দোয়া করার সবচেয়ে বড় সুযোগ সালাত। প্রচলিত নিয়মে আমরা দেখি সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করে তারপর আমরা দোয়ার জন্য মোনাজাত করি। আসলে আমাদের উচিত সালাতের মাধ্যমেই দোয়া করা।আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখিতে হইবে যে আল্লাহ্ সকল সময় আমাদের নিকটেই আছেন (২:১৮৬)। যদি আমরা তাঁহার নিকট প্রার্থনা করি তিনি আমাদের কথা শুনিবেন এবং সাহায্য করিবেন। অবশ্যই তাহার জন্য আমাদের “সঠিক পথে” চলিতে হইবে। যদি তাহার গুণগান এবং নির্দেশের জন্য প্রার্থনার পরিবর্তে কোরানে যাহা আছে আমরা তাঁহাকে শুনাই, বিশেষ করিয়া আমাদের প্রার্থনার সহিত কোন সম্বন্ধ নাই এইরূপ আয়াত, তবে কিরূপে তিনি আমাদের উপকার করিবেন? আমরা তাহাকে নিকটে পাইতে পারি; কিন্তু তাহার জন্য আমাদের তাঁহার ডাক শুনিতে হইবে ও তাঁহার নির্দেশ মানিতে হইবে, যাহার সকল কিছুই আমাদের সৎকর্মের সহিত জড়িত।
(২:১৮৬) যখন আমার বান্দাগণ আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তাহাদের বলিবেন যে আমি সবসময় নিকটেই আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা শুনি যখনই সে আমাকে ডাকে। অতএব, তাহারা আমার ডাক শ্রবণ করুক এবং আমার উপর নির্ভরশীল হউক যাহাতে তাহারা সঠিক পথে চালিত হইতে পারে।
আল্লাহ সকল ভাষার স্রস্টা আর সকল ভাষাই জানেন। আপনি নির্দ্বিধায় আপনার পছন্দ ভাষায় আল্লাহ কে জানাতে পারেন, যা জানাতে চান।
কোরানে অনেক আয়াত আছে যেগুলি আমাদের প্রার্থনার জন্য সুসংগত। নিম্নে কয়েকটি উদ্ধৃত করা হইল, ইহার মধ্যে নবীরা তাঁহাদের জীবনকালে প্রার্থনায় যাহা ব্যবহার করিতেন তাহাও আছে।
(২:২৮৬) [...] হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত বা বিভ্রান্ত হই আমাদিগকে দোষী সাব্যস্ত করিবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগের উপর এরূপ ভার ন্যস্ত করিবেন না যেরূপ আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ন্যস্ত করিয়াছিলেন। আমাদের উপর এমন কিছু আরোপ করিবেন না যাহা বহিবার ক্ষমতা আমাদের নাই। আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের অব্যাহতি দিন এবং আমাদের উপর করুণা করুণ। আপনি আমাদের রক্ষাকর্তা, তাই যাহারা আপনাকে অস্বীকার করে তাহাদের হইতে আমাদের রক্ষা করুন।
(২:১২৭,১২৮) এবং যখন ইবরাহীম ও ইশমাইল (কাবা) গৃহের ভিত্তি স্থাপন করিতেছিলেন, (ইবরাহীম প্রার্থনা করিলেন): হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের (এই কর্তব্যের) নিবেদন গ্রহণ করুন। আপনি, একমাত্র আপনিই, শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার প্রতি আমাদের বিনীত করুন, এবং আমাদের বংশধরগণের মধ্যে হইতে আপনার অনুগত এক জাতিকে উৎপন্ন করুন। এবং আমাদেরকে প্রার্থনার নিয়ম শিক্ষা দিন, এবং আমাদের প্রতি দয়ার্দ্র্য হউন। আপনি, একমাত্র আপনিই, দয়ার্দ্র, করুণাময়।
(৭:১৫৫) এবং যখন মুসা তাহার লোকদের সত্তর জনকে আল্লাহর সহিত সাক্ষাতের স্থানে লইয়া গেলেন, তখন তাহারা ভীষণরূপে ভুকম্পনে আক্রান্ত হইল। তিনি প্রার্থনা করিলেন: হে আমার প্রতিপালক, আপনার ইচ্ছা থাকিলে, আপনি বহু পূর্বে আমাকে ও তাহাদের সকলকেই ধ্বংস করিতে পারিতেন। আমাদের ভিতরের নির্বোধ লোকদের কর্মের জন্য আপনি কি আমাদের ধ্বংস করিয়া দিবেন? ইহা আপনার পরীক্ষার অধিক কিছু নয়। ইহা দ্বারা আপনি যাহাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা সঠিক পথে চালিত করেন। আপনি আমাদের রক্ষণকারী। তাই আমাদেরকে মার্জনা করুন, এবং আমাদের উপর আপনার করুণা বর্ষণ করুন, কারণ আপনিই সর্বাপেক্ষা উত্তম ক্ষমাকারী।
(৫:১১৮) আপনি তাহাদের শাস্তি দিন, অথবা আপনি তাহাদের ক্ষমা করুন, (তাহারা আপনারই বান্দা)। আপনি, একমাত্র আপনিই, সর্বশক্তিমান, মহাজ্ঞানী (ঈসার প্রার্থনা)।
(২৩:৯৭,৯৮) হে আমাদের প্রতিপালক! বিরোধীগণের কুপ্ররোচনা হইতে আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থী এবং উহাদের নৈকট্য হইতে রক্ষার জন্যও আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি (মোহাম্মাদের প্রার্থনা)।
কোরানে অন্যান্য প্রার্থনা-জ্ঞাপক আয়াত সমূহের সূত্র, যাহা আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের আন্তরীক বিনীত প্রার্থনায় ব্যবহার করিত পারি: (২:১২৭, ১২৮, ২০১, ২৮৬), (৩:৮, ১৬, ২৬, ২৭, ৩৮, ৫৩, ১৯১, ১৯২, ১৯৩, ১৯৪), (৪:৭৫), (৫:৮৩,৮৪), (৭:২৩, ১২৬), (১১:৪৫), (১২:১০১), (১৪:৪০, ৪১), (২০, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ১১৪), (২১:৮৩, ৮৭, ৮৯, ১১২), (২৩:২৮, ২৯, ৯৩, ৯৪, ৯৭, ৯৮, ১১৮), (২৪:৬৫, ৬১), (২৫:৭৪), (২৬:৮৩,৮৪, ৮৫), (২৭:১৯), (৩৭:১০০), (৪০:৭, ৮, ৯), (৪৩:১৩,১৪), (৫৯:১০), (৬০:৪,৫), (৬৬:৮,১১)।
পরিশেষে, আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখিতে হইবে যে আল্লাহ্ সকল সময় আমাদের নিকটেই আছেন (২:১৮৬)। যদি আমরা তাঁহার নিকট প্রার্থনা করি তিনি আমাদের কথা শুনিবেন এবং সাহায্য করিবেন। অবশ্যই তাহার জন্য আমাদের “সঠিক পথে” চলিতে হইবে। যদি তাহার গুণগান এবং নির্দেশের জন্য প্রার্থনার পরিবর্তে কোরানে যাহা আছে আমরা তাঁহাকে শুনাই, বিশেষ করিয়া আমাদের প্রার্থনার সহিত কোন সম্বন্ধ নাই এইরূপ আয়াত, তবে কিরূপে তিনি আমাদের উপকার করিবেন? আমরা তাহাকে নিকটে পাইতে পারি; কিন্তু তাহার জন্য আমাদের তাঁহার ডাক শুনিতে হইবে ও তাঁহার নির্দেশ মানিতে হইবে, যাহার সকল কিছুই আমাদের সৎকর্মের সহিত জড়িত।