গৃহযুদ্ধ এক ধরনের যুদ্ধ যা নির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্র বা দেশের অভ্যন্তরে সাংগঠনিকভাবে দুই বা ততোধিক দল বা গোষ্ঠী সরাসরি যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ অর্থে গৃহযুদ্ধের ফলে দু'টি স্বাধীন দেশ সৃষ্ট হয় যা পূর্বে একীভূত দেশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।এক পক্ষ কর্তৃক দেশ বা এলাকা নিয়ন্ত্রণ, অঞ্চল বা এলাকার স্বাধীনতা ঘোষণা অথবা সরকারের নীতি-নির্ধারণে পরিবর্তনের জন্য চাপ প্রয়োগ এ যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য।
২০০৬ সালে ইথিওপিয়ায় একদল ওগাডেন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্যদের টহল চিত্র
ল্যাটিন ভাষায় বেলাম সিভিল শব্দ থেকে সিভিল ওয়ার শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। খ্রীষ্ট-পূর্ব ১ম শতকে রোমান গৃহযুদ্ধে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি ভাষায় সিভিল ওয়ার শব্দটি ইংরেজ গৃহযুদ্ধে প্রথম প্রচলন হয় ১৬৫১ সালে।
বিভিন্ন কারণে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হলেও মূলতঃ দু'টি প্রধান কারণ রয়েছে।
রাষ্ট্রের নেতৃত্ব গ্রহণ কিংবা দেশ পরিচালনা পদ্ধতি বিষয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্যে ঘটলে গৃহযুদ্ধ ঘটে। দু'টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন একটি দল যদি নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নেয় কিংবা দু'দলের মধ্যে কোনরূপ চুক্তি সম্পাদন না হয়, তাহলেও তা গৃহযুদ্ধের সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এক দলভূক্ত জনগোষ্ঠী ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদিতে ভিন্নতাজনিত কারণে যদি দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে ইচ্ছা প্রকাশ না করে তাহলেও গৃহযুদ্ধ হতে পারে। এ ধরনের যুদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদ নামে পরিচিত। তখন তারা দেশ বিভাজন করে নতুন একটি স্বাধীন দেশের জন্যে গৃহযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়। খুব কমসংখ্যক জাতীয় নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নিতে পারেন। অধিকাংশ জাতীয় নেতা-ই দেশ বিভাজনে অংশ নিতে চান না যার ফলশ্রুতিতে অনিবার্য্যভাবে তা গৃহযুদ্ধের আকারে মোড় নেয়।
কখনো কখনো দলভূক্ত জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণ নতুন দেশ তৈরীতে আগ্রহী নন। কিন্তু তারা তাদের অধিকারবোধ ও দাবী-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশ পরিচালনা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হতে চান। এ ধরনের গৃহযুদ্ধ মূলতঃ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
গৃহযুদ্ধ উচ্চ পর্যায়ের সংঘর্ষে রূপ নেয় যাতে প্রায়শঃই অনুমোদনকৃত, প্রশিক্ষিত, সংগঠিত, বৃহৎ আকৃতির নিয়মিত সামরিক বাহিনী জড়িয়ে পড়ে।
গৃহযুদ্ধের ফলে যা হয়:
গৃহযুদ্ধে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তির প্রাণহানির ন্যায় ক্ষয়ক্ষতিসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিনাশ ঘটে দু'দেশের মধ্যেকার সাধারণ যুদ্ধের তুলনায় গৃহযুদ্ধে শুধুই প্রাণনাশ এবং ক্ষয়-ক্ষতি হয়। স্বল্পসময় থেকে শুরু করে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক বছর পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ চলতে পারে। এর কারণ সম্ভবতঃ গৃহযুদ্ধ খুব দ্রুত জটিলতর হয়ে পড়ে এবং মতভেদজনিত পার্থক্যতা। দুই পক্ষের মধ্যে এ যুদ্ধের সূচনা ঘটলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন দল, উপ-দলের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকটি দল একে-অপরের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারে অগ্রসর হয়। যে-সকল দল গৃহযুদ্ধে সম্পৃক্ত নয়, তারাও উভয় পক্ষ থেকে আক্রান্ত হবার ভয়ে অস্ত্রশস্ত্র মজুত রাখে।