ইসলামী যৌনশাস্ত্রঃ ইসলামের দৃষ্টিতে যৌনতা এবং ইসলামে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

গর্ভপাত যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকে, কোন ধরণের উল্লেখযোগ্য কারণ এর মধ্যে যদি না থাকে তা হলে গর্ভপাত ঘটানো হারাম। চাই এটি যে অবস্থায় বা যত দিনেই হোন না কেন। কারণ যেহেতু একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে সেটাকে ধ্বংস করা আর সেটা যদি মানবভ্রুণ হয়ে থাকে তা হলে কোন অবস্থাতেই এটি হালাল হবে না। যেহেতু গর্ভপাতকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোপন হত্যা বলেছেন। এটি গোপনীয়ভাবে ভ্রুণ হত্যা যেটি সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।

ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিনের কম হবে তখন ভ্রুণটি একটি রক্তপি- হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। তখন পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায় ভ্রুণটিকে মানুষের শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক আল্লাহতায়ালা। অতএব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা নাজায়েজ।

তবে শরয়ি কোনো যৌক্তিক কারণে তা নষ্ট করা বা গর্ভপাতের অবকাশ আছে।

তা হলোঃ যদি কোন মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় এবং তার কোলের বাচ্চার জন্য তা ক্ষতিকর হয়, এমতাবস্থায় গর্ভবতী হওয়াতে দুধ শুকিয়ে যাওয়া, দুধ নষ্ট হয়ে যাওয়া, যা কোলের শিশুকে খাওয়ানো যায় না, এমতাবস্থায় গর্ভ চারমাস পূর্ণ হওয়ার আগে ওয়াশ করে বা অন্যপদ্ধতিতে গর্ভপাত করানো যেতে পারে। যদি এ কাজ না করে কোলের শিশুকে বাঁচানোর কোন ব্যবস্থা না থাকে তবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীঃ ৫/৩৫৬, ফাতাওয়ায়ে শামীঃ ৩/১৭৬)।

ফাতওয়ায়ে কাজি খান খ. ৩ পৃ. ৪১০ উল্লেখ আছে, স্তনদানকারী গর্ভবতী হওয়ার কারণে যদি তার দুধ বন্ধ হয়ে যায় ও শিশুর পিতার অন্যকোনো স্তনদানকারী ভাড়া নেওয়ার সামর্থ্য না থাকে এবং বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয় এ অবস্থায় ফিকাহবিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভে বীর্য, জমাট রক্ত কিংবা গোস্তের টুকরাকারে থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে তখন চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভপাত করানো জায়েজ আছে।

ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যাবে তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় ওরগান প্রস্তুত শুরু হয়। যেমন : ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি। অতএব যখন তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ হতে শুরু করে তখন থেকে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্যকোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মাকরুহে তাহরিমি।

আদ্দুররুল মুখতার খ. ১০, পৃ. ২৫৪ উল্লেখ আছে, নখ, চুল ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পাওয়া হুকুমের দিক থেকে সকল অঙ্গপ্রকাশ পাওয়ার মতো। তবে শরয়ি কোনো ওজর হলে মাকরুহ হবে না। যেমন, গর্ভধারিণীর জীবননাশের আশঙ্কা থাকা। বিজ্ঞ ডাক্তাররা যদি এ কথা বলেন, বাচ্চাকে পেটে রাখা হলে মায়ের মৃত্যুর কারণ হবে, তাহলে বড় ক্ষতি থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ভ্রুণটিকে গর্ভপাতের মাধ্যমে নষ্ট করার অবকাশ আছে।

আলফাতওয়াল মুতাআল্লিকা বিততিব্বি ওয়া আহকামিল মারজা খ. ১ পৃ. ২৮১ উল্লেখ আছে, বাচ্চার বয়স চার মাস হয়ে গেলে এ বাচ্চা গর্ভপাত করা বৈধ নয়। হ্যাঁ, বাচ্চাকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টার পর একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এ কথা বলে, বাচ্চাকে তার মায়ের পেটে রেখে দিতে গেলে এ বাচ্চা তার মায়ের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাহলে দুই ক্ষতির মধ্য থেকে মারাত্মক ক্ষতিকে প্রতিহত করার ও বড় উপকার অর্জনের লক্ষ্যে বাচ্চা গর্ভপাত করা বৈধ হবে।

❏ ভ্রুণের বয়স যখন একশ বিশ দিন বা চার মাস হয়ে যায় তখন আল্লাহ তাআলা তার মধ্যে রুহ দান করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চাকে নষ্ট করা বা গর্ভপাত করা যেন কোনো মানুষকে হত্যা করা। তাই তা হারাম।

ফাতহুল আলিয়্যিল মালিক খ. ১ পৃ. ৩৯৯ উল্লেখ আছে, ভ্রুণে রুহ আসার পর গর্ভপাত সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। এ অবস্থায় গর্ভপাত হত্যাতুল্য। এ অবস্থায় বাচ্চাকে হত্যা করা জীবন্ত বাচ্চাকে কবর দেওয়ার নামান্তর।

যা জাহেলি যুগে ছিল। যার সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, স্মরণ কর ওই দিনকে যেদিন জীবন্ত দাফনকৃত নিষ্পাপ বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হবে তোমাকে কোন অপরাধের কারণে হত্যা করা হয়েছে। (সুরা তাকবীর: ৮)।

মানবকুল ও সারাজাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে এরশাদ করেন, যে কেউ কোনো প্রাণ হত্যা করল, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল। আর যে কারও জীবন রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের জীবন রক্ষা করল। (সুরা মায়িদা : ৩২)।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ