প্রচলিত নিয়মে যে বিয়ে করার কয়েক মাস পূর্বে বর-কনের বিয়ের কাবিননামা / রেজিষ্ট্রেশন করে রাখা হয় তা ইসলামের দৃষ্টিতে কি জায়েয? আমি bdnew24 এর একটা আর্টিকেল পড়ে জানতে পারি বিষয়টি বৈধ নয় ।  ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন ভাই-বোনদের কাছে থেকে সঠিক উত্তর জানতে চাই  ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
যেই কাজে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় তা ইসলামের দৃষ্টিতে কিভাবে জায়েয হয়।

মিথ্যা বলার চেয়ে মারাত্মক অপরাধ আর নেই। তাই মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আদৌ পছন্দ করেন না। কোরআন ও হাদিসে মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে। মিথ্যাই সব ধরনের অপরাধে উৎসাহ-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। মিথ্যা বলা মুনাফিকের লক্ষণ। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মিথ্যা বলা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, মিথ্যা তো তারাই বানায় যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর ওপর ইমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যাবাদী। (সূরা আন নাহালঃ ১০৫)।

বিয়ের আগে কাবিন করা আইনসিদ্ধ নয় দ্বিতীয়ত এক্ষেত্রে আরো কিছু বড় বড় সমস্যা রয়েছে।

মুসলিম বিয়ে নিবন্ধনের জন্য সরকার অনুমোদিত বিবাহ নিবন্ধন অফিসে সরকারি যে ফরম পূরণ করতে হয় তাতে অনেকগুলো কলাম আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ-

কত তারিখে বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে?

কোথায় বিবাহ পড়ানো হয়েছে?

বিবাহ কে পড়িয়েছেন?

বিয়ে পড়ানো ছাড়াই যখন কাবিন করে রাখা হচ্ছে তখন ফরমের উপরোক্ত কলামগুলোতে মিথ্যা তথ্য লিখতে হয়। কেননা বিয়ে না হওয়ায় বিয়ে সম্পাদনের তারিখ, স্থান সবকিছু বানিয়ে লিখতে হবে। এক কথায়, বিয়ের আগে কাবিন করার দ্বারা পাত্র, পাত্রী, সাক্ষী, সনাক্তকারী, সরকারি নিবন্ধক কিংবা কাজী সবাই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। সবাই মিথ্যা কথার উপর স্বাক্ষর করছে।

উপরোক্ত মিথ্যা তথ্য লেখা ছাড়াও বিয়ের আগে কাবিন করার ক্ষেত্রে আরেকটি জটিলতর সমস্যা হলো, কাবিননামার ১৮ নং ধারায় আছে, বর কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা হইলো কি না?

হইলে কী কী শর্তে? ফরমের এ কলামটি পূরণকালে সাধারণত ‘হ্যাঁ’ লিখে তিনটি শর্ত উল্লেখ করা হয়। এর অর্থ হলো, স্বামী তার স্ত্রীকে শর্ত সাপেক্ষে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছে। একে পরিভাষায় ‘তালাকে তাফবীয’ বলা হয়। বিয়ের পর যেমনিভাবে স্বামী নিজে তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে তদ্রূপ স্ত্রীকেও তালাক গ্রহণের অধিকার দিতে পারে। কিন্তু বিয়ের আগে যেহেতু স্বামী নিজেই তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে না তাই স্বামী মুখে স্ত্রীকে ওই অধিকার দিলেও বা অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করলেও স্ত্রীর জন্য বিবাহের পর উক্ত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না।

অতএব বিয়ের আগে কাবিন করার অর্থ হচ্ছে, স্বামী তার স্ত্রীকে বিয়ের আগেই তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে। অথচ বিয়ের আগে স্বামী নিজেই তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে না। স্বামীর তালাক প্রদানের ক্ষমতা তো আসে বিয়ের পর। কেননা বিবাহ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রীর জন্য পরপুরুষ। আর কোনো পরপুরুষ তো পরনারীকে তালাক দিতে পারে না। দিলেও তা অনর্থক ও অগ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হয়।

আমর ইবনু শুআইব (রাহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তান যে সকল জিনিসের মালিক নন সে সকল জিনিসের মানত জায়িয নয়, সে যার মালিক নয় তাকে সে মুক্তি দিতে পারে না এবং তার সাথে যার বিয়ে হয়নি তাকে সে তালাকও দিতে পারে না।

(সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত], অধ্যায়ঃ ১১/ তালাক ও লিআন।, হাদিস নম্বরঃ ১১৮১)।

সুতরাং পাত্র যদি বিয়ের আগে কাবিননামার ফরম পূরণ করত তাতে স্বাক্ষরও করে তবুও এর দ্বারা বিবাহের পর পাত্রী তালাক গ্রহণের অধিকার প্রাপ্ত হবে না। এমতাবস্থায় সেই স্ত্রী যদি কোনোদিন নিজের উপর তালাক গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে তার তালাক গ্রহণ শরীয়ত মতে শুদ্ধ হবে না।

তাই ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো কাবিন করতে হলে পূর্বে বিয়ে করতে হবে। বিয়েই যদি সম্পাদিত না হয়ে থাকে, তাহলে নিবন্ধন কিসের হবে?

শরীয়তের বিধান হলো, কাবিন করতে হলে পূর্বে নিয়মমাফিক বিয়ে করতে হবে। তারপর নির্ধারিত কাবিননামার ফরম পূরণ করবে। এ সংক্রান্ত সরকারি আইনও একথাই বলে যে, বিবাহের পরে ফরমটি পূরণ করে সংঘটিত বিবাহকে সরকারী রেজিস্টারভুক্ত করবে।

কিন্তু আমাদের সমাজে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, ‘কাবিন করে রেখেছি, বিয়ে কয়েক মাস পরে হবে।’ অথচ নিয়মতান্ত্রিক বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার আগে এসবের কোনোটিই বৈধ নয়। তাই সার্বিক বিবেচনায় ইসলামী শরীয়ত ও সরকারি আইন অনুযায়ী বিয়ে পড়ানোর কাজ সুসম্পন্ন হওয়ার পরেই কেবল কাবিননামার ফরম পূরণ করতে হবে, বিয়ের আগে নয়।

কখনো যদি বিয়ের আগে ফরম পূরণ করা হয় তবে বিয়ের পর অন্তত ১৮ নং ধারাটি সম্পর্কে বরকে অবগত করে তার অনুমোদন ও স্বাক্ষর নেওয়া জরুরি।

বিয়ের রেজিস্ট্রেশনকে কাবিন বলা হয়। তবে এই কাবিন কিন্তু বিয়ের কোনো অংশ নয়। কাবিন ছাড়া বিয়ে করলে বিয়ে শুদ্ধ হবে, দাম্পত্য জীবন হালাল হবে। কাবিন হলো-প্রচলিত আইন অনুসারে বিয়ের একটা নিবন্ধন মাত্র। তাই সদা সত্য পথে থেকে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা উচিত।

©
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ