ডাউন সিনড্রোম (Down syndrome) বা ডাউন শিশু একটি বিশেষ ধরনের জেনেটিক বা জিনগত অবস্থা। ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়া মানুষের ক্রোমোজোমের গঠন সাধারণ মানুষের ক্রোমোজমের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। । ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাঙ্গডন ডাউন ১৮৬৬ সালে এ শিশুদের চিহ্নিত করেন বলে তার নামানুসারে ডাউন সিনড্রোম কথাটি প্রচলিত হয়।
প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ শিশুর মধ্যে একটি শিশু ডাউন সিনড্রোম বা ডাউন শিশু হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পারে। আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় ৬০০০ ডাউন শিশুর জন্ম হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর ৫০০০ বা প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন শিশুর জন্ম হয়।
আমাদের শরীর গঠনের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশকে কোষ বা সেল (Cell) বলা হয়। প্রতিটি মানব কোষের মধ্যে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম (Chromosome) নামের অঙ্গানু থাকে, যার অর্ধেক আসে মায়ের কাছ থেকে আর অর্ধেক আসে বাবার কাছ থেকে। কোটি কোটি ডিএনএ (DNA)-এর সমন্বয়ে এক-একটি ক্রোমোজম তৈরি হয়। এ ডিএনএ-কে বলা হয় আমাদের বংশগতির ধারক ও বাহক। অর্থাৎ আমাদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য যেমন- আচার-আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রং সবকিছুই এ ডিএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে মানব শরীরে এ ডিএনএ বা ক্রোমোজমের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে নানারকম শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি দেখা দেয়, যাদের আমরা সাধারণভাবে জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিক ত্রুটি বলে থাকি।
ডাউন সিনড্রোম বা ডাউন শিশু সেরকম একটি জেনেটিক ত্রুটিযুক্ত মানব শিশু, যার শরীরের প্রতিটি কোষে ২১ নম্বর ক্রোমোজমটির সঙ্গে আংশিক বা পূর্ণভাবে আর একটি ক্রোমোজম (Trisomy 21) সন্নিবেশিত থাকে। ২১ নম্বর ক্রোমোজম তিনটি থাকে বলে ২১/৩ বা একুশে মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হয়।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য
'আমার সুযোগ, আমার পছন্দ,
উপভোগে চাই সমান অধিকার'।
আর এ অতিরিক্ত ক্রোমোজমটির কারণে ডাউন শিশুর বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। চেহারা একই রকম হয় বলে সহজে ডাউন শিশুদের চেনা যায়।
ডাউন শিশুদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য :
ডাউন শিশুদের কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিস্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
এ তো গেল শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কথা। এবার জেনে নেওয়া যাক ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের মানসিক বা আচরণগত কী কী সমস্যা দেখা দেয়। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত একটি শিশু বয়সের সাথে সাথে আর দশজন স্বাভাবিক শিশুর মতো জ্ঞানীয় বা আচরণগত বিকাশ ঘটাতে পারে না। তাদের আবেগীয় বিকাশটি সঠিকভাবে হয়ে ওঠে না। ফলে আশেপাশের যেকোনো কিছুর প্রতি তাদের অতিরিক্ত আবেগ প্রদর্শন বা একদমই আবেগীয় কোনো অনুভূতি দেখা যায় না। দেখা গেলো, খুব সাধারণ একটি শব্দে তারা ভয় পেয়ে চমকে ওঠে, কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আবার অনেক সময় এরাই অনেক ভয়ের বিষয় বা অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ঘটনাকে অগ্রাহ্য করে। অর্থাৎ, মানসিক বিকাশ বা জ্ঞানীয় বিকাশগত জায়গা থেকে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের বেশ কিছু সমস্যা দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত গুটিকয়েক শিশু অস্বাভাবিক আইকিউ সম্পন্ন হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এদের Exceptional Children বলা হয়।
প্রতিরোধের উপায় : উন্নত বিশ্বে প্রত্যেকটি গর্ভবতী মাকে ডাউন শিশু এবং অন্যান্য সম্ভাব্য জন্মগত ত্রুটি ও তা নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া চিকিৎসকের জন্য বাধ্যতামূলক। যেহেতু মা-এর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাউন শিশু হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে মা হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মেধাবী শিশুর জন্ম নিশ্চিত করতে হলে ডাউন শিশুর মতো প্রতিরোধযোগ্য প্রতিবন্ধী বা জন্মগত ত্রুটির বিষয়টি পাঠ্য বইতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গর্ভবতীর নারীর সেবায় অনাগত শিশুর জন্মগত ত্রুটির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ধন্যবাদ।