প্রশ্নঃ   আমি ও আমার স্বামী গোপনে ২০১৫ সালে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করি, তখন আমরা দুইজনই ভারসিটিতে পড়ি। উভয় পক্ষের অভিভাবকদের ইচছা করেই বিয়ের ব্যাপারে কখনো কোন প্রস্তাব দেয়া হয় নি, এমনকি তারা এখনও এই বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। অর্থাৎ বিয়েতে তাদের কোন বাধা/সম্মতি কিছুই ছিল না।  আমার কোন নিকট আত্নীয় বিয়ের অভিভাবক ছিলেন না। কাজী অফিসের কাছাকাছি অপরিচিত ২জন লোককে টাকার বিনিময়ে কনের অভিভাবক(উকিল বাপ) ও স্বাক্ষী নিযুক্ত করা হয়। তারা কেউই দীনদার নয়, এই বিয়ের ভালমন্দ বলার  জ্ঞান নাই, শুধু টাকার জন্যে স্বাক্ষী হয়েছে , আমাদের প্রতি দায়বদ্ধ নয় এবং বিয়ের পরে আমরা আর কখনো তাদের দেখি নি। অপর স্বাক্ষি হয় স্বামীর বন্ধু,যে অনিচ্ছা সত্তেও অনুরোধে রাজি হয়, বর্তমানে যোগাযোগ নেই। বিয়ের পর আমি ও আমার স্বামী নিজ নিজ বাবার বাড়ি অবস্থান করি,আমাদের শারিরিক সম্পর্ক হয়। উল্লেখ্য যে, আমি এই বিয়ে অন্য ছেলের প্রেম বিরহে, রাগে জেদে প্রেমিককে শাস্তি দিতে করি। বিয়ের সময় আমি মনযোগী ছিলাম না, সম্মান করি নি কিন্তু স্বামী জানতেন না যে আমি তাকে মন থেকে ভালবাসি না এবং অন্য ছেলের উপর জেদে এত তাড়াতাড়ি তাকে বিয়ে করতেছি। এমতাবস্থায় আমি জানতে চাই যে
১। আমাদের বিয়ে কি আসলেই সম্পন্ন হয়েছে? এই বিয়ের বৈধতা আছে কি?
২। আমার বদমেজাজী স্বামী রাগের মাথায় হিতাহিতজ্ঞান শুন্য হয়ে তিন তালাক দিয়ে বসলে উক্ত বিয়ের উপর কি সেই তালাক হবে? সে তালাক চায় না। ফিরে আসার পথ কি?


দয়া করে আমাকে জানবেন। ইসলামিক ফতয়া অনুসারে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

সহিহ হাদিস অনুসারে বিয়েতে পাত্রীর অভিবাবকের সম্মতি ও উপস্থিতি বাধ্যতামুলক তাই ধর্ম অনুসারে আপনাদের বিয়েটা শুদ্ধ হয়নি কিন্তু যদি অনুমোদিত কাজীর মাধ্যমে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করিয়ে থাকেন তাহলে আইনত বিয়েটা বৈধ।

তালাকের নিয়মঃ

তিন তালাক নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে যার গ্রহনযোগ্য সমাধান কখনো হয়নি, হবে বলেও মনে হয় না! তাছাড়া আইনে তিন তালাকের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই।

স্ত্রীকে তার ঋতুমুক্তির পর পবিত্র অবস্থার শুরুতে মিলন ছাড়াই স্বামী প্রথমে এক তালাক দিবে। অতঃপর সহবাসহীন অবস্থায় তিন ঋতুর ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে স্বামী স্ত্রীকে রাজ‘আত করতে পারে। অর্থাৎ ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পরে ফেরত নিতে চাইলে তাকে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিতে হবে। ইদ্দতকালে স্ত্রী স্বামীগৃহে অবস্থান করবে। অবস্থানকালে স্বামী স্ত্রীকে খোরপোষ দিবে। এটিই হ’ল তালাকের সর্বোত্তম ইসলামিক পন্থা।

প্রচলিত আইনে তালাক কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরাস‌রি মুখে উচ্চারণের পাশাপাশি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত নোটিশ পাঠাতে হয়। চেয়ারম্যান বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে— ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক, সেনানিবাস এলাকায় এই অধ্যাদেশের অধীনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের নিয়োগ করা ব্যক্তি, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনের স্থগিত (suspended) থাকলে অধ্যাদেশের অধীনে চেয়ারম্যানের কাজ সম্পাদনকারী সরকারের নিয়োগ করা ব্যক্তি। চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো তালাক নোটিশের একটি অনুলিপি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে পাঠাতে হবে। তারপর এই নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে দুই পক্ষের পুনঃমিলনের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান সালিশি কাউন্সিল তৈরি করে দুই পক্ষের পুনঃমিলনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যদি দুই পক্ষের মধ্যে কোনোভাবেই পুনঃমিলন সম্ভব না হয় তবে তালাক নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচাপাতি বহন করবেন স্বামী।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ