শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Sanjoyrand1

Call

ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগদাতা চাকরি প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সর্ম্পকে অবগত হন। এই প্রক্রিয়া শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রার্থী তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বর্ণনার মাধ্যমে নিজেকে পদের উপযুক্ত হিসেবে প্রমানের সুযোগ পান। সংশ্লিষ্ট পদ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজের জ্ঞান প্রকাশের একটা ভাল পদ্ধতি হচ্ছে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া। নিয়োগদাতা প্রার্থীর মাঝে কি খোজেঁন সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া মনস্তাত্বিক চাপপূর্ণ হতে পারে। কিন্ত এই চাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য জানতে হবে যে নিয়োগদাতা কী খুজঁছেন তাই, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নানা ইতিহাস দিক সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কোম্পানী, কোম্পানীর পণ্য এবং প্রত্যাশিত পদ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা থাকতে হবে। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কোম্পানীর চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আপনাকে আত্মবিশ্বাসী এবং কোম্পানীতে আপনার কতটুকু অবদান রাখতে সক্ষম তা বোঝানোর সামর্থ থাকতে হবে। আপনাকে পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। পূর্ব প্রস্ততি: সাক্ষাৎকারের মনস্তাত্বিক চাপ কমানোর আর একটা উপায় হচ্ছে পূর্ব প্রস্ততি গ্রহণ। চাকরিদাতা আপনার জীবন বৃত্তান্ত পর্যালোচনা করে দেখবেন যে এতে আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, লক্ষ্য ইত্যাদিও গুণাবলীর যথাযথ প্রতিফলন ঘটেছে কিনা। আপনাকে অনেক খোলামেলা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এবং এসব প্রশ্নের উত্তর যেন যথাযথ হয় তার প্রস্ততি নিতে হবে। এছাড়া নিয়োগদাতা কিছু সাধারন প্রশ্ন করতে পারেন যার উত্তর সম্পর্কে আপনাকে পূর্ব হতেই ভাল ধারণা নিয়ে রাখতে হবে এবং উত্তরের মান উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্ত উত্তর মুখস্ত করবেন না। আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে উত্তর যেন আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করে। ইন্টারভিউ এর সময় শুধু চাকরিদাতা একাই প্রশ্ন করবেন তা নয় আপনার কাছেও পাল্টা প্রশ্ন আশা করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকেও পাল্টা প্রশ্ন করতে হবে। যদি ইতোমধ্যে সব আলোচিত হয়েও থাকে তাহলেও অতিরিক্ত কিছু আলোচনায় আনতে হবে যাতে করে এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পদ ও প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে আপনার আগ্রহ ও জ্ঞানের পরিচয় দিতে পারেন। তবে সব প্রশ্ন চাকরি সংক্রান্ত হতে হবে। সাক্ষাৎকার নির্দেশিকা: সাক্ষাৎকার এর কিছু আগে উপস্থিত হওয়া: সাক্ষাৎকারের ১৫ মিনিট আগে উপস্থিত হবেন। তবে চিন্তা করার সময় হাতে থাকবে। হাতের ঘাম মোছার সময় থাকবে এবং লবি থেকে কোম্পানীর চলতি তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনার নির্বাচকেরা দেখবেন, আপনার কাছে তাদের সময়ের দাম আছে। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পূর্ব ধারণা: নির্বাচকদের সম্পর্কে জানতে হবে (পদবীসহ) যেমন-জনাব, ডাক্তার ইত্যাদি। কোম্পানীর মূল উৎপাদিত পণ্য ও সেবাসমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। কোম্পানীর গঠণ (বিভাগ, প্রধান, কোম্পানী ইত্যাদি) কোম্পানীর বর্তমান অবস্থা খবরাখবর, গ্রাহক এবং প্রতিদ্বন্দী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। এসব আপনি কোম্পানীর ওয়েবসাইট থেকে বার্ষিক রিপোর্ট বা কোম্পানীর পুস্তিকা থেকে জানতে পারেন। সব সময় জীবন বৃত্তান্ত সাথে রাখতে হবে: তা প্রমাণ করবে যে আপনি সাক্ষাতের জন্য প্রস্তত। এখান থেকে নির্বাচকরা প্রয়োজনীয় কোন কিছু নোট করতে পারবেন। জীবন বৃত্তান্ত এমন হবে যেন নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে: নিজের সমস্ত গুণাবলী এটার বিষয় হবে। নির্বাচকদের সামনে নিজেকে খুব সহজভাবে উপন্থাপন করতে হবে। বাচনভঙ্গী সর্ম্পকে সতর্কতা: নির্বাচকদের সামনে সতর্কতার সঙ্গে বসুন। যেন বসার স্থান একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে শোভন দুরত্ব থাকে। হাসি মুখে বসুন। বিব্রতবোধ না করা: নির্বাচকমন্ডলীও মানুষ। অতএব তারাও অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। মূলত নির্বাচকদের অস্বস্তি একটা ভাল দিক। এটা প্রমান করে আপনি ভালভাবে পরীক্ষা দিচ্ছেন। অশোভন কোন কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- আঙ্গুল মোচড়ানো, কলম নাড়ানো, হাত-পা দোলানো। দৈহিক ভাষা গুরুত্বপূর্ণ: স্পষ্ট দৃষ্টি বিনিময় করা, উষ্ণ বা মৃদু হাস্যমুখ এবং করমর্দন সাহায্য করতে পারে আপনার বিব্রতবোধ কাটানোর জন্য । ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী ভাবমূর্তি উপস্থাপন করতে পারেন। নির্বাচকদের বিনোদনকারী হবেন না: সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের কাছে কৌতুকময় অথবা বিনোদনকারী হওয়ার চেষ্টা করবেন না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা না বলা: আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। কিন্ত চাকরী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দৈণ্যতা প্রকাশ করবেন না। সেক্ষেত্রে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত কথা না বলাই ভাল। সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীর মত অনুসরন করা: সাক্ষাৎকারের উর্ধ্বে না যাওয়া, মূল বিষয়ের দু একটি প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পারতপক্ষে সাক্ষাৎকার গ্রহণ কারীর মতামত অনুসরন করা। ব্যক্তিগত ও অনুযারী প্রশ্ন সম্পর্কে সচেতন থাকা: এটা নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ওপর। অবশ্যই মেজাজমর্জির স্থিরতায় কিছু সাক্ষাৎকারদাতা এ সম্পর্কে সচেতন থাকেন, অতএব সচেতন হোন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন প্রশ্নগ্রলো। এতে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। সুনির্দিষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা: খোলাখুলি ও সৎ হোন। কিন্ত অনভিজ্ঞতা ও দুর্বলতার জন্য কখনো ক্ষমাপ্রার্থী হবেন না। আপনি আত্মবিশ্বাসী হোন, তবে অতিমাত্রায় নয়। আপনি নবীন হতে পারেন চাকরিবাজারে, আপনি অনভিজ্ঞও হতে পারেন। আপনি কোন প্রকার বদঅভ্যাস বা অনভ্যাস দোষ অতীত কর্মচারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন না। ব্যক্তিস্বার্থে নয়, কোম্পানীর স্বার্থে নয়, প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কোম্পানীর জন্য দক্ষতা অর্জন করবেন এটাই প্রকাশ করুন। অপেক্ষা করুন বেতন সম্পর্কে প্রশ্ন উপস্থাপনের জন্য: মূলত সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের বিষয় এটি। বেতন এবং তার লাভজনক দিকগুলো প্রথম সাক্ষাৎকার নাও থাকতে পারে। বেতনের গুরুত্ব সকলেরই জানা। এ প্রসঙ্গে আপনার অনুভূতি ব্যক্ত না করাই শ্রেয়। এটা হতে পারে সমঝোতার মাধ্যমে। যদি আপনার মতানুযায়ী বেতন প্রসঙ্গ আসে তবে বুঝতে হবে চাকরিদাতা আপনার কর্মেও আগ্রহ দেখছেন, নির্দিষ্ট অবস্থান এবং চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে। ঘাবড়ে যাবেন না: বলার পূর্বে চিন্তা করুন নিরবতা এবং সহনশীলতা আপনাকে সাহায্য করবে। সহনশীলভাবে সময় নিয়ে উপস্থাপন করুন। কারণ এটা দর্শনীয়। কর্মগ্রহীতারা আপনার মতামতকে ধৈর্য্য সহকারে শোনার এবং মত গ্রহণ করার জন্য ভাববার সময় দেবেন। নিশ্চিত করুন প্রতিষ্ঠানের জন্য আপনি কী করতে পারবেন: এটার মানে হচ্ছে, আপনি আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন প্রতিষ্ঠানে / কোম্পনীতে। তবে বাণিজ্যিক গোপনীয়তা বা পূর্বপরিচিতি উল্লেখ না করাই ভালো। নিজস্ব দক্ষতা এবং উল্লেখযোগ্য কাজগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। নতুন সংকটকে দূর করার জন্য এবং যোগাযোগ সুষ্পষ্টকরণ, আত্মসম্পর্ক উন্নয়ন, নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করার জন্য প্রস্তত থাকুন। প্রস্তত করা উত্তর বা মুখস্ত বুলি না আওড়ানোই ভালো: অনেক কর্মপ্রার্থী কিছু প্রস্তত করা উত্তর সাক্ষৎকার প্রশ্ন বা উত্তরপত্র গাইডলাইন হাতে পেয়ে থাকেন, এটা ফলপ্রসূ নয়। যেমন-অনেকে বলেন, আমি মানুষের জন্য কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ব্যতিক্রমী কিছু বলতে চেষ্টা করুন। পূর্বের চাকরিদাতাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য না করা: পূর্বের কর্মকর্তা, কর্মচারী বা কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। তবে যা জানেন সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করুন। আপনার আচরনবিধি লক্ষ্য করুন: চাকরিদাতা আগ্রহভরে লক্ষ্য করেন তাদের প্রতি আপনার ব্যবহার স্পষ্ট কিনা। যদি আপনি আপনাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন তবে তা সম্ভব। আপনার জ্ঞান যদি বিনয়ী বা নম্র আচরন লব্ধ হয় তবে তা উপস্থাপনে সহায়ক হবে। প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তত থাকা চাই: প্রায় প্রত্যেক চাকরিদাতা প্রশ্ন শোনার জন্য ইচ্ছে পোষন করে। তাই আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তত থাকতে হবে। তবে আপনার প্রশ্ন হতে হবে চাকরির ক্ষেত্র বা কোম্পানীভিত্তিক তথ্য নিয়ে। আপনার প্রশ্নের ভেতর দেরিতে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া, ছুটির আবেদন ইত্যাদি না থাকাই বাঞ্ছনীয়। এগুলো পরবর্তীকালে সময় নিয়ে করা যায়। টেলিফোনে সাক্ষাৎকার: যদি আপনি চাকরিপ্রাপ্তির জন্য অন্য দেশ বা শহরে আবেদন করেন তবে সেক্ষেত্রে টেলিফোনে প্রাথমিক সাক্ষাৎকারপর্ব সেরে নিতে পারেন। টেলিফোন সাক্ষাৎকারটি আপনাকে কোনো স্থির ধারণা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি না দিলেও যাতায়াত খরচ সাশ্রয় হবে। দ্রুত চাকরির প্রস্তাব আশা না করাই ভালো: চাকরির সিদ্ধান্ত সাধারনত সাক্ষাৎকারের বেশ কিছুদিন পর বা সপ্তাহ কয়েক পর জানানো হয় তাই তাৎক্ষনিকভাবে আপনাকে কোন বেতন প্রস্তাব করা হলে চিন্তা করার জন্য ২/১ দিন সময় চেয়ে নিতে পারেন। সাক্ষাৎকার শেষে: সাক্ষাৎকার দীর্ঘায়িত করবেন না এবং দ্রুত শেষ করুন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে ধন্যবাদের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার শেষ করুন। নিজের প্রতি স্বচ্ছ থাকুন: আপনি যা নন তা করবেন না। তাতে আপনার মৌলিকত্ব নষ্ট হতে পারে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ