অনেক মাওলানার কাছে শুনেছি যে  ইসলামের যোগব্যায়াম হারাম মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী সম্প্রতি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে যোগব্যায়ামের কথা বলেছেন ইসলামী আইন অনুযায়ী যোগব্যায়াম হালাল কিনা? কেননা আমার শুচিবায়ু রোগ আছে এজন্য যোগব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। 


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Jamiar

Call

 যোগ ব্যায়াম মূলতঃ একটি শয়তানী ফাঁদ; যা নিঃসন্দেহে হারাম। কেন হারাম; সংক্ষেপে এর কয়েকটি কারণ দেখুন–

১- এটি মূলতঃ হাজার বছর পূর্বে ফেলে আসা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান পাদ্রী ও যোগী-সন্ন্যাসীদের যোগ-সাধনার আধুনিক কলা-কৌশলের নাম।(yoga and breathing by Muhammad ‘Abd al-Fattaah Faheem p. 19)

অথচ রাসূলুল্লাহ  ﷺ বলেছেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (তিরমিযী ২৬৯৫)

২- মেডিটেশনের লক্ষ্য হ’ল অন্তর্গুরুকে পাওয়া। তাদের ভাষায়, ‘মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার  ‘অন্তরের আমি’র  সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে।’(http://question.quantummethod.org.bd)

মেডিটেশনের এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। মূলতঃ ‘অন্তরের আমি’ হল নফসে আম্মারা; যার অনুসরণের পরিণতি হল জাহান্নাম। এদেরকে লক্ষ্য করেই আল্লাহ বলেন,

 أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا-أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ ۚ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ ۖ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا

আপনি কি দেখেছেন ঐ ব্যক্তিকে, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত। (সূরা ফুরক্বান ৪৩-৪৪)

৩- মেডিটেশনের একটি দাবী হচ্ছে, ‘ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তির পথ হচ্ছে মেডিটেশন।’ (কোয়ান্টাম টেক্সটবুক)

ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মারাত্মক ভুল দাবী। কেননা, আল্লাহ প্রদত্ত ও  রাসূল ﷺপ্রদর্শিত চির কল্যাণময়, শান্তি ও মুক্তির একমাত্র পথ ইসলাম। ইসলামের মাঝেই রয়েছে মানবজাতির যাবতীয় ভ্রান্ত ধারণার উপশম এবং মানুষের তৈরি  শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকরী ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ কত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন,

كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ

এটি সেই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি যেন তুমি মানুষকে বের করে আন অনেক অন্ধকার থেকে এক আলোর দিকে। (সূরা ইবরাহীম ০১)

৪- মেডিটেশনের দৃষ্টিভঙ্গি হল, মন সকল শক্তির উৎস চেতনা অবিনশ্বর, প্রাণ রহস্যের চাবিকাঠি।’ (কোয়ান্টাম টেক্সটবুক)

মেডিটেশনের এ বিশ্বাস ও  দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কারভাবে কুফর ও শিরক। কেননা, ইসলাম কেবল আল্লাহকেই সকল শক্তির মূল উৎস ও সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করে। অন্য কোন কিছু সকল শক্তির উৎস, অবিনশ্বর, প্রাণ রহস্যের চাবিকাঠি মনে করা বা বিশ্বাস করা আল্লাহর সাথে সুস্পষ্ট শিরক। আল্লাহ বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ

আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। (সূরা বাকারা ১৬৫)

৫- কোয়ান্টাম টেক্সটবুক-এ আছে, শিথিলায়ন প্রক্রিয়ায় মানুষের মধ্যে এমন এক ক্ষমতা তৈরী হয়, যার দ্বারা সে নিজেই নিজের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারে…। ইচ্ছা করেছেন; ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন; মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে। আপনিও এ চাবিকাঠিকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করতে পারেন অতিচেতনা।’

মুলতঃএ ধরনের বিশ্বাস ও কর্ম-তৎপরতা পরিস্কার কুফর ও শিরক। ‘কুন’ শব্দ ব্যবহারে ইচ্ছার মাধ্যমে যে কোন ঘটানোর মালিক একমাত্র আল্লাহ। কোয়ান্টাম মেডিটেশনে এই ‘কুন’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ইচ্ছা শক্তির প্রতিফলন সুস্পষ্ট শিরক। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

যখন তিনি কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন তাঁকে কেবল বলতে হয় হও-ফলে তা হয়ে যায়। অতএব মহাপবিত্র ও মহাপ্রশংসিত আল্লাহ। তাঁর হাতে আছে সকল বিষয়ের সকল ক্ষমতা। আর তাঁর নিকটেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।(সূরা ইয়াসীন ৮২-৮৩)

৬- কোয়ান্টাম টেক্সটবুক-এ আছে,, ‘শিথিলায়ন প্রক্রিয়ায় মানুষের মধ্যে এমন এক ক্ষমতা তৈরী হয়, যার দ্বারা সে নিজেই নিজের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারে। এজন্য একটা গল্প বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক ইঞ্জিনিয়ার সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করার মনছবি দেখতে লাগল। ফলে সে ডিভি ভিসা পেয়ে গেল। তারপর সেখানে ভাল একটা চাকুরীর জন্য মনছবি দেখতে লাগল। ফলে সেখানে যাওয়ার দেড় মাসের মধ্যেই উন্নতমানের একটা চাকুরী পেয়ে গেল।’অথচ ইসলাম মানুষকে তাকদীরে বিশ্বাস রেখে বৈধভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বলে। আল্লাহ বলেন,

قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا

বলে দিন, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। (সূরা তওবা ৫১)

আশা করি উক্ত কারন গুলোর মাধ্যমে বুঝতে পারবেন যোগ ব্যয়াম কেনো হারাম করা হয়েছে।

ধন্যবাদ।

বিস্ময়ের সাথে থাকুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ