আমার ছোট বোন কে জিন আছর করেছিল আর আমাকেও অনেকখানি নজর দিয়েছিল কারণ আমরা এক সাথেই থাকি।ওকে হুজুরের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর হুজুর ওকে আল্লাহর কালাম দিয়ে পানি পরা তেল পরা তাবিজ দিয়েছে।ঘর বন্ধ করে দিয়েছে তাবিজ দিয়ে।সাথে আজানও দিয়েছে।আমাকেও তাবিজ দিয়েছে।আমার বোনকে যে সত্যিই জিনে ধরেছিল তার প্রমাণ আমরা ২ বার পাই।আল্লাহর রহমতে এখন ও সুস্থ হওয়ার পথে।কিন্তু তাবিজ ব্যবহার করা নাকি শিরক।যদি শিরক হয় তাহলে হুজুর রা কেন তাবিজ দেয়?আর যদি শিরক হয় তাহলে জিন দের কুনজর থেকে আমরা আদম সন্তান রা কিভাবে নিজেদের কে রহ্মা করবো?আমি যদি তাবিজ খুলে ফেলি তাহলে জিনের কুনজরে আবার পরবো হয়তো।আর যদি তাবিজ ব্যবহার করি তাহলে নাকি এতে শিরক হবে।আমি এখন কি করবো???
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Habib96

Call

ইসলামে কয়েক প্রকার তাবিজ জায়েজ নয়। যথা- ১-কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল বা লোহা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত হওয়া যাবে বিশ্বাস করে তা লটকানো নাজায়িজ। ২-এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত শিরকী কথা লিপিবদ্ধ থাকে। ৩-তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ লটকানো। এ বিশ্বাস জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম সম্পর্কে কিছু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে। ৪-যে কালামের অর্থ জানা যায় না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা। ৫-আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা। এ সকল সুরতে সর্বসম্মত মতানুসারে নাজায়িজ ও হারাম এবং শিরক। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাবিজে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুআয়ে মাসুরা বা শিরকমুক্ত অর্থবোধক থাকলে তা অবশ্যই জায়িজ। একে নাজায়িজ ও শিরক বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। কেননা এসব তাবিজের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত তথা আরোগ্যের ক্ষমতা আল্লাহ তাআলাকেই মনে করা হয়। যেমন ডাক্তার প্রদত্ত ঔষদের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত আল্লাহকে মনে করার কারণে তা নাজায়িজ নয়। যদি মুয়াসসার বিজজাত ঐ ঔষধকে মনে করলে ঔষধ সেবনও শিরক ও হারাম হবে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দলিল ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺷُﻌَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﺰَﻉِ ﻛَﻠِﻤَﺎﺕٍ : ‏« ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻣِﻦْ ﻏَﻀَﺒِﻪِ ﻭَﺷَﺮِّ ﻋِﺒَﺎﺩِﻩِ، ﻭَﻣِﻦْ ﻫَﻤَﺰَﺍﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ ﻭَﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻀُﺮُﻭﻥِ ‏» ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻋُﻤَﺮَ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻦَّ ﻣَﻦْ ﻋَﻘَﻞَ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻴﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻘِﻞْ ﻛَﺘَﺒَﻪُ ﻓَﺄَﻋْﻠَﻘَﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻣِﻦْ ﻏَﻀَﺒِﻪِ ﻭَﺷَﺮِّ ﻋِﺒَﺎﺩِﻩِ، ﻭَﻣِﻦْ ﻫَﻤَﺰَﺍﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ ﻭَﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻀُﺮُﻭﻥِ দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫} এ হাদীস স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তাঁর অবুঝ সন্তানদের জন্য তাবীজ লিখে তা লটকিয়ে দিতেন। যারা বলেন যে, সকল তাবিজই শিরক, তাহলে আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ কি শিরক করেছেন? নাউজুবিল্লাহ! যে সব হাদীসে তাবীজকে হারাম শিরক বলা হয়েছে এর জবাব কি? হাদীস দেখেই ফাতওয়া দেয়া যায় না। হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা থাকতে হয়। তাবীজ কবচ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসে সেসব তাবীজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেসব তাবীজের কথা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখিত ৫ ধরণের নিষিদ্ধ তাতো আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। নিষিদ্ধতার হাদীসে কেবল সেসবই উদ্দেশ্য। এ কারণেই আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তার সন্তানদের তাবিজ দিতেন। যাতে উল্লেখিত শর্তের কোনটি বিদ্যমান নয়। দেখুন বিজ্ঞ ওলামা ও ফক্বীহরা কী বলেন? আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে লিখেন- ﻭَﺍﻟﺘَّﻤَﺎﺋِﻢُ ﺟَﻤْﻊُ ﺗَﻤِﻴﻤَﺔٍ ﻭَﻫِﻲَ ﺧَﺮَﺯٌ ﺃَﻭْ ﻗِﻠَﺎﺩَﺓٌ ﺗُﻌَﻠَّﻖُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱِ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﻌْﺘَﻘِﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻳَﺪْﻓَﻊُ ﺍﻟْﺂﻓَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﺘِّﻮَﻟَﺔُ ﺑِﻜَﺴْﺮِ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﺎﺓِ ﻭَﻓَﺘْﺢِ ﺍﻟْﻮَﺍﻭِ ﻭَﺍﻟﻠَّﺎﻡِ ﻣُﺨَﻔَّﻔًﺎ ﺷَﻲْﺀٌ ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺗَﺠْﻠِﺐُ ﺑِﻪِ ﻣَﺤَﺒَّﺔَ ﺯَﻭْﺟِﻬَﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﺿَﺮْﺏٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴِّﺤْﺮِ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ﻟِﺄَﻧَّﻬُﻢُ ﺃَﺭَﺍﺩُﻭﺍ ﺩَﻓْﻊَ ﺍﻟْﻤَﻀَﺎﺭِّ ﻭَﺟَﻠْﺐَ ﺍﻟْﻤَﻨَﺎﻓِﻊِ ﻣِﻦْ ﻋِﻨْﺪِ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﺄَﺳْﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻛَﻠَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺛَﺒَﺖَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﺍﺳْﺘِﻌْﻤَﺎﻝُ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺒْﻞَ ﻭُﻗُﻮﻋِﻪِ তামায়েম শব্দটি তামীমা শব্দের বহুবচন। যা পুঁতি বা মালা সাদৃশ্য। মাথায় লটকানো হয়। জাহেলী যুগে বিশ্বাস করা হতো যে, এর দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়া যায়, মহিলারা এসব ব্যবহার করতো স্বামীর মোহাব্বত অর্জন করতে। এটি জাদুরই একটি প্রকার। এটি শিরকের অন্তুর্ভূক্ত। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের থেকে বিপদমুক্ত হওয়া ও উপকার অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এ শিরকের অন্তুর্ভূক্ত হবে না যেসব তাবীজ কবচে আল্লাহর নাম বা কালাম থাকে। {ফাতহুল বারী-১০/২৯০-২৯১, ঝারফুক অধ্যায়} মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন- ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺘَﺐَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﻨُّﺸْﺮَﺓَ، ﻭَﻫِﻲَ ﻛَﺎﻟﺘَّﻌْﻮِﻳﺬِ . ﻭَﺍﻟﺮُّﻗْﻴَﺔِ، ﻭَﺍﻟْﻤُﺮَﺍﺩُ ﺑِﺎﻟﻀَّﻤِﻴﺮِ ﺍﻟْﺒَﺎﺭِﺯِ ﻓِﻲ ﻗَﻮْﻟِﻪِ : ‏( ﻓَﻘَﺎﻝَ ‏) : ﺃَﻱِ : ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏( ﻫُﻮَ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ‏) : ﺍﻟﻨَّﻮْﻉُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳُﻌَﺎﻟِﺠُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﻌْﺘَﻘِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻴﻪِ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺂﻳَﺎﺕِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻧِﻴَّﺔِ، ﻭَﺍﻟْﺄَﺳْﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟﺼِّﻔَﺎﺕِ ﺍﻟﺮَّﺑَّﺎﻧِﻴَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺪَّﻋَﻮَﺍﺕِ ﺍﻟْﻤَﺄْﺛُﻮﺭَﺓِ ﺍﻟﻨَّﺒَﻮِﻳَّﺔِ، ﻓَﻠَﺎ ﺑَﺄْﺱَ، ﺑَﻞْ ﻳُﺴْﺘَﺤَﺐُّ ﺳَﻮَﺍﺀٌ ﻛَﺎﻥَ ﺗَﻌْﻮِﻳﺬًﺍ ﺃَﻭْ ﺭُﻗْﻴَﺔً ﺃَﻭْ ﻧَﺸْﺮَﺓً، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻟُﻐَﺔِ ﺍﻟْﻌِﺒْﺮَﺍﻧِﻴَّﺔِ ﻭَﻧَﺤْﻮِﻫَﺎ، ﻓَﻴَﻤْﺘَﻨِﻊُ ﻟِﺎﺣْﺘِﻤَﺎﻝِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ﻓِﻴﻬَﺎ . যদি তাবীজের মত কাগজ লিখা হয়। রাসূল সাঃ এর বানী “এটি শয়তানী কর্ম” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল জাহেলী যুগে যদ্বারা চিকিৎসা করা হতো ও যার উপর নির্ভর করা হতো। আর যা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, আল্লাহর সিফাত সম্বলিত, দুআয়ে মাসুরা হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। বরং এটি মুস্তাহাব। চাই সেটি তাবীজ হোক, বা ঝারফুক হোক বা কাগজে লিখা হোক। আর যেসব ইবরানী ও অন্যান্য ভাষায় লিখা হয় তা নিষিদ্ধ। কারণ তাতে শিরকের সম্ভাবনা আছে। {মিরকাতুল মাফাতীহ-৮/৩৭৩, বর্ণনা নং-৪৫৫৩} আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ উল্লেখ করেন- ﺇﻧَّﻤَﺎ ﺗُﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟْﻌُﻮﺫَﺓُ ﺇﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻟِﺴَﺎﻥِ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ، ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺪْﺭَﻯ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻪُ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻪُ ﺳِﺤْﺮٌ ﺃَﻭْ ﻛُﻔْﺮٌ ﺃَﻭْ ﻏَﻴْﺮُ ﺫَﻟِﻚَ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﺃَﻭْ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺪَّﻋَﻮَﺍﺕِ ﻓَﻠَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺑِﻪِ নিশ্চয় নিষিদ্ধ তাবীজ হল যা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় লিখা হয়, বুঝা যায় না তাতে কি আছে? অথবা যাতে জাদু, কুফরী ইত্যাদি কথা থাকে। আর যেসব তাবীজে কুরআন বা দুআ সম্বলিত হয় তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। {ফাতওয়ায়ে শামী-৬/৩৬৩} কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মতামত কথিত আহলে হাদীস নামধারী ভাইদের কাছেও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন- ﻳَﺠُﻮﺯُ ﺃَﻥْ ﻳَﻜْﺘُﺐَ ﻟِﻠْﻤُﺼَﺎﺏِ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻩِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻤَﺮْﺿَﻰ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺫِﻛْﺮُﻩُ ﺑِﺎﻟْﻤِﺪَﺍﺩِ ﺍﻟْﻤُﺒَﺎﺡِ ﻭَﻳُﻐْﺴَﻞُ ﻭَﻳُﺴْﻘَﻰ ﻛَﻤَﺎ ﻧَﺺَّ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺣْﻤَﺪ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻩُ বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কারি দ্বারা আল্লাহর কিতাব,আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জায়েজ। তারপর এ আলোচনার শেষদিকে তিনি তাবিজাত বৈধ হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর একটি আছার পেশ করেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) কাগজের টুকরায় তাবিজ লিখে দিতেন,তা সন্তানসম্ভবা নারীদের বাহুতে বেঁধে দেয়া হত। {ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১০/৩৭} ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া এর আরবী পাঠ! ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺇﺫَﺍ ﻋَﺴِﺮَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻭِﻟَﺎﺩُﻫَﺎ ﻓَﻠْﻴَﻜْﺘُﺐْ : ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺎ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻌَﻠِﻲُّ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢُ ﻟَﺎ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ؛ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺭَﺏُّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ؛ ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ } ﻛَﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﺮَﻭْﻧَﻬَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒَﺜُﻮﺍ ﺇﻟَّﺎ ﻋَﺸِﻴَّﺔً ﺃَﻭْ ﺿُﺤَﺎﻫَﺎ { } ﻛَﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﺮَﻭْﻥَ ﻣَﺎ ﻳُﻮﻋَﺪُﻭﻥَ ﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒَﺜُﻮﺍ ﺇﻟَّﺎ ﺳَﺎﻋَﺔً ﻣِﻦْ ﻧَﻬَﺎﺭٍ ﺑَﻠَﺎﻍٌ ﻓَﻬَﻞْ ﻳُﻬْﻠَﻚُ ﺇﻟَّﺎ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ { . ﻗَﺎﻝَ ﻋَﻠِﻲٌّ : ﻳُﻜْﺘَﺐُ ﻓِﻲ ﻛﺎﻏﺪﺓ ﻓَﻴُﻌَﻠَّﻖُ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻀُﺪِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﻠِﻲٌّ : ﻭَﻗَﺪْ ﺟَﺮَّﺑْﻨَﺎﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻧَﺮَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺃَﻋْﺠَﺐَ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻭَﺿَﻌَﺖْ ﺗُﺤِﻠُّﻪُ ﺳَﺮِﻳﻌًﺎ ﺛُﻢَّ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻪُ ﻓِﻲ ﺧِﺮْﻗَﺔٍ ﺃَﻭْ ﺗُﺤْﺮِﻗُﻪُ. আল্লামা শাওকানী রহঃ নাইলুল আওতারে ঝারফুক ও তাবীজের অধ্যায়ে স্পষ্ট ভাষায় উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষের তাবীজকে জায়েজ লিখেছেন। দেখুন-নাইলুল আওতার-৮/২৪২। সকল প্রকার তাবীজ নাজায়িজ হলে ঝাড়ফুঁকও না জায়েজ হয় কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাবীজ কবচকে আমভাবে না জায়িজ বলার জন্য যেসব হাদীস দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে সেসব হাদীসের মাঝে একটি হাদীস হল- ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺮُّﻗَﻰ، ﻭَﺍﻟﺘَّﻤَﺎﺋِﻢَ، ﻭَﺍﻟﺘِّﻮَﻟَﺔَ ﺷِﺮْﻙٌ অবশ্যই ঝাড়ফুঁক, তাবীজ ও জাদু শিরক। {সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং-৩৮৮৩, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৫৩০} এ হাদীসে ঝাড়ফুঁককেও শিরক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাহলে কি সকল প্রকার ঝাড়ফুঁক শিরক ও হারাম? আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরাও তা স্বীকার করেন যে, কুরআন ও দুআয়ে মাসুরা দ্বারা ঝাড়ফুঁক জায়েজ। এছাড়া হলে নাজায়িজ। তাহলে এ হাদীস দিয়ে তাবীজ নিষিদ্ধের দলিল দেয়া কি ঠিক হবে? ঝাড়ফুঁক জায়েজের যেমন ব্যখ্যা দেয়া হয় যে, এখানে সর্বপ্রকার ঝাড়ফুঁক উদ্দেশ্য নয়, তেমনি আমরা বলে তাবীজ নিষিদ্ধতার হাদীসে সব ধরণের তাবীজ নিষিদ্ধের কথা উদ্দেশ্য নয়। যেমনটি বিজ্ঞ আলেমগণের মতমত উল্লেখ পূর্বক ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হাস্যকর দলিলের জবাব আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সকল প্রকার তাবীজ হারাম সাব্যস্ত করার জন্য কিছু হাস্যকর দলিলের অবতারণা করে থাকেন। তার মাঝে একটি তারা কুরআন ও হাদীসের সেসব আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন করে থাকেন, যাতে তাওয়াক্কুল তথা ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপর করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে সব কিছু করার ক্ষমতা আল্লাহর উপরই ন্যস্ত মর্মে বক্তব্য এসেছে। এসব আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন করে তারা বলতে চান যে, তাবীজের উপর ভরসা করা মানে আল্লাহর সাথে শিরক করা তাই তা হারাম। কিন্তু আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা ভরসা করা ও ওসীলা গ্রহণের অর্থ না জানার কারণে এমন বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছেন মূলত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ভরসা করে মুক্তি বা আরোগ্য কামনা শিরক এর মাঝে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু মূল ভরসা আল্লাহর উপর রেখে ওসীলা গ্রহণ করা জায়েজ এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা। যদি বলা হয় যে, ওসীলা গ্রহণ জায়েজ নয়। তাহলে অসুখ হলে অষুধ খাওয়া কি করে জায়েজ হয়? এ্ক্ষেত্রেতো একই বিষয় আসছে যেমনটি তাবীজের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে। এখানে যদি বলেন যে, ভরসা আল্লাহর উপর, আর বড়ি বা চিকিৎসা কেবল ওসীলা মাত্র, তাই তা নাজায়েজ নয়। তাহলে তাবীজের ক্ষেত্রে কেন এ অহেতুক প্রশ্ন তোলা? সুতরাং বুঝা গেল যে, ডাক্তারী বড়িকে আরোগ্যের মূল কারণ সাব্যস্ত না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে ওসীলা হিসেবে যেমন তা ব্যবহার করা বৈধ, তেমনি প্রথমে উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে তাবীজ কবচও জায়েজ। না জায়েজের কোন কারণ নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

১। আবু বাসীর আনসারী রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর সঙ্গী ছিলেন। এ সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একজন দূত পাঠালেন। এর উদ্দেশ্য ছিল কোন উটের গলায় যেন ধনুকের কোন রজ্জু লটকানো না থাকে অথবা এ জাতীয় রজ্জু যেন কেটে ফেলা হয়। (বুখারি) ২। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি, أن الرقى والتمائم والتولة شرك (رواه أحمد وأبو داؤد) ‘‘ঝাড়-ফুঁক ও তাবিক- কবজ হচ্ছে শিরক’’ (আহমাদ, আবু দাউদ) ৩। আবদুল্লাহ বিন উকাইম থেকে মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে, من تعلق شيئا وكل اليه (رواه أحمد والترمذي) ‘‘যে ব্যক্তি কোন জিনিস [অর্থাৎ তাবিজ- কবজ] লটকায় সে উক্ত জিনিসের দিকেই সমর্পিত হয়’’। [অর্থাৎ এর কুফল তার উপরই বর্তায়] (আহমাদ, তিরমিজি) تمائم বা তাবিজ হচ্ছে এমন জিনিস যা চোখ লাগা বা দৃষ্টি লাগা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সন্তানদের গায়ে ঝুলানো হয়। ঝুলন্ত জিনিসটি যদি কুরআনের অংশ হয় তাহলে সালাফে সালেহীনের কেউ কেউ এর অনুমতি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অনুমতি দেননি বরং এটাকে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় বলে গণ্য করতেন। ইবনে মাসউদ রা. এ অভিমতের পক্ষে রয়েছেন। আর رقى বা ঝাড়-ফুঁককে عزائم নামে অভিহিত করা হয়। যে সব ঝাড়-ফুঁক শিরক মুক্ত তা দলিলের মাধ্যমে খাস করা হয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম চোখের দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষের ব্যাপারে ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন। تولة এমন জিনিস যা কবিরাজদের বানানো। তারা দাবী করে যে, এ জিনিস [কবজ] দ্বারা স্ত্রীর অন্তরে স্বামীর ভালবাসা আর স্বামীর অন্তরে স্ত্রীর ভালবাসার উদ্রেক হয়। সাহাবী রুআইফি থেকে ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, তিনি [রুআইফি] বলেছেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, يا رويفع لعل الحياة تطول بك فاخبر الناس أن من عقد لحيته أو تقلد وترا أو استنجى برجيع فإن محمدا برئ عنه ‘‘হে রুআইফি, তোমার হায়াত সম্ভবত দীর্ঘ হবে। তুমি লোকজনকে জানিয়ে দিও, ‘‘যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা দিবে, অথবা গলায় তাবিজ- কবজ ঝুলাবে অথবা পশুর মল কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জিম্মাদারী থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।’’ সাঈদ বিন জুবাইর থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, من قطع تميمة من إنسان كان كعدل رقبة (رواه وكيع) ‘‘যে ব্যক্তি কোন মানুষের তাবিজ- কবজ ছিড়ে ফেলবে বা কেটে ফেলবে সে ব্যক্তি একটি গোলাম আযাদ করার মত কাজ করলো।’’ (ওয়াকী) ইবরাহীম থেকে বর্নিত হাদীসে তিনি বলেন, তাঁরা সব ধরনের তাবীজ- কবজ অপছন্দ করতেন, চাই তার উৎস কুরআন হোক বা অন্য কিছু হোক। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ  ১। ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের ব্যাখ্যা। ২। (تولة) ‘‘তাওলাহ’’ এর ব্যাখ্যা। ৩। কোন ব্যাতিক্রম ছাড়াই উপরোক্ত তিনটি বিষয় শিরক এর অন্তর্ভূক্ত। ৪। সত্যবাণী তথা কুরআনের সাহায্যে [চোখের] দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষ নিরাময়ের জন্য ঝাড়-ফুঁক করা শিরকের অন্তর্ভূক্ত নয়। ৫। তাবিজ- কবজ কুরআন থেকে হলে তা শিরক হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ৬। খারাপ দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পশুর রশি বা অন্য কিছু বুঝলানো শিরকের অন্তর্ভূক্ত। ৭। যে ব্যক্তি ধনুকের রজ্জু গলায় ঝুলায় তার উপর কঠিন অভিসম্পাত। ৮। কোন মানুষের তাবিজ- কবজ ছিড়ে ফেলা কিংবা কেটে ফেলার ফজিলত। ৯। ইবরাহীমের কথা পূর্বোক্ত মতভেদের বিরোধী নয়। কারণ এর দ্বারা আব্দুল্লাহর সঙ্গী- সাহাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ