নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগের মানুষ, সে যুগে মানুষের লম্বা এবং ওজন মাপা হত না। আর বর্তমান সময়ের যন্ত্রপাতি তখন ছিলও না। সর্বোপরি মানুষ এসব কাজকে অনর্থক মনে করত। তাই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে, নবীজী এত ইঞ্চি লম্বা বা এত কেজি ওজনের ছিলেন! তবে হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি মাঝারি গড়নের ছিলেন। অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না, আবার খাটোও ছিলেন না। আর স্থুলকায়ও ছিলেন না, একেবারে শীর্ণকায়ও ছিলেন না। মোটকথা, তিনি মধ্যম ধরনের লম্বা এবং মধ্যম ধরনের ওজনের অধিকারী ছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি ছিলেন। সৃষ্টিগত দিক থেকে আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন। তিনি নূরের তৈরি নন, ফেরেশতাও নন, জিনসও নন! মুহাম্মাদ (ছাঃ) মাটির তৈরী একজন ”মানুষ” এ সম্পর্কে কুরআনের দলীল : (১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ ﺑَﺸَﺮﺍً ﺭَّﺳُﻮْﻻً ‘বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমি তো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল’ (বানী ইসরাঈল ৯৩)। (২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻤَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﺟُﻮ ﻟِﻘَﺎﺀ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞْ ﻋَﻤَﻼً ﺻَﺎﻟِﺤﺎً ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪﺍً ‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একজন। সুতরাং যে তাঁর প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তাঁর প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে’ (কাহফ ১১০)। (৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র (সত্য) মা‘বূদ’ (হা-মীম সিজদা ৬)। নূরের তৈরী হওয়াই কি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী? একথা সম্পূর্ণ ভুল যে, কোন কিছু নূরের তৈরী হলেই তা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। বরং শ্রেষ্ঠত্বের মূল বিষয় হল তার অভ্যান্তরীণ গুণ শ্রেষ্ঠ হওয়া। মাটির তৈরী মানুষ নূরের তৈরী ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ। দলিল- ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﺁﺩَﻡَ অনুবাদ-নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। {সূরা বনী ইসরাঈল-৭০} আগুনের তৈরী জিন বা নূরের তৈরী ফেরেস্তাকে মর্যাদা দান করার কথা বলা হয়নি কুরআনের কোথাও। কিন্তু মাটির তৈরী মানুষকে মর্যাদা দান করার কথা আল্লাহ তায়ালা সুষ্পষ্টই ঘোষণা করেছেন। যা স্পষ্টই প্রমাণ করে নূরের তৈরী হওয়াই কেবল শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়? তাছাড়া আগুনের তৈরী জিন আর নূরের তৈরী ফেরেস্তাদের দিয়ে মাটির তৈরী মানুষ হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ তায়ালা সেজদা করিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আগুনের তৈরী বা নূরের তৈরী হওয়া কোন শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী হল- ভিতরগত গুন যার শ্রেষ্ঠ সেই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ। চাই সে মাটির তৈরী হোক, চাই নূরের তৈরী হোক চাই আগুনের তৈরী হোক। ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭﺣِﻲ ﻓَﻘَﻌُﻮﺍْ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳﻦَ ‏( 29 ‏) ﻓَﺴَﺠَﺪَ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮﻥَ ‏( 30 ) অনুবাদ-যখন আমি তাকে পূর্ণতা দিলাম এবং তাতে আত্মা ফুকে দিলাম, তখন সবাই তাকে সেজদা করল। সকল ফেরেস্তারাই একসাথে তাকে সেজদা করল। {সূরা হিজর-২৯,৩০} সুতরাং মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সাঃ কে নূরের তৈরী বলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা একটি অহেতুক চেষ্টা। তিনি মাটির তৈরী একজন মানব। তবে তিনি মহামানব।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ