Call
ওয়াদাঃ প্রতিশ্রুতি বা প্রতিজ্ঞা পালন করা মানব জীবনের একটি মহত্তম গুণ। যা পালন করা কঠিনতম সর্বোতকৃষ্ট কাজ। প্রতিশ্রুতি পালন করা যেন ঈমানের একটি অঙ্গ। ইসলাম এসব প্রতিশ্রুতি পালন করার জোরালো তাকিদ প্রদান করেছে। আল্লাহ তাআলা ওয়াদা পালনকারীকে ভালোবাসেন। প্রতিশ্রুতি পালন করা আল্লাহর একটা অন্যতম গুন। আল্লাহ নিজে প্রতিশ্রুতি পালন সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ করেনঃ

জেনে রাখ! আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহর-ই। জেনে রাখ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না। (সূরা ইউনুসঃ ৫৫)

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেনঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে খুবই অসন্তোষজনক। (সুরা সফঃ ২/৩)

জনাব! প্রশ্নে উল্লেখিত উক্ত কারণে কাফফারা আদায় করতে হবে না। শুধুমাত্র কসম ও শপথের ক্ষেত্রেই কাফফারা প্রযোজ্য তবুও তা শর্ত সাপেক্ষে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত ভাবে তা আলোচনা করা হলো।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন।

এ পাকড়াও থেকে অব্যাহতির কাফফারা হলোঃ

দশ জন মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোযা পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। আল্লাহ তার আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য বিষদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (সুরা মায়েদাঃ ৮৯)

শপথ তিন প্রকার।

১. لغو (অনর্থক) এমন শপথকে বলে যা মানুষ কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে।যেমন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম। না, আল্লাহর কসম ইত্যাদি। এ শপথের কোন কাফফারা বা পাকড়াও নেই।

২. غموس (মিথ্যা শপথ) অতীতকালের কোন বিষয়ে জেনে বুঝে মিথ্যা শপথ করা। যেমন কোন কাজ করেছে, মিথ্যা শপথ করে বলল করিনি। অনুরূপ কোন কাজ করেনি, মিথ্যা শপথ করে বলল করেছি। এ প্রকার শপথ এতই মারাত্মক যে, দুনিয়াতে এর কোন কাফফারা নেই। এটা কবীরা গুনাহ যা তাওবাহ ব্যতীত ক্ষমা হবে না।

৩. منعقدة ঐ শপথকে বলে যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়্যতসহ ভবিষ্যতে কোন কিছু করা বা না করার ব্যাপারে শপথ করে।

কেউ এ ধরণের শপথ করে ভঙ্গ করলে তার কাফফারা হলোঃ

১. দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো যা নিজেরা খায়। অথবা প্রত্যেক মিসকিনকে অর্ধ সা করে খাদ্য প্রদান করবে। আমাদের দেশের ওজন অনুপাতে প্রায় সোয়া এক কেজি। (তাফসীর মুয়াসসার।)

২. অথবা দশজন দরিদ্রকে পোশাক প্রদান করা, যা দ্বারা সালাত আদায় করা যেতে পারে। কোন কোন আলিম খাদ্য ও পোশাক সমাজের প্রচলিত নিয়ম নীতিকে অনুসরণীয় মনে করেন।

৩. অথবা একজন দাস বা দাসী আযাদ করা। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ আয়াতটি ব্যাপক। তাই দাস, মুমিন হোক বা কাফির যেকোন একটি আযাদ করলেই হবে। (তাফসীর ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

৪. উল্লিখিত তিনটির যে কোন একটি পালনে অক্ষম হলে তাকে তিন দিন সওম বা রোযা পালন করতে হবে। তিনদিন ধারাবাহিকভাবে, না ভেঙ্গে ভেঙ্গে সওম রাখবে তা নিয়ে মতানৈক্য পাওয়া যায়। সঠিক কথা হলো উভয় অবস্থাই বৈধ। (আয়সারুত তাফাসীর, ১/৫৬৪)

অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা শপথকে সংরক্ষণ করতে বলেছেন। অর্থাৎ অযথা শপথ করা থেকে বিরত থাক, আর শপথ করে ফেললেই পরিপূর্ণভাবে পূর্ণ কর, অথবা পূর্ণ না করতে পারলে যথাযথ কাফফারা আদায় করে দাও। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ২২৫ নং আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে যে,

মহান আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেন না। কিন্তু তোমাদের অন্তরের সঙ্কল্পের জন্য দায়ী করবেন। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

ওয়াদা ভঙ্গের কাফফারা দিতে হয়না।শরীয়তের এর কোন নিয়ম নেই।তবে ওয়াদা ভঙ্গ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। কারণ, হাদিসে মুনাফিক দের একটি নিদর্শন হিসেবে ওয়াদা ভঙ্গ করাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।এতদা সত্বেও আপনার এ ওয়াদা ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ‌ওয়া বুঝায়;যা তাওবার অংশ। কারণ,তাওবা পূর্ণ হয় তিনটি কাজের মাধ্যমে; তন্মধ্যে একটি, ভবিষ্যতে সেই কাজ পুনরায় না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ‌ওয়া।(এখানে যান।) আর তাওবার মধ্যে অটল না থাকতে পারলে পুনরায় তাওবা করতে হয়।তাই আপনি পুনরায় তাওবা করুন!ইস্তেগফার করুন!এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার বাণী এভাবে বর্ণনা করেছেন;আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি, এক বান্দা গুনাহ্ করল। বর্ণনাকারী أَصَابَ ذَنْبًا  না বলে কখনো أَذْنَبَ ذَنْبًا  বলেছেন। তারপর সে বলল, হে আমার রবব! আমি তো গুনাহ্ করে ফেলেছি। বর্ণনাকারী أَذْنَبْتُ -এর স্থলে কখনো  أَصَبْتُ  বলেছেন। তাই আমার গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও। তার প্রতিপালক বললেনঃ আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন রবব যিনি গুনাহ্  ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছে অনুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গুনাহ্তে জড়িয়ে গেল। বর্ণনাকারীর সন্দেহ  أَصَابَ ذَنْبًا কিংবা أَذْنَبَ ذَنْبًا বলা হয়েছে। বান্দা আবার বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ্ করে বসেছি। এখানে أَصَبْتُ  কিংবা أَذْنَبْتُ বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ্ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ্ বললেনঃ আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার আছে একজন রবব যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল সে অবস্থায় থাকল। আবারও সে গুনাহ্তে জড়িয়ে গেল। এখানে أَصَابَ ذَنْبًا কিংবা أَذْنَبَ ذَنْبًا বলা হয়েছে। সে বলল, হে আমার রবব! আমি তো আরো একটি গুনাহ্ করে ফেলেছি। এখানে أَصَبْتُ  কিংবা أَذْنَبْتُ বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ্ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ্ বললেনঃ আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রবব আছেন, যিনি গুনাহ্ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরকম তিনবার বললেন।সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৫০৭ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ