পানি: মুখে দুর্গন্ধ হলে পানি খেয়ে নিন। খুব সহজেই মুখের দুর্গন্ধ দূর করা যায় পানি পান করে। প্রথমে মুখে কিছু পানি নিন। এরপর সেটা ভালো করে কুলি করে ফেলে দিন। এরপর এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলুন। মুখের দুর্গন্ধ কমে যাবে। লবঙ্গ: আপনার মুখে যদি দুর্গন্ধ হয়ে থাকে তাহলে সঙ্গে সব সময় লবঙ্গ রাখুন। যখনই মনে হবে মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে তখনই মুখে একটি লবঙ্গ রেখে দিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখের বাজে গন্ধ চলে যাবে। এলাচ: এলাচ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক। আপনার পকেটে সবসময় কয়েকটি এলাচ রাখুন। মুখে দূর্গন্ধ হয়েছে মনে হলেই এলাচ দানা চুষতে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখের দূর্গন্ধ চলে যাবে। লেবু/কমলা: লেবু কিংবা কমলাতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন সি মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায় পুরোপুরি। তাই মুখে দুর্গন্ধ অনুভূত হলেই লেবু কিংবা কমলা খেয়ে নিন। নিয়মিত অন্তত একটি কমলা খেয়ে মুখের দুর্গন্ধকে চিরতরে বিদায়ও দিতে পারবেন। আপেল: আমরা যখন আপেল খাই তখন মুখে প্রচুর স্যালাইভা উৎপন্ন হয়। ফলে আপেল খেলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যকটেরিয়া লালার সঙ্গে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। সবুজ চা: সবুজ চায়ে প্রচুর ফ্ল্যাবনয়েড আছে। ফ্ল্যাবনয়েড মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যকটেরিয়াকে আটকে থাকতে দেয় না এবং ধ্বংস করে ফেলে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।
মুখের দুর্গন্ধ নামকরোগটি বড় বিব্রতকর। মুখের এ দুর্গন্ধ কেন হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা বহুকাল ধরে চলে আসছে। সেসব গবেষণা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিতও করা গেছে। সেগুলো হলো-খাদ্য আবরণ জমে থেকে ডেন্টলি প্লাক সৃষ্টি এবং মাড়ির প্রদাহ (পেরিওডন্টালডিজিজ), মুখের ঘা বা ক্ষত হওয়া, আকাবাঁকা দাঁত থাকার কারণে খাদ্যকণা জমা, অপরিষ্কার কৃত্রিম দাঁত বা ক্রাউন ব্রিজ, জিহ্বা অপরিষ্কার থাকার কারণে খাদ্যকণা ও জীবাণুর অবস্থান, ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জাতীয় ঘা, মুখের ক্যান্সার, ডেন্টাল সিস্ট বা টিউমার, দুর্ঘটনার কারণে ফ্রেকচার ও ক্ষত তাছাড়া দেহের অন্য রোগের কারণেও মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে যেমন-পেপটিক আলসার, লিভারের রোগ, গর্ভাবস্থা, কিডনি রোগ, রিউমেটিক রোগ বাবাতজনিত রোগ, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র, হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, গলা বা পাকস্থলীর ক্যান্সার, এইডস রোগ,হৃদরোগ, মানসিক দুশ্চিন্তা, নাক, কান, গলার রোগ।সুতরাং মুখের স্থানীয়ভাবে কারণগুলো দূর করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় তবে দেহের অন্য সাধারণ রোগের উপস্থিতির পরীক্ষাগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। মুখের দুর্গন্ধ অনেকক্ষেত্রে নিজে অনুভবকরা যায় না, অন্যরা বুঝতে পারেন এটাই এর বড় সমস্যা।একটি পরিষ্কার ভালো দাঁতের ব্রাশ ও পেস্ট দিয়ে দাঁতের সবগুলো অংশ ভেতরে-বাইরে পরিষ্কার করুন(তিনবেলা খাবারের পর)। জিহ্বা পরিষ্কারের জন্য জিবছুলা ব্যবহার করতে পারেন। যে কোনো ধরনের মাউথওয়াশ (ক্লোর হেক্সিডিন জাতীয়) ২ চামচ মুখে ৩০ সেকেন্ড রেখে ফেলে দিয়ে আবার অল্প গরম লবণ পানিতে কুলিকুচি করা। প্রতিদিন অন্তত দু'বার সকালে ও রাতে (আহারের পর) এটা করতে বলা হয়।মুখের ভেতরে একটি লং বা এলাচির দানা রাখুন। প্রতিবার আহারের পর সম্ভব হলে দাঁত ব্রাশ অথবা ভালোভাবে কুলিকুচি করে ফেলুন।বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবেদাঁত ব্রাশ করলেই শুধু ময়লা বা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয় না, কারণ দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে বা মাড়ির ভেতরে অনেক সময় খাদ্যকণা জমা থেকে পচন শুরু হয়। এরজন্য ডেন্টাল ফ্লস (এক ধরনের পিচ্ছিল সুতা) বা ডেন্টাল টুথপিকস (এক ধরনের জীবাণুমুক্ত শলাকা) ব্যাবহার করতে হবে। সেই সাথে কতগুলো বদঅভ্যাস যদি থাকে তবে তা বাদ দিতে হবে।যেমন- ধূমপান করা, পান, সুপারি, জর্দা, গুল, তামাকপাতা ইত্যাদি চিবানো, মদ বা অ্যালকোহল পান, মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি।
মুখের দুর্গন্ধ দুরকমের হতে পারে। স্বল্পস্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী। স্বল্প সময় ধরে থাকা মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। এসময় সামান্য কষ্ট করলেই আপনি দুর করতে পারেন এই ঝামেলাটাকে। সেগুলো হল- - খানিকটা পানি পান করা। - দাঁত ব্রাশ করা। - চিনিবিহীন মিন্ট চকোলেট অথবা চুইঙ্গাম খাওয়া। কিন্তু এটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সমস্যায় পরিণত হয়ে থাকে তাহলে নিচের কাজগুলো আপনাকে ভালো ফল দিতে পারে। যেমন- - দিনে দুবার ( সকালে ও রাতে) কমপক্ষে দুই মিনিটের জন্য ব্রাশ করা। ব্রাশ করার সময় কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। যেমন ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রাশ ব্যবহার করা, প্রতি তিন- চার মাস অন্তর ব্রাশ বদলে ফেলা, মুখের প্রতিটি কোনায়, বিশেষ করে মাড়িতে ভালোভাবে ব্রাশ করা, জুস খাবার ৩০ মিনিটের মধ্যে ব্রাশ না করা, প্রয়োজন পড়লে জীহ্বা পরিষ্কার করার জন্য টাঙ ক্লিনার ব্যবহার করা ইত্যাদি। - যেসব খাবার মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া উত্পাদন করে সেগুলোকে এড়িয়ে চলা। - নিয়ম মেনে খাওয়া। যেমন- এলকোহল, সিগারেট, পেয়াজ, রসুন, মাছ ইত্যাদি। - দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা। পানি জীহ্বাকে নরম হতে এবং এর ওপরে খাবার থেকে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোকে দুর করতে সাহায্য করে। - মুখকে শুষ্ক করে দেয় এমন খাবার যেমন- কফি, চা ইত্যাদি পরিহার করা। - ডেইরি পন্য, যেমন- ডিম, দুধ এবং স্নেহজাতীয় খাবার মুখের এ্যাসিডিটির পরিমাণ পরিবর্তন করে ব্যকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই এগুলোও এড়িয়ে চলা। - পানি ছাড়া অন্য কিছু পান করার পর কুলি করে নেওয়া। - জোরে না কাশা। জোরে কাশলে জিহ্বার পেছনে থাকা টনসিল স্টোনের কিছু অংশ, যেগুলো মুখে দুর্গন্ধ সুষ্টি করতে পারে, সামনে চলে আসতে পারে। - পেয়ারা এবং এই জাতীয় শক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। - অন্তত প্রতি দু বছরে একবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া। সূত্র: ইন্টারনেট