বিষমুক্ত আম খাওয়ার উপায় কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
mahfuz08

Call

বিষমুক্ত আম যেভাবে পেতে পারেন ক্রেতারা ড. মো: শরফ উদ্দিন বর্তমানে দেশের সব জেলাতেই কম-বেশি আমের চাষাবাদ হচ্ছে। তবে বাণিজ্যকভাবে আমের চাষাবাদ দেশের উত্তর ও পশ্চিমের জেলাগুলোতে এখনও সীমাবদ্ধ। মাটি ও আবহাওয়াগত কারণে সুস্বাদু ও ভাল গুণগত মানসম্পন্ন আম উত্পাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলাতে। তবে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ এতে কোনো সন্দেহ নেই। এদেশে মোট উত্পাদিত আমের প্রায় ৫০-৬০ ভাগই উত্পাদন হয় এই দুই জেলাই। অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে কোনো জেলায় এখন গুটি আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে, কোনো জেলায় আরও কিছুদিন বাকি আছে এবং কোথায় আবার মাঝামাঝি অবস্থায়। আবার বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়ও আলাদা। প্রতিবছর আমের মৌসুমে সবার দৃষ্টি থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার আমের উপর। বিশেষ করে ক্রেতাদের নজর থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আমের উপর। আম বাজারজাতকরণ শুরু হলে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে চলতে থাকে আমের উত্পাদন স্থান ও জাত নিয়ে প্রতারণা। আম যে স্থানের হোক না কেন রাজধানীসহ অন্যান্য জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে কেনাবেচার সময় সব আমেই হয়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা রাজশাহীর আম। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষের ভাল জাতের আম চিনতে পারেন সহজেই কিন্তু অন্যান্য জেলার মানুষের পক্ষে ভাল আম চেনা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ফলে অনেকে বিক্রেতার কথা বিশ্বাস করে অন্য এলাকার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা রাজশাহীর আম হিসেবে কিনে থাকেন। ফলে প্রতিবছর না জেনে প্রতারণার স্বীকার হন ক্রেতারা। তবে আমের প্রধান জাতগুলোর পরিপক্বতার সময় সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলেই সহজেই খুঁজে পেতে পারেন, খেতে পারেন ভাল জাতের বিষমুক্ত আম। এছাড়াও বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আম, লিচুসহ অন্যান্য ফল পাকানোর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের দেশীয় ফলসমূহ অসাধু কিছু ফল ব্যবসায়ীর কারণে হারিয়ে ফেলছে ফলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সময়ে যে জিনিসটি ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো বিভিন্ন ফলে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অপপ্রয়োগ। অপরিপক্ব ফল পাকানোর জন্য, আকর্ষণীয় করার, দ্রুত পচনের হাত হতে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অতীতে ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাইপেনিং হরমোন ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম কার্বাইড এবং ইথোফোনসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য (পত্রিকায় প্রকাশিত) ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষমুক্ত আম খাওয়ার জন্য প্রথমে জানা দরকার কোন জাতের আম কখন পরিপক্ব হয়, সংগ্রহ করা হয় এবং বাজারে পাওয়া যায় । কারণ অপরিপক্ব আমে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য সেপ্র করে আমকে আগাম পাকানো অথবা একসাথে পাকানো হয়। মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন আমে বিভিন্ন হরমোন ও রাসায়নিকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং অতি আগাম আম না খাওয়াই ভাল। আমাদের দেশের মানুষ সচরাচর যে জাতগুলো বেশি পছন্দ করে সেগুলো হলো- বারি আম-১, গোপালভোগ, খিরসাপাত, হিমসাগর, ল্যাংড়া, বারি আম-২ (লক্ষণভোগ), বারি আম-৩ (আম্রপালি), বারি আম-৪ (হাইব্রিড), বারি আম-৫, বারি আম-৬ (বৌভুলানি), বারি আম-৭ (আপেল আম), ফজলি ও আশ্বিনা আম। এছাড়াও কিছু জাত রয়েছে তবে সেগুলো স্থানভেদে পাওয়া যাবে যেমন- রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙ্গা এবং দিনাজপুর জেলায় সূর্যপুরী। এদেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কোনো ভাল জাতের আম বাজারে পাওয়া যায় না বা যাবে না। তবে এই সময়ে বাজারে গুটিজাতের আম পাওয়া যাবে। বারি আম-১ (মহানন্দা), বারি আম-৫ ও গোপালভোগ এই জাতগুলো প্রকৃতিগতভাবে পাকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ হতে জুন মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে, বারি আম-২ (লক্ষণভোগ), খিরসাপাত ও হিমসাগর আমগুলো পাকে জুন মাসের দ্বিতীয় হতে চতুর্থ সপ্তাহে, ল্যাংড়া, বারি আম-৩ (আম্রপালি), বারি আম-৬ (বৌভুলানি) এবং বারি আম-৭ (আপেল আম) আমগুলো পাকে জুন মাসের তৃতীয় হতে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে, ফজলি, বারি আম-৪, হাঁড়িভাঙ্গা এবং বারি আম-৮ আমগুলো পাকে জুলাই মাসের দ্বিতীয় হতে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত এবং আশ্বিনা জাতটি পাকে আগস্ট-সেপ্টেবর মাসে। সুতরাং জুন মাসে বাজারে বিভিন্ন জাতের আমের সরবরাহ থাকে সবচেয়ে বেশি। তবে অবস্থানগত পার্থক্য ও আবহাওয়াগত পরিবর্তনের (তাপমাত্রা বেশি হলে) কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই কোনো কোনো জাত পাকতে পারে তবে এটি হবে ব্যতিক্রম। উল্লেখিত সময়ে ক্রেতাগণ খুব সহজেই ভাল জাতের আম কিনতে পারবেন ও আপনজনকে অনায়াসেই পাঠাতে পারবেন নিজের পছন্দের আম। আম কেনার সময় আঘাতপ্রাপ্ত, বেশি নরম ও কালো দাগযুক্ত আম না কেনাই উত্তম। সুতরাং পছন্দনীয় আমের পরিপক্বতার সময় সম্পর্কে মোটামুটি একটু ধারণা থাকলে খুব সহজেই ভাল আম খাওয়া যাবে। অপরপক্ষে আম পাকানোর জন্য ব্যবহূত বিভিন্ন হরমন ও বিষাক্ত কীটনাশকমুক্ত আম খাওয়া সম্ভব। আরেকটি পরামর্শ হল বেশি আম কেনার ক্ষেত্রে একটি আম খেয়ে তারপর কেনা ভাল। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল, চলতি মৌসুমে ভারতীয় আম ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারত হতে বিভিন্ন জাতের আম এদেশের বাজারকে নষ্ট করতে পারে। যে কারণে ভারতীয় আম নিষিদ্ধ হয়েছে সেই পোকার আক্রমণ এখনও বাংলাদেশের আমে দেখা যায়নি। সুতরাং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উচিত বিশেষ করে চলতি মৌসুমে ভারতীয় আম যেন এদেশে বাজারজাত না করা হয় অথবা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর এদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত। পরিশেষে বলা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের দেশের প্রতি ও দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা, সাধারণ ক্রেতাসাধারণের সচেতনতা ও বিচক্ষণতা পারে আমসহ বিভিন্ন ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষ প্রয়োগ বন্ধ করতে। লেখক:কৃষিবিদ, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সুত্রঃ হেডিংঃ বিষমুক্ত আম যেভাবে পেতে পারেন ক্রেতারা লেখকঃ ড. মো: শরফ উদ্দিন পত্রিকাঃ দৈনিক ইত্তেফাক তারিখঃ বুধবার ০৪ জুন ২০১৪, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২১, ০৫ শাবান ১৪৩৫ বিভাগঃ দৃষ্টিকোণ লিন্কঃ http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDZfMDRfMTRfMV81XzFfMTM1NTQ2

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ