করোনা সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতোই প্রথমে আক্রমণ করে ফুসফুসে। এই ভাইরাস থেকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যার থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
যেভাবে ছড়ায়
আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমেই অন্য জনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়ায়
শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এমনকি করমর্দন থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে
রোগীর ব্যবহার করা জিনিস থেকেও এই রোগ হতে পারে।
প্রতিরোধ
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
●ইসলাম শান্তির ধর্ম। কল্যাণের ধর্ম। মুক্তির ধর্ম। মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান আছে বলেই এই জীবনব্যবস্থা সকল যুগের সকল মানুষের জন্য উপযোগী।
●সম্প্রতি চীন থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত ভাইরাস ‘করোনা’। যে ভাইরাসের সাথে কিছুদিন আগেও মানুষ পরিচিত ছিলো না। কারণ, এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। তবে ২০০২ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে সংক্রমিত হয়েছিল ৮ হাজার ৯৮ জন। মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। যার লক্ষণগুলো হলো- কাশি, জ্বর, শ্বাস-কষ্ট, নিউমোনিয়া।
●ব্যাপক হারে মানুষ মহান আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হলে আল্লাহ পাক পৃথিবীতে গজব নাজিল করেন; যাতে মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে তওবার মাধ্যমে আবার ফিরে আসতে পারে। এই গজব বা মহামারি আসলে, তখন করণীয় কী? ইসলামে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। যেকোনো মহামারি থেকে বাঁচতে প্রথম ও প্রধান করণীয় হচ্ছে- নিজেদের কৃতকর্ম থেকে তওবা করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার করা।
●এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা। সর্বদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ, কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো মহামারি। রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মহামারির মতো, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দিনার দেয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৭৬)।
●উক্ত হাদিসের ভাষ্য আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকাংশেই মিলে যায়; বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে প্রাচুর্য বেড়েই চলছে। নতুন নতুন রোগ আত্মপ্রকাশ করছে। এগুলো বন্ধ করার সাধ্য কারো নেই। তবে এই পরিস্থিতিতে আমরা রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারি।
●মহামারি প্রসঙ্গে রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি, বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১০৬৫)।
●তাই আমাদের উচিত, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। যেহেতু চিকিৎসকদের মতে, এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।
●মহামারি আল্লাহর গজব হলেও এতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। রাসুল (সা.)-এর ভাষায় মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ—মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮২৯)।
●অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, মহামারিতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৩০)।
●অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজী লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল আলীম’, অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’; সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮)।
●এছাড়া নবীজি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়তে বলেছেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আঊজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া সাইয়ি ইল আসক্কাম’।
●ইসলামের আলোকে 'করোনা ভাইরাস' থেকে বাঁচার উপায়ঃ
১। সবসময় পবিত্র ও অজু অবস্থায় থাকুন।
২। পরিচ্ছন্ন থাকুন ও পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৩। নিয়মিত গোসল করুন।
৪। লাইফবয় লেমন ফ্রেশ হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন।
৫। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করুন।
৬। সবসময় নোজ মাস্ক পরিধান করুন।
৭। প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ ছোট করুন।
৮। নিয়মিত নাকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখুন।
৯। খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন।
১০। কাঁচা বা আধা সিদ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
১১। ধূমপান ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
১২। ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৩। হারাম খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
১৪। নিয়মিত উষ্ণ কিছুটা পানি পান করুন।
১৫। প্রতিদিন কিছু সময় রোদে অবস্থান করুন।
১৬। সবসময় কালেমা পড়ুন।
১৭। নিয়মিত নামাজ পড়ুন।
১৮। রোজা রাখুন।
১৯। কুরআন তিলাওয়াত করুন।
২০। হাদীস পাঠ করুন।
২১। বেশি বেশি কালোজিরা খান।
২২। দান-খয়রাত করুন।
২৩। করোনা ভাইরাসকে নয়, একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন।
২৪। সবকিছুতেই একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করুন।
২৫। একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন।
২৬। মহান আল্লাহ তায়ালা ও হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কে ভালোবেসে কুরআন ও হাদীসকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন।
২৭। আপনার অবস্থানরত এলাকায় যদি 'করোনা ভাইরাস' আসে, তাহলে এই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাবেন না। আর অন্য এলাকায় যদি 'করোনা ভাইরাস' আসে, তাহলেও এই এলাকা ছেড়ে সেই এলাকায় যাবেন না। ধরুন, আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। জীবিকার প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ধরুন, বাংলাদেশে এখনো 'করোনা ভাইরাস' আসেনি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে। এখন আপনি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে কখনো চলে আসবেন না। অনুরূপ, এই সময় বাংলাদেশ থেকে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন না। এভাবে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি অবলম্বন না করার কারণে বর্তমানে পুরো বিশ্বে 'করোনা ভাইরাস' ছড়িয়ে পড়েছে।
২৮। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাময়িকভাবে করমর্দন ও কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকুন।
২৯। হস্তমৈথুন, সমকামিতা, পরকীয়া ও অবৈধ যৌন মেলামেশা থেকে চিরতরে বিরত থাকুন।
৩০। যেসব প্রাণী খাওয়া হারাম, সেসব প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন।
৩১। যেখানে সেখানে কফ, থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
৩২। করোনা (ক=কুরআন, কালেমা, কালোজিরা, রো=রোজা, না=নামাজ)। মুমিনদের জন্য করোনার বিশেষ মেডিসিন হলোঃ নিয়মিত নামাজ পড়া, রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত করা, হাদীস পাঠ করা, কালেমা পড়া, বেশি বেশি কালোজিরা খাওয়া এবং সবসময় অজু ও পবিত্র অবস্থায় থাকা।
৩৩। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়ার ও নেক আমল করার তাওফিক দান করুন এবং সকল প্রকার রোগ-শোক, বিপদ-আপদ ও ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ আপনার আমার সহায় হোন। আমিন।
(ধন্যবাদ)
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়- ১) আতংকিত না হয়ে, সচেতন হওয়া। ২) বাইরে থেকে এসে প্রবাহমান পানিতে সময় নিয়ে হাত ধোয়া। ৩) পানির স্বল্পতার ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নেওয়া। ৪) হাঁচি- কাশির ক্ষেত্রে টিস্যু ব্যবহার করা। টিস্যু না থাকলে কনুই ব্যবহার করা। ৫) অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করা। ৬) সাবধানতা বজায় রাখতে জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরত্বে থাকা। ৬) কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করা। ৭) পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের বিশেষ যত্ন নেওয়া। কারণ অনেকেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকেন, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।