শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

সূরা নাহলের কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা সব গুলো এক সাথে দিতে পারছি না। যদি আপনি আয়াত নাম্বার উল্লেখ করতেন তাহলে ভালো হতো।


সুরা নাহলের ৪৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ প্রশ্ন করছেন: 'তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুগুলোকে দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সিজদাবনত থেকে ডান ও বাম দিকে ঝুঁকে পড়ে?'

নানা বস্তুর ছায়ার ডান ও বাম দিকে হেলে যাওয়াকে এখানে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে বলা হচ্ছে এইসব বস্তু ও এমনকি ছায়াও মহান আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত থাকে। ছায়া জীবকুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটানা দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোর নীচে থাকতে হত আমাদেরকে ও সৃষ্টিকুলকে তাহলে সেসবই সজীবতা হারিয়ে শুকিয়ে যেত ও বা মরে যেত। পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'আল্লাহকে সিজদা করে সমস্ত বিচরণশীল জীব যা কিছু নভোমণ্ডলে আছে এবং যা কিছু ভূমণ্ডলে আছে ও ফেরেশতারাও; তারা অহংকার করে না।'

সিজদার তাৎপর্য হল চরম বিনয় প্রকাশ। যখন সব অস্তিত্বই আল্লাহর সামনে নতজানু তখন মানুষ কেন অহংকার করবে ও দুর্বিনত হবে? আল্লাহর সব সৃষ্টিই বিশ্বজগতের অভিন্ন বা সাধারণ বিধানের কাছে নতজানু। মহান আল্লাহই দিয়েছেন এইসব বিধান। তাই বলা যায় যে সবাইই আল্লাহর কাছে নতজানু রয়েছে। 

সুরা নাহলের ৬৫ নম্বর আয়াত থেকে পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে মহান আল্লাহর নানা নেয়ামতের কথা এসেছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং এর মাধ্যমে মৃত জমিনকে দান করেন জীবন।

বৃষ্টির ফলে শুকিয়ে যাওয়া প্রান্তরে জন্ম নেয় নানা উদ্ভিদ ও গাছপালা এবং এর ফলে পাখি, কীট-পতঙ্গ ও নানা ধরনের প্রাণীর কোলাহলে মুখরিত হয় ভূপৃষ্ঠ। এটা মহান আল্লাহর এক মহতী সৃষ্টি-নৈপুণ্য! এর পর সুরা নাহলের ৬৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ চতুষ্পদ জন্তুর উপকারিতা প্রসঙ্গে বলছেন,

'(৬৬) নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য তৃণভোজী গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্যেও শিক্ষা রয়েছে। আমি তাদের উদরের হজম হওয়া খাদ্য ও রক্তের মধ্য থেকে নিঃসৃত বিশুদ্ধ দুধ পান করাই যা পানকারীদের জন্য অতি সুস্বাদু।'

এটা কি মহাবিস্ময়ের বিষয় নয় যে গরু ও ছাগল বা অন্য কোনো গৃহপালিত পশু ঘাস ও খড় জাতীয় খাবার খেয়ে মানুষকে দিচ্ছে অতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পানীয় দুধ?  

সুরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে এসেছে মৌমাছির প্রসঙ্গ:

'(৬৮) তোমার প্রতিপালক মধু মক্ষিকাকে (তার সহজাত প্রবৃত্তিতে) প্রত্যাদেশ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘর বানাও পাহাড়ে, গাছে ও মানুষের ঘরের ওপর । (৬৯) এরপর সব ধরনের ফল হতে (কিছু কিছু) খাও, এরপর তোমার প্রতিপালকের পথে বিনয়ের সাথে চলতে থাক; তার (মক্ষিকার) পেট থেকে নানা বর্ণের পানীয় নির্গত হয় এবং তাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য; নিশ্চয়ই চিন্তাশীলদের জন্য এতেও নিদর্শন রয়েছে।'

মৌমাছি এক বিস্ময়কর প্রাণী। এরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সামাজিক জীব। ৬ কোণাকৃতির মৌচাক গঠনের শৈলী দেখে যে কোনো বড় প্রকৌশলী স্বীকার করবেন যে মৌমাছি অত্যন্ত বড় মাপের প্রকৌশলী। মৌমাছির কাজ নির্ভুল ও নিখুঁত। কখনও পাহাড়ের সুউচ্চ শৃঙ্গে ও কখন ও বা কারো বাড়ির ছাদে এবং কখনওবা গাছের ডালে এর মৌচাক বানায়। মৌমাছিরা সকাল বেলায় মৌচাক থেকে বের হয়ে ফুলের সন্ধান করে। তারা রহস্যময় পদ্ধতিতে অন্য মৌমাছিদের জানিয়ে দেয় যে অমুক এলাকায় বা স্থানে প্রচুর ফুল পাওয়া যায় এবং তাদের মৌচাক থেকে ওই ফুল গাছগুলোর অবস্থান কোন দিকে ও কত দূরে তাও তারা জানিয়ে দেয় সহকর্মীদেরকে! এরপর তারা নানা ফুলের মধু খেতে থাকে। ফলে মৌমাছি থেকে যে সুপেয় পানিয় বের হয় তা আসলে নানা বর্ণের ফুল ও ফলেরই নির্যাস। এই পবিত্র পানিয় মানুষের অনেক রোগের মহৌষধ। মধু উৎপাদনসহ মৌমাছির সার্বিক তৎপরতা মহান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতা ও মহত্ত্বের নিদর্শন।

সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে সামাজিক ও নৈতিক বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে: 

'আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।'

এ আয়াতের বক্তব্য বা নির্দেশনা ইসলামের এক বিশ্বজনীন ইশতেহার। এখানে উল্লেখিত ন্যায়বিচার হচ্ছে এমন এক বিষয় যে গোটা সৃষ্টি জগত চলছে এরই ভিত্তিতে। পানিতে ও স্থলের  বিপর্যয়গুলো মানুষেরই অবিচারের পরিণতি মাত্র । ন্যায়বিচার ছাড়া মানব সমাজের সুস্থ ও মানবিক অস্তিত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। তবে শুধু ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সদাচার ও ইহসান বা দয়ার্দ্র আচরণও জরুরি। সমাজের ওপর এ দুয়ের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, 'ন্যায়বিচার তা যা মানুষের অধিকার আদায় করে। আর ইহসান হল মানুষের প্রতি দয়া করা।'  পৃথিবীতে যদি ন্যায়বিচার ও ইহসান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দূর হয়ে যায় সব দুর্নীতি ও অশ্লীলতা আর জুলুম তাহলে পৃথিবী হবে সমৃদ্ধ ও প্রশান্ত।

এক ব্যক্তি তার এক প্রতিবেশীর কিছু জমি অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল। ওই প্রতিবেশী মহানবী (সা.)'র কাছ এ ব্যাপারে অভিযোগ করে। দখলদার ওই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং মহানবীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কসম খেতে রাজি হয়।  কিন্তু ওই ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে আরও একটু ভাবতে বলেন মহানবী (সা.)। এরপর একটি আয়াত নাজিল হয় যেখানে মিথ্যা শপথ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ আয়াতটি মহানবীর (সা.) কাছ থেকে শুনে ওই ব্যক্তি স্বীকার করে যে, ' হ্যাঁ, আমি তার কিছু জমি দখল করে রেখেছি, তবে জানি না, কতটুকু দখলে রেখেছি। এখন সে তার অংশ নিয়ে নিতে পারে ও এ পর্যন্ত তার জমি ব্যবহারের জন্য তাকে আরও কিছু অংশ দিতে চাই।' এ সময় সুরা নাহলের ৯৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। এতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

'যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে অবশ্যই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে আরও উত্তম প্রতিদান বা পুরষ্কার দেব।'

 এখানে পবিত্র জীবন বলতে সব ধরনের পাপাচার, মন্দ বিষয় ও অনিষ্ট থেকে মুক্ত জীবনকে বোঝানো হচ্ছে।  সামাজিক দিক থেকেও পবিত্র ব্যক্তি হবে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও অন্যদের বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ সুখী জীবনের অধিকারী। এমন ব্যক্তিদের সমাজে থাকবে না জুলুম, বিদ্রোহ ও খোদাদ্রোহীতা।

সুরা নাহলের ১১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ  মানুষকে হালাল ও পবিত্র খাদ্য খেতে এবং মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোর জন্য শোকর আদায় করতে বলেছেন। অন্য কথায় খাদ্য পবিত্র হলেও তা অর্জন করতে হবে বৈধ পন্থায়। অন্যদিকে ইসলাম বৈরাগ্যবাদকে তথা হালাল খাদ্য ও রিজিক বর্জনকে সমর্থন করের

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ