আপনি হয়তো জানেন সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পবিত্র কোরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রয়োজনে আয়াত সমূহ অবতীর্ণ হয়েছে। মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ববর্তী যুগে মানুষ ছিল অনেকটা বর্বর প্রাণী। শালীনতা, ভদ্রতা পৃথিবীতে ছিল না বললেই চলে। পূর্ববর্তী নবী রাসুল গণের পথ ছেড়ে দিয়ে অশ্লীলতার পথ বেছে নিয়েছিল সবাই। ধীরে ধীরে যখন কোরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে, ইসলাম অনুসারীরা শক্তিশালী হয়েছে ঈমানের বলে, তখন পরবর্তী ধাপের নিয়ম কার্যকর হয়েছে। আল্লাহর সব কিছুই জানা আছে। এই কোরআন মাজিদ লওহে মাহফুজ এ লিপিবদ্ধ করা ছিল। সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে তা পৃথিবীতে এসেছে। বর্ণীত হাদীস দ্বারা উমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু আয়াত নাজিল করাননি বরং সেই সময় আয়াত সমূহ অবতীর্ণ হবার উপযুক্ত সময় হয়েছিল। ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করার সময় আরো বেশি শালীন ভাষা ব্যবহার করতে আমি একজন মুসলিম হিসেবে অনুরোধ করছি।
নারীদের পর্দার কথা আল্লাহ বা নবীর মাথায় আসে নি কেন? কথাটি একেবারেই ভুল। কেননা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর স্হান, কাল, অবস্হার পরিপেক্ষিতে যখন যতটুকু প্রয়োজন তখন ততটুকু-ই নাযিল হয়েছে। এবং তিনি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী-ই আমল করার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী। আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ রাতের বেলায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে খোলা ময়দানে যেতেন। আর উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতেন, আপনার স্ত্রীগণকে পর্দায় রাখুন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী সওদাহ বিন্তু যামআহ (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী। উমার (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, হে সওদা! আমি কিন্তু তোমাকে চিনে ফেলেছি। যেন পর্দার হুকুম অবতীর্ণ হয় সেই উদ্দেশ্যেই তিনি এ কথা বলেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা পর্দার হুকুম অবতীর্ণ করেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ ১৪৬) এর পর পর্দার হুকুম নাযিল হয়। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। (নুরঃ ৩১) অর্থাৎ তারা যেন বক্ষদেশে ওড়না ফেলে রাখে। خُمُر শব্দটি خمار এর বহুবচন। অর্থ ঐ কাপড়, যা নারী মাথায় ব্যবহার করে এবং তা দ্বারা গলা ও বক্ষ আবৃত হয়ে যায়। خيوب শব্দটি خيب এর বহুবচন- এর অর্থ জামার কলার। [কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] জাহেলী যুগে মহিলারা মাথায় এক ধরনের আঁটসাঁট বাঁধন দিতো। মাথার পেছনে চুলের খোঁপার সাথে এর গিরো বাঁধা থাকতো। সামনের দিকে বুকের একটি অংশ খোলা থাকতো। সেখানে গলা ও বুকের উপরের দিকের অংশটি পরিষ্কার দেখা যেতো। বুকে জামা ছাড়া আর কিছুই থাকতো না। পেছনের দিকে দুটো তিনটে খোঁপা দেখা যেতো। তাই মুসলিম নারীদেরকে আদেশ করা হয়েছে তারা যেন এরূপ না করে; বরং ওড়নার উভয় প্রান্ত পরস্পর উল্টিয়ে রাখে, এতে করে যেন সকল অঙ্গ আবৃত হয়ে পড়ে। [ইবন কাসীর] আয়াত নাযিল হবার পর মুসলিম মহিলাদের মধ্যে ওড়নার প্রচলন করা হয়। মু’মিন মহিলারা কুরআনের এ হুকুমটি শোনার সাথে সাথে যেভাবে একে কার্যকর করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার প্রশংসা করে বলেনঃ সূরা নূর নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে وَلْيَضْرِبْنَ جِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيُوْبِهِنَّ বাক্যাংশ শোনার পর তারা নিজের কোমরে বাঁধা কাপড় খুলে নিয়ে আবার অনেকে চাদর তুলে নিয়ে সংগে সংগেই ওড়না বানিয়ে ফেলল এবং তা দিয়ে শরীর ঢেকে ফেললো। [বুখারীঃ ৪৭৫৯] অন্য বর্ণনায় এসেছে, উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, যখন وَلْيَضْرِبْنَ جِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيُوْبِهِنَّ এ আয়াত নাযিল হলো, তখন তাদের মাথা এমনভাবে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলল মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর কাক রয়েছে। [আবু দাউদঃ ৪১০১] এ সম্পর্কিত অন্য একটি হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আরো বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেনঃ আল্লাহ্ প্রথম যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহমত নাযিল করুন তারা وَلْيَضْرِبْنَ جِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيُوْبِهِنَّ নাযিল হওয়ার পরে পাতলা কাপড় পরিত্যাগ করে নিজেদের মোটা কাপড় বাছাই করে তা দিয়ে ওড়না তৈরী করে। [আবু দাউদঃ ৪১০২] কেন উমর (রাঃ) কে এই ব্যাপারে কুরআনের আয়াত নাজিল করাতে হয়েছিল? এখানে উমর এর কথাতে পর্দার বিধান নাযিল হয়নি। বরং তখন প্রয়োজন ছিল বিধায় আল্লাহ তা করেছিলেন। এবং উমর এরুপ মন্তব্য করেছেন।