শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

করোনাভাইরাস, যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, সেই রোগটিকে এখন বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এই ভাইরাস যা মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল- চীন থেকে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে।

ভাইরাসটা কী?

করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।

এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে এক লাখের বেশি মানুষের। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখে পৌঁছেছে।

ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ - এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।

২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।

নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: 'চায়না ভাইরাস', 'করোনাভাইরাস', '২০১৯ এনকভ', 'নতুন ভাইরাস', 'রহস্য ভাইরাস' ইত্যাদি।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা 'করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

 

রোগের লক্ষণ কী:

রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ।

এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে।

সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।

সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেবে তখন বেশি মানুষকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে তাদের। তবে এমন ধারণাও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ না থাকার সময়ও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ।

শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু'য়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেককে সার্স ভাইরাসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে যা ২০০০ সালের শুরুতে প্রধানত এশিয়ার অনেক দেশে ৭৭৪ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলো ।

নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো।

করোনাভাইরাস: আপনার যা করা প্রয়োজন

"আমরা যখন নতুন কোনো করোনাভাইরাস দেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষ্মণগুলো কতটা মারাত্মক। এ ভাইরাসটি অনেকটা ফ্লুর মতো কিন্তু সার্স ভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক নয়," বলছিলেন এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্ক উলহাউস।

 

কোথা থেকে এলো করোনাভাইরাস?

অনেক সময়ই কোন একটি প্রাণী থেকে এসে নতুন নতুন ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা সাম্প্রতিক ভাইরাসটির উৎস কোনো প্রাণী।

যতটুকু জানা যায়, মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারিভাবে বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে।

করোনাভাইরাস ভাইরাস পরিবারে আছে, তবে এ ধরণের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যেটিতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ সেটি নতুন।

বেশিরভাগ করোনাভাইরাসই বিপজ্জনক নয়, কিন্তু আগে থেকে অপরিচিত এই নতুন ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে এবং অবশেষে এই রোগটির সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় এটিকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

কোন প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস?

একবার যদি ভাইরাসের উৎস প্রাণীটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে রোগটি মোকাবেলা করা অনেক সহজ হয়।

করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহানের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে।

যদিও বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা তিমি), ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ- এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুড়ের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে।

 

ক্ষণগুলো কতটা মারাত্মক?

জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়।

এখন পর্যন্ত এই রোগে মারা যাওয়ার হার কম (১% থেকে ২% এর মধ্যে) - তবে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে এখন অধিক মৃত্যুহারও দেখা যাচ্ছে।

৫৬ হাজার আক্রান্ত রোগীর উপর চালানো এক জরিপ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে:

  • এই রোগে ৬% কঠিনভাবে অসুস্থ হয় - তাদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ বৈকল্য এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয়।
  • ১৪% এর মধ্যে তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা যায়। তাদের মূলত শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়।
  • ৮০% এর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায় - জ্বর এবং কাশি ছাড়াও কারো কারো নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কোনো ধরণের অসুস্থতা রয়েছে (অ্যাজমা, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ) তাদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীন থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে জানা যায় যে, এই রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা সামান্য বেশি।

আক্রান্ত ব্যক্তি যেন শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা পায় এবং তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেন ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারে তা নিশ্চিত করা থাকে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য।

Image copyrightBSIP

করোনাভাইরাস

Image captionকরোনাভাইরাস

ভাইরাসটি কীভাবে ঠেকানো যেতে পারে?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তাদের আবিষ্কৃত একটি টিকা নিয়ে মানুষের দেহে পরীক্ষা চালিয়েছে।

এই টিকার উপাদান হলো, কোভিড-নাইনটিন ভাইরাসের একটি জেনেটিক কোড - যা আসল ভাইরাসটি থেকেই নকল করে তৈরি করা হয়েছে। এই কপিটি বিপদজনক নয়, এবং এটা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতেও পারে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

করোনাভাইরাস ভাইরাসের একটি উপ-পরিবার ভাষা নজরে রাখুন সম্পাদনা এই নিবন্ধটি একটি ভাইরাস সম্পর্কে। ভাইরাসটির কারণে হওয়া রোগের জন্য, করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ দেখুন। মহামারী সম্পর্কে জানার জন্য, ২০১৯–২০ করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী দেখুন। আরও দেখুন: ২০২০ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী ও ২০২০ ভারতে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণীকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি। করোনাভাইরাস Coronaviruses 004 lores.jpg SARS-CoV-2 without background.png ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস গ্রুপ: ৪র্থ গ্রুপ ((+)ssRNA) বর্গ: নিদুভাইরাস পরিবার: করোনাভাইরদা উপপরিবার: করোনাভাইরিনা গণ: আলফাকরোনাভাইরাস বেটাকরোনাভাইরাস ডেল্টাকরোনাভাইরাস গামাকরোনাভাইরাস আদর্শ প্রজাতি করোনাভাইরাস করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য।[১][২] তারা পজিটিভ সেন্স একক সূত্রবিশিষ্ট আবরণীবদ্ধ বা এনভেলপড ভাইরাস। তাদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেস-পেয়ার (kilo base-pair) এর মধ্যে হয়ে থাকে যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ।[৩] করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষার করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ "মুকুট"। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির আবরণ থেকে গদা-আকৃতির প্রোটিনের কাঁটাগুলির কারণে এটিকে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মত দেখায়। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রূপ প্রকাশ করে। ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ