শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
shohanrand1

Call

প্রথমেই দেখা যাক ভালোবাসা কোথায় থাকে, হার্টে না মস্তিষ্কে? যদিও আমারা ভালোবাসাকে প্রকাশ করার জন্য যে হার্ট চিহ্ন ব্যাবহার করি, গবেষণায় দেখা গেছে ভালোবাসার অবস্থান হার্টে না, মস্তিস্কই হচ্ছে ভালোবাসার প্রধান স্থান। কেউ যখন ভালোবাসার মত কাউকে দেখে, তখন থেকে এক সেকেন্ডের পাচ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেই ভালোবাসার অনুভূতির জন্য যে চেইন বিক্রিয়ার দরকার হয় তা শুরু হয়ে যায়, আর এই পক্রিয়াতে অংশ নেয় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ। মস্তিকের ভিন্ন ভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, যাদেরকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন কিছু কিছু পদার্থকে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটার, কাউকে বলা হয় হরমোন আবার কেউ কেউ হচ্ছে এক প্রকার প্রোটিন। এই পক্রিয়া যে শুধু মানব মস্তিকেই ঘটে তা না, অন্য অন্য প্রাণীর মস্তিকেও একই রকম ঘটনা ঘটে। তাই বলা যেতে পারে অভিব্যাপ্তির কারনে মানব জাতির ক্ষেত্রেই হইত ভালোবাসার পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে। পরিপূর্ণ প্রকাশ এই করনে বলছি যে, অন্য অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে ভালোবাসার জন্য যে জৈব রাসায়নিক পক্রিয়া ঘটে তা হয়তো শুধু বংশ বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন কাজে লাগে না। কিন্তু মানুষের ভালোবাসার প্রকাশ শুধু বংশ বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ নয়। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের যেকোনটির মাধ্যমে মানুষ যখন তার ভালোবাসার মানুষটির উপস্থিতি অনুভব করে তখন ওই ইন্দ্রিয়গুলো সেই সংকেত মস্তিষ্কের যে অংশে প্রেরন করে তাকে বলা হয়, cerebral cortex, এবং তৎক্ষণাৎ এই সংকেত মস্তিকের অন্য অন্য যে অংশগুলো ভালোবাসার অনুভূতির জন্য দায়ী সেই অংশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিকের যে অংশ খুব দ্রুত ভালবাসার প্রকাশের জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে তাকে বলা হয়, caudate nucleus ইংরেজি C অক্ষরের মত দেখতে এই অংশকে রেপটালিয়ান ব্রেইনও বলা হয়। মস্তিষ্কের এই অংশ খুবই পুরাতন কারন, যখন থেকে প্রাণীর মধ্যে মস্তিষ্ক আবির্তভাব হয় তখন প্রথমেই এই অংশ তৈরি হয়। যেকোনো প্রাণীর যৌন চাহিদা পুরনের জন্য এই অংশকেই দায়ী করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশ যখন সক্রিয় থাকে তখন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষটির উপস্থিতি, তার মধ্যে একধরনের অনন্দের অনুভূতি তৈরি করে এবং এই আনন্দের অনুভূতি আরও বেশি বেশি পেতে মন চায়। মানুষ যখন কারও প্রেমে পড়ে তখন মস্তিকের এই অংশ খুব বেশি সক্রিয় থাকে অন্য দিকে যে অংশ অবসাদের জন্য দায়ী সেটা পরিপূর্ণভাবে নিস্ক্রিয় থাকে। মস্তিষ্কের অন্য যে অংশ ভালবাসার অনুভূতির জন্য দায়ী তাকে বলা হয় ventral tegmental area, এই অংশ মূলত ডোপামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে যা মানুষের মধ্যে অনন্দের অনুভুতির তৈরি করে একই সাথে কোন বিষয়ে মনকে কেন্দ্রীভূত করার কাজটিও করে থাকে। ভালোবাসার শুরুতে যে জৈব রাসায়নিক পক্রিয়া ঘটে সেটা দিন দিন পরিবর্তিত হতে থাকে এবং ভালোবাসার বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেহের জৈব রাসায়নিক পক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসতে থাকে। দেহের এই পক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার জন্য ভালোবাসাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। যৌন আবেদনকেই ভালোবাসার প্রথম পর্যায়ের কারন হিসেবে দেখা হয়, যদিও আপনাদের কেঊ কেঊ হয়ত এই কারনের সাথে দ্বিমত পেশন করতে পারেন। এই পর্যায়ে hypothalamus and pituitary গ্রন্থি থেকে যৌন হরমোন নিঃসরণ করে এবং মানুষের মনে সে অনুযায়ী অনুভুতির তৈরি হয়। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার মধ্যে intense romantic love এর তৈরি হয়, এবং তখন তার সকল মনোযোগ চলে যায় ভালোবাসার মানুষটির দিকে, সে তখন সবসময় তার ভালোবাসার মানুষটির কথা চিন্তা করতে থাকে, এবং সে ভালোবাসার মানুষটির মধ্যে শুধু সুন্দর গুণাবলী দেখতে পায়, ভালোবাসার মানুষের কিছুই তার খারাপ লাগে না। যে কারনে ভালোবাসার এই পর্যায়ে এক সাথে দুই তিন জনের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব হয় না। ভালোবাসার এই পর্যায়ে ডোপামিন এবং norepinephrine প্রধান ভূমিকা পালন করে, এছাড়াও স্ট্রেসের জন্য যে হরমোন দায়ী তার নিঃসরণও বেড়ে যায় যে কারন ভালোবাসার মানুষটিকে দেখলে অথবা তার কথা চিন্তা করেলে মানুষের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এই পদার্থগুলো খুবই এডিকটিভ, এই পদার্থগুলোর কারনে ভালোবাসার এই পর্যায়ে মস্তিষ্কের যে অংশগুলো সক্রিয় হয়, সেই একই অংশ সক্রিয় থাকে একজন ককেইন ব্যাবহারকারির মস্তিষ্কে। অন্য যে কোন ড্রাগের মত এই পর্যায়ের ভালোবাসার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন- ড্রাগ যেমন যত বেশি নেয়া হয় তত বেশি নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, ঠিক একইভাবে ভালোবাসার এই পর্যায়ে মানুষ যত বেশি ভালোবাসা পায় তত বেশি ভালোবাসা পেতে মন চায়। আবার ভালোবাসার মানুষটি চলে গেলে খুব যন্ত্রণা অনুভূত হয় যেমনটা ড্রাগ নেওয়া বন্ধ করে দিলে হয়ে থাকে। এই পর্যায়ে যদি কোন সম্পর্ক ভেঙে যায় তার অনেক দিন পরেও যদি ভালোবাসার মানুষ দুটি একে অপরের কাছে আসে তখন তাদের মধ্যে ডোপামিন এবং norepinephrine নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং পুনরায় intense romantic love এর সুচনা হয়। ভালোবাসার তৃতীয় পর্যায়কে বলা হয় attachment যখন প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে বিয়ে করে এবং সন্তান জন্ম দেয় তখন তাদের মধ্যে বন্ধন অনেক শক্ত হয়, আর এর কারন হিসেবে ধারণা করা হয় hypothalamus and pituitary গ্রন্থির oxitocine এর মত এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করা। আর এই হরমোন সন্তান জন্ম দেয়ার সময় জরায়ুর সংকচনের জন্য দায়ী এবং এই হরমোনের কারনেই মাতৃ স্তনে দুগ্ধের সঞ্চালন হয়। যেকারনের মা এবং সন্তানের মধ্যে বন্ধন অনেক শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। আর এই যদি হয় ভালোবাসার জৈব রাসায়নিক ব্যাখ্যা তাহলে আমারা কেমিক্যাল থেরাপি দিয়ে মানুষের মনে ভালোবাসা তৈরি করতে পারব? অথবা কোন সম্পর্ক ভেঙে গেলে কেমিক্যাল থেরাপি নিয়ে নিজেকে কষ্ট থেকে দূরে রাখতে পারব? হয়তো কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে কিন্তু পুরোপুরি সম্ভব কিনা আমার জানা নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ