নামাজ হয়ে যাবে কিন্তু মাকরূহ হবে,মাকরূহ তাহরীমী৷
যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি রয়েছে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী| অর্থাৎ মুছল্লীর সামনে পিছনে, উপরে, নীচে, ডানে-বামে, যেখানেই প্রাণীর ছবি, মূর্তি থাকুক না কেন তাতে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে|
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان قر ام لعائشة سترت به جانب بيتها , فقال النبى صلى الله عليه وسلم اميطى عنى لا تزال تصاوير. تعرض لى فى صلاتى.
অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার একখানা (প্রাণীর ছবিযুক্ত) পর্দা ছিল, যা তিনি উনার ঘরের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন| হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “হে আয়িশা পর্দাটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে নাও| কারণ এর ছবিগুলো নামাযে আমার দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট করে|”
দলীল-
ফাতহুল বারী ১০, জিঃ পৃঃ ৩৯১,
উমদাতুল কারী ২২তম জিঃ পৃঃ ৭৪,
মুজামুল মুফহারিস ৩য় জিঃ পৃঃ ৪৪০,
বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১ |
ঘরে ছবি থাকলে নামাজ হবে। কিন্তু রহমতের ফেরেশতা ঢুকতে পারে না।। তাই ঘরে ছবি রাখা যাবে না। নবি কারিম সা: ঘরে ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন, এসম্পর্কে প্রমান :: হাদিসে আবূ ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ঘরে [রহমতের] ফেরেশতা প্রবেশ করেন না যে ঘরে কুকুর থাকে এবং সে ঘরেও নয় যে ঘরে ছবি বা মূর্তি থাকে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) #অধিকাংশ_আলেমের_মতে_মাসআলা_হলো- যাবতীয় প্রাণীর মূর্তি বানানো বা ঘরে রাখা বা তার ছবি রাখা সর্বাবস্থায় নাজায়েয। এবং ঐ সমস্ত ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করে না। আর রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ না করলে সে ঘরে দ্বীনদারী থাকে না। মূর্তি যে কোনো প্রাণীর হোক তা রাখা হারাম। হাদিসে আছে - আয়িশা (রাঃ) এর নিকট কিছু পর্দার কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি ঘরের এক দিকে পর্দা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ আমার থেকে এটা সরিয়ে নাও, কেননা এর ছবিগুলো সালাত এর মধ্যে আমাকে বাধার সৃষ্টি করে। (সহী বুখারী,নং ৫৫৩৪) অতএব এ সমস্ত ঘরে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হবে। তবে নামাজ মাকরুহ হবে। আর বিনা উজরে মাকরুহ তাহরীমী কোন কাজ নামাযে সংঘটিত হলে, আল্লাহর দরবারে গুনাহগার এবং শাস্তির যোগ্য হতে হবে। নামাযের পরিপূর্ণ হক ও সুন্নতের পরিপন্থী হওয়াতে নামায যথাযথভাবে আদায় হবে না। তবে এর জন্য সিজদা সাহু বা নামায দোহরানোর প্রয়োজন হবে না। (তথ্যসূত্র - ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১:৩০৪ ফাতাওয়ায়ে শামী, ১:৬৩৯ জাওয়াহিরুল ফিকহ, ৩/২৩৩) #তবে অনেক আলেম শায়েখের মতে নামাজ ই আদায় হবেনা। সেই নামাজ আবার কাজা পড়তে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া) সুতরাং ছবির ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নামাজ পড়া উচিত। #ছবির_ব্যাপারে_দুই_ক্ষেত্রে_এই_নিষেধাজ্ঞা_নেই। ১- ছবিটি হীন অসম্মানজনক কাজে ব্যবহার করতে হবে। হাদিসে আছে #আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তার (কামরার) তাকের সম্মুখে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন, যাতে ছিল প্রাণীর ছবি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ছিড়ে ফেললেন। এরপর আয়িশা (রাঃ) তা দিয়ে দু’খানা গদি তৈরী করেন। এই গদি দু’খানা ঘরেই ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর বসতেন। (বুখারী,নং ২৩১৭) #অপর হাদিসে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার একখন্ড কাপড় ছিল, যাতে ছবি ছিল এবং তা একটা তাকের উপরে টানানো ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে সালাত আদায় করতেন। তখন তিনি বললেন, এটি আমার সম্মুখ থেকে সরিয়ে নাও। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি সেটি সরিয়ে ফেললাম এবং (পরে) সেটি দিয়ে কয়েকটি বালিশ বানিয়ে নিলাম (মুসলিম নং ৫৩৪৯) এ হাদিস এবং আরো কিছু হাদিসের উপর ভিত্তি করে এ ব্যাপারে জমহুর ফকিহ আলেম গন একমত যে প্রানীর ছবি যুক্ত কাপড় কে যদি পদদলিত করা হয় যেমন পাপোশ বানানো। অথবা তাকে অসম্মানের কাজে লাগানো হয় যেমন ছবি যুক্ত ছোট বালিশ বা বেড কভার বা বসার গদি অথবা জুতা। তাহলে ওই ছবিযুক্ত জিনিষ ঘরে রাখা জায়েজ। এবং সে ঘরে রহমতের ফেরেশতাও আসবে। (ফাতহুল বারী ১০/৪০১-২) ২- কোন ছবি বা মূর্তির মাথা না থাকলে তা হারাম ছবির আওতায় পড়ে না। #হাদিসে আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার নিকট এসে বললেন, গতরাতে আমি আপনার নিকট এসেছিলাম, কিন্তু আপনার অবস্থানরত ঘরের দরজায় একটি পুরুষের প্রতিকৃতি, ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সূক্ষ কাপড়ের পর্দা এবং একটি কুকুর আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেছে। " সুতরাং আপনি দরজার পাশে রাখা প্রতিকৃতিটির মাথা কেটে ফেলার আদেশ করুন, তাহলে সেটা গাছের আকৃতি হয়ে যাবে' আর পর্দাটিও কেটে ফেলতে বলুন আর তা দিয়ে সাধারণতঃ ব্যবহারের জন্য দুটি গদি বানানো যাবে এবং কুকুরটিকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের পরামর্শ মুতাবিক কাজ করলেন। (তিরমিযি,নং ২৮০৬,মান-হাসান সহীহ) #অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "মূর্তি বা ছবি হল মাথাটাই। সুতরাং মাথা কেটে দেওয়া হলে সে ছবি বা মূর্তিতে সমস্যা নেই" তাই প্রানীর ছবি বা মূর্তির মাথা কেটে দিলে তা হারাম থাকেনা এ ব্যাপারে জমহুর আলেমগন একমত। (ফাতহুল বারী ১০/৪০৫) #এখন_করনীয়_হলো- যে সব পন্যে বা জিনিষ এ ছবি থাকে সেগুলা কিনা তো উচিত না মোটেই। বেছে বেছে দেখে শুনে যেগুলায় ছবি নেই সেগুলা কিনলেই হয়। আমরা নিজেরা যদি সতর্ক থাকি তাইলে ঘরে প্রানীর কোন ছবি না থাকা খুব কঠিন কিছু না। #ক্রিম বা লোশন এ ছবি থাকেই এখন এসব কিনতে বাধ্য হলেও এগুলা ড্রেসিংটেবিল এ সাজিয়ে না রাখলেই হয়। ইউজ করে ড্রয়ার বা আলমারীতে ঢুকিয়ে রাখলেই হয়। একান্ত ই টেবিলে রাখতে হলে ছবির দিকটা দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখা যায়। #বাচ্চাদের ব্যাগ গুলাও ছবিহীন কিনার চেষ্টা করতে হবে। একান্ত ই যদি তারা ছবি যুক্ত ব্যাগ,বক্স কিনার জন্য জোর করে তাইলে কিনে দিলেও সেই ব্যাগ,বক্স, আলমারীতে বা ড্রয়ারে রাখবেন। জুতা দরজার বাইরে বা র্যাকের ভিতর রাখবেন। #পত্রিকা পড়া হলে টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে রাখলেই হয়। অথবা তার উপর অন্য কাপড় বা বই দিয়ে ঢেকে রাখলেই হয়। বই এর ক্ষেত্রেও একি কথা। আর ছবি যদি এমন ছোটো হয় যে, নামাযীর চোখে পড়ে না, তাহলে নামায পড়তে অসুবিধা নেই৷ #বাচ্চাদের প্রানীর ছোট খাট মূর্তি থাকলে সেগুলার মাথা কেটে দিলে। নাক মুখ ছিড়ে ফেলে চেহারার আকৃতি অবশিষ্ট না রাখলেই হয়। প্রানীর ছোট শোপিস এর মাথার জায়গা কচটেপ মেরে বা ভেঙ্গে রাখলেই হয়। #ছবিযুক্ত কাপড়ের উপর যদি আরেকটি কাপড় আবৃত করে রাখে, যার কারণে ছবিটি আবৃত হয়ে থাকে, তাহলে এ জাতীয় পোশাকে নামায পড়া মাকরূহ হবে না। #মাসআলা_হলো- ছবি যদি খুব ছোট হয় যা যমীনের উপর রাখা হলে এবং কেও দাঁড়িয়ে দেখলে ছবির অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলোর বিবরনী দেখা না যায় অর্থাৎ ছবিটা বুঝা না যায় তাইলে তা মাফ। সাহাবাদের কারো কারো আংটি বা বোতাম এ ছবি থাকার কথা হাদিসে পাওয়া যায়। (শামী /৬০৫ পৃ:) এ হিসেবে টাকা/কয়েনে থাকা ছবি এবং পেপার বা বই এর ছবি এত ছোট হলে মাফ আর এর বড় হলে ঢেকে রাখতে হবে। আর টাকা/কয়েন পকেটে নিয়ে নামাজ পড়া যায়। সমস্যা নেই। #মাসআলা_হলো- ছবি দৃশ্যমান হলে নামায মাকরূহ হবে৷ অন্যথায় মাকরূহ হবে না৷ সুতরাং তা ঢেকে রাখলে বা কোথাও ঢুকিয়ে রাখলে ওই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করাতে বাধা থাকেনা। (মাহমূদিয়া: ১১/৯৭, রদ্দুল মুহতার) সুতরাং সতর্ক হয়ে কিনার পরেও যা কিছুর ছবি থাকে তা ঢেকে নিয়ে নামাজ পড়লেই হয়।