শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

১৯৪৭ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশের দখলদারিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর হিন্দু ও মুসলমান এই দুই ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত এই দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলমান পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মূলত দু’টি আলাদা ভূ-খন্ডে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ হলো পশ্চিম পাকিস্তান এবং অন্যটি আমাদের বাংলাদেশ-তৎকালীন সময়ে যার নাম ছিল পূর্ব-পাকিস্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দেশ হওয়া সত্ত্বেও শুরু থেকেই গোটা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী। রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজকর্ম, অফিস, আদালত সবকিছু পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। মোটকথা, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কোনো ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা দেয়নি। ফলে সঙ্গত কারণেই পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালির মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তিলাভের ইচ্ছা জাগে। ১৯৫২ সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে বাঙালির মনে স্বাধীনতার গোপন ইচ্ছা তীব্রতর রূপ লাভ করে। মূলত ৫২-র এই ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটেছিল। ৬২ এর শিক্ষা-আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা এবং ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত মজবুত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে বাঙালিরা তাদের আকাক্সক্ষার রূপদানের স্বপ্ন দেখলেও পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের শোষণের কারণে তা অবাস্তবই থেকে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা না দিয়ে বরং দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়। এরই প্রতিবাদে বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ১৯৭১ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ রাতেই মেজর জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজধানীর ঘুমন্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালায়। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্রভৃতি স্থানে পাক সেনারা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরপর ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর কাছে জিয়াউর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এদেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। অবশেষে ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যার জন্য আপামর জনসাধারণ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিল। ঐদিন রেসকোর্স ময়দানে পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এবং সূচনা ঘটে বাংলাদেশের মহান বিজয়, জন্ম হয় একটি স্বাধীন দেশের, যার নাম বাংলাদেশ। এই মহা বিজয় কে স্মরন করা জন্যই এই দিনটিকে বিজয় দিবস নাম দেয়া হয় এবং পালন করা হয় ।




ফুটনোট: নবম - দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র , অষ্টম শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় পত্র পাঠ্যবই । নবম দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পাঠ্যবই ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ