Call

শপথ ভঙ্গ করলে তওবা করতে হবে এমন ভাবে যে ঐ কাজ আগামীতে দ্বিতীয় বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। এবং আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ তওবা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা 'প্রত্যাবর্তন' কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূরঃ ৩১) অর্থাৎ তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট 'পাপের জন্য' ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা 'প্রত্যাবর্তন' কর। (সূরা হূদঃ ৩) তিনি আরো বলেছেন, অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। (সূরা তাহরীমঃ ৮) কোনো ব্যক্তি শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা স্বরূপ তিনটি কাজের মধ্যে যেকোনো একটি কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে খুবই অসন্তোষজনক। (সুরা সফঃ ২/৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। এ পাকড়াও থেকে অব্যাহতির কাফফারা হলোঃ দশ জন মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোযা পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। আল্লাহ তার আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য বিষদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (সুরা মায়েদাঃ ৮৯) শপথ তিন প্রকার। ১. لغو (অনর্থক) এমন শপথকে বলে যা মানুষ কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে।যেমন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম। না, আল্লাহর কসম ইত্যাদি। এ শপথের কোন কাফফারা বা পাকড়াও নেই। ২. غموس (মিথ্যা শপথ) অতীতকালের কোন বিষয়ে জেনে বুঝে মিথ্যা শপথ করা। যেমন কোন কাজ করেছে, মিথ্যা শপথ করে বলল করিনি। অনুরূপ কোন কাজ করেনি, মিথ্যা শপথ করে বলল করেছি। এ প্রকার শপথ এতই মারাত্মক যে, দুনিয়াতে এর কোন কাফফারা নেই। এটা কবীরা গুনাহ যা তাওবাহ ব্যতীত ক্ষমা হবে না। ৩. منعقدة ঐ শপথকে বলে যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়্যতসহ ভবিষ্যতে কোন কিছু করা বা না করার ব্যাপারে শপথ করে। কেউ এ ধরণের শপথ করে ভঙ্গ করলে তার কাফফারা হলোঃ ১. দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো যা নিজেরা খায়। অথবা প্রত্যেক মিসকিনকে অর্ধ সা করে খাদ্য প্রদান করবে। আমাদের দেশের ওজন অনুপাতে প্রায় সোয়া এক কেজি। (তাফসীর মুয়াসসার।) ২. অথবা দশজন দরিদ্রকে পোশাক প্রদান করা, যা দ্বারা সালাত আদায় করা যেতে পারে। কোন কোন আলিম খাদ্য ও পোশাক সমাজের প্রচলিত নিয়ম নীতিকে অনুসরণীয় মনে করেন। ৩. অথবা একজন দাস বা দাসী আযাদ করা। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ আয়াতটি ব্যাপক। তাই দাস, মুমিন হোক বা কাফির যেকোন একটি আযাদ করলেই হবে। (তাফসীর ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) ৪. উল্লিখিত তিনটির যে কোন একটি পালনে অক্ষম হলে তাকে তিন দিন সওম বা রোযা পালন করতে হবে। তিনদিন ধারাবাহিকভাবে, না ভেঙ্গে ভেঙ্গে সওম রাখবে তা নিয়ে মতানৈক্য পাওয়া যায়। সঠিক কথা হলো উভয় অবস্থাই বৈধ। (আয়সারুত তাফাসীর, ১/৫৬৪) অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা শপথকে সংরক্ষণ করতে বলেছেন। অর্থাৎ অযথা শপথ করা থেকে বিরত থাক, আর শপথ করে ফেললেই পরিপূর্ণভাবে পূর্ণ কর, অথবা পূর্ণ না করতে পারলে যথাযথ কাফফারা আদায় করে দাও। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ২২৫ নং আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেন না। কিন্তু তোমাদের অন্তরের সঙ্কল্পের জন্য দায়ী করবেন। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ