আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে নিচের আয়াতদুটি দ্বারা বুঝে নিনঃ
১. বোখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস-
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺮَﺩَّﻯ ﻣِﻦْ ﺟَﺒَﻞٍ ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓَﻬُﻮَ ﻳَﺘَﺮَﺩَّﻯ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺤَﺪِﻳﺪَﺓٍ ﻓَﺤَﺪِﻳﺪَﺗُﻪُ ﻓِﻲ ﻳَﺪِﻩِ ﻳَﺘَﻮَﺟَّﺄُ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺴُﻢٍّ ﻓَﺴُﻤُّﻪِ ﻓِﻲ ﻳَﺪِﻩِ ﻳَﺘَﺤَﺴَّﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ -
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করল সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। যে ব্যক্তি লোহ জাতিয় জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করবে সে চির কাল জাহান্নামে থাকবে। যে বিষ প্রয়োগে আত্মহত্যা করবে সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। [বুখারী : ৫৩৬২, মুসনাদে আহমদ : ৯৯৮৩, জামে তিরমিযী : ১৯৬৪]
২. বোখারী শরীফের হাদীস
ﻛﺎﻥ ﺑﺮﺟﻞ ﺟﺮﺍﺡ ﻓﻘﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺪﺭﻧﻰ ﻋﺒﺪﻯ ﺑﻨﻔﺴﻪ ﺣﺮﻣﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ .
যুদ্ধের ময়দানে এক ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলো তারপর যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করল। আল্লাহপাক (ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে) বলেন আমার বান্দা আমার চেয়ে অগ্রগামী হয়েছে বিধায় তার উপর জান্নাতকে আমি হারাম করে দিয়েছি। [বুখারী : ১২৯৮]
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যার পরিনামঃ
————————————————
ইসলামী দৃষ্টিকোণে বিষয়টি আলোচনা করা যায়। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ। তাই আলাহ তা মোটেই পছন্দ করেন না। এ কারণে যদিও শরিয়তে আত্মহত্যাকারীর জানাযা হয় তবু রাসূল (সাঃ) তা নিজে পড়াননি। সাহাবী দ্বারা তা পড়ানো হয়। এ সূত্র ধরে আমাদের সমাজেও উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেমের স্থলে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেম দ্বারা আত্মহত্যা কারীর জানাযার নামায পড়ানো হয়।
কোরআনের বানীঃ
আত্মহত্যা মহাপাপ। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিনামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, “আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে উহা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্য আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে উহা সহজসাধ্য।” (সূরা-নিসা-২৯-৩০)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বানীঃ
ক) সাহাবা আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে।
খ) যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে।
গ) যে কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।
ঘ) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।
ঙ) হযরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।