Call
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানাযা হয়েছে তবে কেউ ইমামতি করেননি। দলে দলে পর্যায়ক্রমে জানাযার নামায আদায় হয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর খননের সিদ্ধান্ত নিলে, তাঁরা আবূ উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ) এর নিকট খবর পাঠান। তিনি মক্কাবাসীদের কবর খননের ন্যায় কবর খনন করতেন। তাঁরা আবূ তালহা (রাঃ)-এর নিকটও খবর পাঠান। তিনি মদ্বীনাবাসীদের জন্য লাহাদ আকৃতির কবর খনন করতেন। তাঁরা তাদের উভয়ের নিকট দুজন লোক পাঠান। তারা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার রাসূলের জন্য আপনি পছন্দ করুন। তারা আবূ তালহা (রাঃ)-কে পেয়ে গেলেন এবং তাকে নিয়ে আসা হলো, কিন্তু আবূ উবাইদাহ (রাঃ)-কে পাওয়া গেলো না। অতএব আবূ তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য লাহদ কবর খনন করেন।

রাবী বলেন, মঙ্গলবার তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাফনের কাজ সম্পন্ন করলে তাঁকে তাঁর ঘরে খাটের উপর রাখা হয়। এরপর লোকজন দলে দলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করেন এবং তাঁর জন্য দুআ করেন। পুরুষদের পালা শেষ হলে মহিলারা প্রবেশ করেন। তাদের পালা শেষ হলে বালকরা প্রবেশ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জানাযায় কেউ ইমামতি করেননি। তাঁর কবর কোথায় খনন করা হবে, এ নিয়ে একদল বলেন, তাঁকে তার মসজিদে দাফন করা হবে। অপরদল বলেন, তাঁকে তাঁর সহাবীদের সাথে একই গোরস্থানে দাফন করা হবে। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে স্থানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।

রাবী বলেন, যে বিছানায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করেন, তারা তা সরিয়ে নেন এবং তাঁর জন্য সেখানে কবর খনন করেন। অতঃপর তাঁকে বুধবার মধ্যরাতে দাফন করা হয়। ‘আলী ইবনু আবূ তালিব, ফাদল ইবনু আব্বাস, তার ভাই কুসাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুক্তদাস শুকরান (রাঃ) তাঁর কবরে নামেন। আবূ লাইলা আওস ইবনু খাওলী (রাঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-কে বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ব্যাপারে আমাদেরও অংশ রয়েছে। আলী (রাঃ) তাকে বলেন, তুমিও নামো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুক্তদাস শুকরান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিহিত চাঁদরটি সাথে নিয়েছিলেন। তিনি তাও কবরে দাফন করেন এবং বলেন, আল্লাহর শপথ! আপনার পরে তা আর কেউ কখনো পরবে না। অতএব তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে দাফন করা হয়।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৬২৮ হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ)

সাহাবী সালিম ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সালাতের সময় হয়েছে কি? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে নির্দেশ দাও এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলো। অতঃপর তিনি আবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বলেন, সালাতের সময় হয়েছে কি? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে বলো এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কেঁদে ফেলবেন এবং ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরেই তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে বলো এবং আবু বকরকে লোকদের সালাত পড়াতে বলো। পুনরায় আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি ঐ ইমামতের জায়গায় দাঁড়ালে কেদে ফেলবেন এবং ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তো ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনার সাথে জড়িত মহিলাদের মতো। বর্ণনাকারী বলেন, বেলাল (রাঃ)-কে আযান দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান দেন এবং আবু বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি লোকদের সালাত পড়ান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা সুস্থতাবোধ করে বলেন, দেখতো! আমার ভর নেয়ার মতো কোন লোক পাওয়া যায় কি না? তখন বর্ণনাকারী ও অপর এক লোক এলে তিনি তাদের উপর ভর করেন এবং মসজিদে যান।

তাঁকে দেখে আবু বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসতে উদ্যোগী হলে তিনি তাকে স্বস্থানে স্থির থাকতে ইশারা করেন। এ অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) সালাত আদায় করান। অতঃপর সোমবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলে উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনব যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন আমি আমার তরবারি দিয়ে তাকে আঘাত করব। আর লোকদের এ ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ, তারা ইতোপূর্বে কোন নবীর মৃত্যু দেখেনি। তাই তারা নীরব থাকেন। কতিপয় সাহাবী বলেন, হে সালেম, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথীকে ডেকে আন। অতএব আমি আবু বকর (রাঃ) এর নিকট এলাম। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। আমি দিশেহারা হয়ে কান্নারত অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে দেখেই বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ইন্তেকাল করেছেন? আমি বললাম উমার (রাঃ) বলেছেন, যাকে এ কথা বলতে শুনবো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন আমি আমার এ তরবারী দ্বারা তাকে আঘাত করব। আবু বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, চলো। অতএব আমি তাঁর সাথে চললাম এবং তিনিও আসলেন। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখার জন্য লোকজন এসে সমবেত হয়েছে। তিনি বলেন, হে লোক সকল, আমার জন্য রাস্তা করে দাও। তিনি এসে তাঁর প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং কপালে চুম্বন করে এ আয়াত পড়েন,

অর্থাৎ নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও 'আপনার শক্ররা' মরণশীল। অতঃপর লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে রাসূলের সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ইন্তেকাল করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সবাই বিশ্বাস করলেন, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। তারা আবার জিজ্ঞেস করেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথী! আমরা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানাযা পড়ব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা জিজ্ঞেস করেন, তা কী নিয়মে? তিনি বললেন, একদল লোক প্রবেশ করবে, তারা তাকবীর বলবে, দুআ করবে এবং দরূদ পাঠ করবে। তারা বের হয়ে এলে আরেক দল প্রবেশ করে একই নিয়েম তাকবীর, দুআ ও দরূদ পড়ে বের হয়ে আসবে। এ নিয়মে জামাআত ছাড়া সকলে আলাদা আলাদা জানাযার সালাত আদায় করবে। তারা আবার জিজ্ঞেস করেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গী! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি দাফন করা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা জিজ্ঞেস করেন, কোথায়? তিনি বললেন, যে স্থানে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে সেখানেই। আল্লাহ তাঁর পছন্দের স্থানেই তাঁর জান কবয করেছেন। তখন সকলের বিশ্বাস হলো, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গোসল দেয়ার জন্য তাঁর পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকে আদেশ করেন। অতঃপর মুহাজিররা (খেলাফত প্রশ্নে) পরামর্শের জন্য মিলিত হন। মুহাজিররা আবু বকর (রাঃ)- কে বললেন, আমাদেরকে নিয়ে আনসার ভাইদের কাছে চলুন এবং এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের সাথে তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করব। আনসারগণ বললেন, আমাদের মধ্য হতে একজন আমীর এবং আপনাদের (মুহাজিরদের) মধ্য থেকে একজন আমীর হোক। তখন উমার (রাঃ) বললেন, এমন কে আছে, যে এই ঘটনার তৃতীয়জন 'যে ঘটনাটির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন'- দু’জনের একজন যখন তারা ছিল গুহার মধ্যে, যখন সে তাঁর সাথীকে বলল, বিচলিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। কারা ছিলেন সে দু’জন? বর্ণনাকারী বলেন, তারপর উমার (রাঃ) তাঁর হাত প্রসারিত করে দিয়ে আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তারপর লোকেরাও তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন।

(সহীহ শামায়েলে তিরমিযী, হাদিস নম্বরঃ ৩০৪ হাদিসের মানঃ সহিহ)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ