিনি ছিলেন শরিয়ত আনয়নকারী ও ব্যাখ্যাদাতা৷ তিনি কি সাহাবী ছিলেন, তাবেঈ ছিলেন? তাবে তাবেঈ ছিলেন? নাকি মুসলিম ছিলেন? নবী যেইভাবে সাহাবী না হয়ে, তাবেঈ না হয়ে, তাবে তাবেঈ না হয় এসকল পরিচয়ের অণুমোদন দিয়ে গেছেন, ঠিক তেমনিভাবে রসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানাফি, শাফেঈ, মালেকি, হাম্বলী সকল মাযহাবের অণুমোদনদাতা ছিলেন। নিম্নোক্ত সহীহ হাদীসটি লক্ষ করুণ - ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﺩَﻋَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﻫُﺪًﻯ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺍﻷَﺟْﺮِ ﻣِﺜْﻞُ ﺃُﺟُﻮﺭِ ﻣَﻦْ ﺍﺗَّﺒَﻌَﻪُ ﻻ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﺩَﻋَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺿَﻼﻟَﺔٍ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦ ﺍﻹِﺛْﻢِ ﻣِﺜْﻞُ ﺁﺛَﺎﻡِ ﻣَﻦْ ﺍﺗَّﺒَﻊَ ﻻ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺁﺛَﺎﻣِﻬِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে পথ প্রদর্শন করে, যে ব্যক্তি তার পথ অনুসরণ করবে, তার সওয়াবে কমতি করা ছাড়াই তার সমপরিমাণ সওয়াব পথ প্রদর্শনকারী পাবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে, এর দ্বারা যে ব্যক্তি গোনাহে লিপ্ত হবে, তার গোনাহের মাঝে কম করা ছাড়াই এর সমপরিমাণ গোনাহ আহবানকারী পাবে।" . {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯১৬০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৭৪} . উপরোক্ত হাদীস দ্বারা রসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মাযহাব, মাদ্রাসা, দ্বীন মানার সহায়ক সকল কাজের অণুমোদন দিয়ে গেছেন। তাহলে সহীহ হাদীস মানলে উপরোক্ত হাদীস মানতে আপনাদের সমস্যা কোথায়? . যেই কারণে সাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈনগণ যেভাবে এই পরিচয় নিয়েও মুসলিম ছিলেন। সেই একই কারণে আমরাও হানাফি, শাফেঈ, মালেকি, হাম্বলী হয়েও মুসলিম। . আরেকটি উদাহরণ থেকে বলি। একটি মসজিদে যারা নামাজ আদায় করে সকলেরই পরিচয় নামাজি। . ★তবে এর মাঝে যিনি নামাজ পড়ান তাকে কি বলা হয়? - "ইমাম সাহেব।" ★যিনি আযান দেন তার কি পরিচয়? - "মুয়াজ্জিন সাহেব।" ★যারা নামাজ পড়েন তাদের কি বলা হয়? - "মুসুল্লি।" এক মসজিদে একই কাতারে নামাজরত নামজিদের পরিচয় তিন রকমের। কেন সকলের পরিচয় শুধু নামাজি হলে দোষ কি? . আরেকটু সহজ ভাষায় বলি। আমাদের দেশের বিভিন্ন মানুষের বাড়ী বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। তাই বলে কি কেউ প্রশ্ন করেন, ভাই আপনি ঢাকাবাসী না বাংলাদেশী? আপনি সিলেটবাসী না বাংলাদেশি? . সামান্য একটা দেশের ৬৪ টি টা জেলা হতে পারে। আর ইসলাম এতবড় একটি মহাসমুদ্র এর শাখা প্রশাখা, নদ-নদী থাকতে পারেনা? সকল নদী যেভাবে গিয়ে সাগরে মিলিত হয়। তেমনি ইসলামের সকল সহীহ পথ, মাযহাব গিয়েও জান্নাতে মিলিত হবে ইনশাআল্লাহ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী। আর ইসলামী ফিকহের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও পরিচিত চারটি সুন্নি মাযহাবের একটি “হানাফী মাযহাব”এর প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ আর ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাহলে তিনি কি করে হানাফী মাজহাবের অনুসারী হয়?
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সকল আম্বিয়া সকল মানুষের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছেন। যাতে ইবরাহীম (আঃ)-এর বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান স্পষ্ট হয়। অবশ্য নীতিগত দিক দিয়ে সকল নবীর শরীয়ত ও দ্বীন একই ছিল। যাতে রিসালাত সহ তাওহীদ ও পরকাল ছিল মৌলিক বিষয়।
হযরত ইব্রাহীমের পরে যত নবী রাসূল এসেছেন, তাঁরা সবাই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর থেকেই এসেছেন। সব রাসূল এমনকি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পূর্বে ইব্রাহীম (আঃ)-এর হানিফ ধর্মের একেশ্বরবাদের অনুসারী ছিলেন।
পবিত্র কোরআনের আয়াতঃ অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, আপনি ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করুন। এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা নাহলঃ ১২৩)
জনাব! যারা দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয় কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত সহ প্রতিটি বিষয়েই কোরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস সম্মত আকীদা পোষণ করে তারাই নাজাত প্রাপ্ত দল। অর্থাৎ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত। আর যাদের আকীদা এর বিপরীত তারা গোমরাহ বাতিল ও চির জাহান্নামী।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, অতি শীগ্রই আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন সাহাবায়ে কিরামগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যে একটি দল নাযাত প্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি এবং আমার সাহাবা গণের মত ও পথের উপর যারা কায়েম থাকবে, তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) ইহা বর্ণনা করেন। আর মুসনাদে আহমদ ও আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে।
মূলতঃ সে দলটিই হচ্ছে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত।
আহল শব্দের অর্থঃ পরিবার, বংশ, অনুসারী ইত্যাদি। সুন্নাত শব্দের অর্থঃ তরীকা, পথ, পদ্ধতি, নিয়ম, চরিত্র, আদর্শ, রীতিনীতি ও স্বভাব। আর আল জামাআত অর্থঃ দল। সুতরাং ইসলামের সঠিক মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতর শাব্দিক ব্যাখ্যা হলো আহলে সুন্নাত অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত বা তরিকা অর্থাৎ আকীদা ও আমলের অনুসারীগণ। আর আল জামাআত দ্বারা সাহাবায়ে কেরামগণকে বুঝায়। অতএব, যেসব মুসলমান আকীদা ও আমলের ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অকৃত্রিম অনুসারী তাঁদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বলে।