ওয়াদা তো সে আগে ভঙ্গ করেছে দোষটা তো তার, আর আপনি এখন ওয়াদা রক্ষার জন্য তো আর আরেক জনের স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবেন না। আর প্রেম করে ওয়াদা করাই তো জায়েজ না। যেন ব্যাপারটা এমন, একজন বন্ধুকে ওয়াদা করলো আগামীদিন দুজনএক সাথে নেশা করবে কিন্তু সে যথা সময় যথা স্থানে উপস্থিত থাকলেও তার বন্ধু যথা স্থানে আসলো না অতপর ওয়াদা ভঙ্গ হলো।
ইসলামী পরিভাষায় কোনো লোকের সঙ্গে অপর কোনো ব্যক্তি অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো কথা দিলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। ওয়াদাঃ প্রতিশ্রুতি বা প্রতিজ্ঞা পালন করা মানব জীবনের একটি মহত্তম গুণ। যা পালন করা কঠিনতম সর্বোতকৃষ্ট কাজ। প্রতিশ্রুতি পালন করা যেন ঈমানের একটি অঙ্গ। ইসলাম এসব প্রতিশ্রুতি পালন করার জোরালো তাকিদ প্রদান করেছে। আল্লাহ তাআলা ওয়াদা পালনকারীকে ভালোবাসেন। প্রতিশ্রুতি পালন করা আল্লাহর একটা অন্যতম গুন। আল্লাহ তাআলা নিজে প্রতিশ্রুতি পালন সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ করেনঃ জেনে রাখ! আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহর-ই। জেনে রাখ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না। (সূরা ইউনুসঃ ৫৫) আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেনঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে খুবই অসন্তোষজনক। (সুরা সফঃ ২/৩) আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা পালনকারীকে ভালোবাসেন। প্রতিশ্রুতি পালন করা আল্লাহর একটা অন্যতম গুন। ওয়াদা ভঙ্গকারীকে ইসলামে ভৎসনা করে, এমনকি ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ইসলামে প্রতিশ্রুতি পালন বাধ্যতামূলক। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ ওয়াদা পূর্ণ কর, ওয়াদা সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনি ইসরাইলঃ ৩৪) জনাব! বর্তমানে যেহেতু মেয়েটির অন্য ব্যাক্তির সাথে বিয়ে হয়ে গেছে এতে আপনার করার কিছু নেই। আর আপনার পরিবার যদি আপনাকে বিয়ে করাতে চেষ্টা করে তখন করণীয় হচ্ছে বিয়ে করে নেওয়া। আর এই ধরনের ওয়াদা থেকে বের হতে ইসলামে কোন সমাধান নেই। তবে উক্ত কথার জন্য তওবা করুন। কেবল মাত্র শপথ বা কসম ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। এ পাকড়াও থেকে অব্যাহতির কাফফারা হলোঃ ১. দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো যা নিজেরা খায়। অথবা প্রত্যেক মিসকিনকে অর্ধ সা করে খাদ্য প্রদান করবে। আমাদের দেশের ওজন অনুপাতে প্রায় সোয়া এক কেজি। (তাফসীর মুয়াসসার।) ২. অথবা দশজন দরিদ্রকে পোশাক প্রদান করা, যা দ্বারা সালাত আদায় করা যেতে পারে। কোন কোন আলিম খাদ্য ও পোশাক সমাজের প্রচলিত নিয়ম নীতিকে অনুসরণীয় মনে করেন। ৩. অথবা একজন দাস বা দাসী আযাদ করা। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ আয়াতটি ব্যাপক। তাই দাস, মুমিন হোক বা কাফির যেকোন একটি আযাদ করলেই হবে। (তাফসীর ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) ৪. উল্লিখিত তিনটির যে কোন একটি পালনে অক্ষম হলে তাকে তিন দিন সওম বা রোযা পালন করতে হবে। তিনদিন ধারাবাহিকভাবে, না ভেঙ্গে ভেঙ্গে সওম রাখবে তা নিয়ে মতানৈক্য পাওয়া যায়। সঠিক কথা হলো উভয় অবস্থাই বৈধ। (আয়সারুত তাফাসীর, ১/৫৬৪)