আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন..." (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত নং ৮)
এখানে খাঁটি, বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হলোঃ
(ক) তওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে।
(খ) যে গুনাহ হতে তওবা করা হচ্ছে, তা সত্বর ত্যাগ করতে হবে।
(গ) এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
(ঘ) আগামীতে এই গুনাহ 'আর করব না' বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
(ঙ) যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। পক্ষান্তরে কেবল মৌখিক তওবা করার কোন অর্থ হয় না।
মহাশয়, একাধিক তওবা মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তওবা করতে হবে একেবারে খাঁটি অন্তরে ও নিষ্ঠাপূর্ণ রূপে। তাই, আপনি খাঁটি দিল-এ তওবা করুন, আর মনে করুন - একাজটি আপনি আর কখনো করবেন না। তাহলেই, এর থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
পরিত্রাণের পদ্ধতি:
তাওবা করার জন্য জন্য কয়েকটি শর্ত আছে। একজন ব্যক্তি যখন সেই শর্তগুলো পূরণ করত তাওবা করে তখন তার তাওবা তুলনামূলক বেশি ফলপ্রসূ হয়। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
১. পাপ কাজ ছেড়ে দিতে হবে।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটির কথা মহান আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে সেসব কাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেগুলোতে ফিরে না যাওয়ার মজবুত প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন গুনাহ করে ফেলে অতঃপর উঠে ওযূ করে ২ রাকআত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ মাফ করে দেন।”
অতঃপর মহানবী (সাঃ) এই আয়াত তেলাওয়াত করেন:-
)وَالَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوْا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ، وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ الله، وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلَى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ، أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَّغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا(
অর্থাৎ, আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে (পাপ করে) ফেলে অতঃপর সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা জেনে-শুনে নিজেদের অপরাধের উপর হ্ঠকারিতা করে না। ঐ সকল লোকেদের পুরস্কার হল তাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা এবং সেই বেহেশ্ত যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। (সুনানে আব দাঊদ: হা. নং ১৫২১, সহিহ তারগিব: হা. নং ৬৭৭)
সুতরাং আপনি উপর্যুক্ত আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন এবং তদানুযায়ী আমল করার চেষ্টা করুন। আশাকরি ফল পাবেন। আপনার প্রতি শুভ কামনা রইল।
হাদীসে এসেছে, মুসলমানরা ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। অর্থাৎ আপনি তওবা করে যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআন-হাদীসকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত পাপ থেকে দূরে থাকবেন। আর যখনই কুরআন-হাদীস আঁকড়ে ধরা থেকে দূরে সরে যাবেন, তখনই আবার পাপ করা শুরু করে দিবেন। কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে না ধরার কারণে মানুষ বার বার তওবা করেও বার বার পাপ করে। তাই কুরআন-হাদীসকে পূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে ও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। তাহলে আমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবো না। ধন্যবাদ।