আমরা কিভাবে দীন ও কিছু কিছু বিষয়ে অর্জিত শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করব, যা বাহ্যিকভাবে উভয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে; যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: আমরা দীনের মধ্যে জানতে পেরেছি যে, নক্ষত্ররাজিকে তিনটি জিনিসের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে: এগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশকে সুসজ্জিত করার জন্য, শয়তানদেরকে বিতাড়িত করার জন্য এবং এগুলোকে নিশানা বানানো হয়েছে, যাতে তার দ্বারা সঠিকভাবে পথ চলা যায়; আর অপরদিকে আমরা ভূগোলে পড়েছি যে, এগুলো হল কিছু পদার্থের সমষ্টি, যার পরিভ্রমণের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে।আর আমরা রাতের বেলায় যাকে জ্বলতে ও পতিত হতে দেখি, তা অগ্নিশিখা ও উল্কা, যা এক আকর্ষণ থেকে বের হয়ে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণে আসে; অতঃপর তা প্রজ্বলিত হয় এবং প্রতি সেকেন্ডে ৪৫ মাইল গতিতে পতিত হয়।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

الحمد لله, و الصلاة و السلام على نبينا محمد و على آله و صحبه و بعد : (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদের উপর), অতঃপর: নিশ্চয়ই যিনি কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ করেছেন এবং ওহীর মাধ্যমে ইসলামের শরী‘য়াত প্রেরণ করেছেন তাঁর নবীমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, তিনি হলেন মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা, যিনি আকশমণ্ডলী ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন সকল কিছু, আর তাকে যার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তার অনুগত করে দিয়েছেন এবং তিনি জানেন তার মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য ও গোপন রহস্যসমূহ গচ্ছিত রেখেছেন, সে সম্পর্কে, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেছেন ও তাঁর বান্দাদের জন্য অনুগত করেছেন, তার সাথে সাথে তিনি যে বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন অথবা যা শরী‘য়াত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তা পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়, বরং এর প্রতিটিই সুবিন্যস্ত, তার সৃষ্টি ও শৃঙ্খলার সাথে সাথে তার ব্যাপারে দেয়া তথ্য ও শরী‘য়তের বক্তব্যের মাঝে যথেষ্ট মিল রয়েছে, সুতরাং তাঁর দেয়া তথ্য বাস্তবসম্মত এবং তাঁর সৃষ্টি ও তাকে নিয়মের অধীন করাটা তাঁর দেয়া তথ্যের দাবি অনুযায়ী যথাযথ, অতএব মানুষ যদি মনে করে আল-কুরআনের মধ্যে দেয়া আল্লাহর বক্তব্য অথবা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের মধ্যে বিরোধ বা বৈপরীত্য রয়েছে, তাহলে তার এমন ধারণার উৎস হল তার জ্ঞানের কমতি অথবা তার বুঝের ঘাটতি এবং তার গবেষণা বা অনুসন্ধানের কমতি অথবা সৃষ্টিতত্ত্ব ও শরী‘য়তের বক্তব্য সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের অভাব, আর এর দৃষ্টান্ত হল যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র পক্ষ থেকে তাঁর কিতাবের মধ্যে এসেছে, তিনি বলেন: ﴿إِنَّا زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنۡيَا بِزِينَةٍ ٱلۡكَوَاكِبِ ٦ وَحِفۡظٗا مِّن كُلِّ شَيۡطَٰنٖ مَّارِدٖ ٧ لَّا يَسَّمَّعُونَ إِلَى ٱلۡمَلَإِ ٱلۡأَعۡلَىٰ وَيُقۡذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٖ ٨ دُحُورٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ وَاصِبٌ ٩ إِلَّا مَنۡ خَطِفَ ٱلۡخَطۡفَةَ فَأَتۡبَعَهُۥ شِهَابٞ ثَاقِبٞ ١٠ ﴾ [الصافات: ٦، ١٠] “নিশ্চয় আমরা কাছের আসমানকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি, এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে। ফলে ওরা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শুনতে পারে না। আর তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সব দিক থেকে— বিতাড়নের জন্য এবং তাদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।”- ( সূরা আস-সাফফাত: ৬ - ১০)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿وَلَقَدۡ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنۡيَا بِمَصَٰبِيحَ وَجَعَلۡنَٰهَا رُجُومٗا لِّلشَّيَٰطِينِۖ وَأَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابَ ٱلسَّعِيرِ ٥ ﴾ [الملك: ٥] “আর অবশ্যই আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।”- ( সূরা আল-মুলক: ৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿وَلَقَدۡ جَعَلۡنَا فِي ٱلسَّمَآءِ بُرُوجٗا وَزَيَّنَّٰهَا لِلنَّٰظِرِينَ ١٦ وَحَفِظۡنَٰهَا مِن كُلِّ شَيۡطَٰنٖ رَّجِيمٍ ١٧ إِلَّا مَنِ ٱسۡتَرَقَ ٱلسَّمۡعَ فَأَتۡبَعَهُۥ شِهَابٞ مُّبِينٞ ١٨ ﴾ [الحجر: ١٦، ١٨] “আর অবশ্যই আমরা আকাশে বুরুজসমূহ সৃষ্টি করেছি এবং দর্শকদের জন্য সেগুলোকে সুশোভিত করেছি, আর প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমরা সেগুলোকে সুরক্ষিত করেছি,কিন্তু কেউ চুরি করে শুনতে চাইলে প্রদীপ্ত শিখা তার পশ্চাদ্ধাবন করে।”- (সূরা আল-হিজর: ১৬ - ১৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَهۡتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٩٧ ﴾ [الانعام: ٩٧] “আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, যেন তা দ্বারা তোমরা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও। অবশ্যই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি।”- (সূরা আল-আন‘আম: ৯৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿وَعَلَٰمَٰتٖۚ وَبِٱلنَّجۡمِ هُمۡ يَهۡتَدُونَ ١٦ ﴾ [النحل: ١٦] “এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।”- ( সূরা আন-নাহল: ১৬)। আর সহীহ সুন্নাহর মধ্যেও এই ব্যাপারে কিছু বক্তব্য এসেছে, যা আল-কুরআনের বক্তব্যসমূহের সাথে অর্থঃ গত দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যে ব্যক্তি এই বক্তব্যসমূহের প্রতি দৃষ্টি দেবে, সে তাতে স্পষ্ট বুঝতে পারবে যে, এতে বস্তুত নক্ষত্রসমূহের কিছু বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে এমন কিছু নেই, যা নক্ষত্ররাজির উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহকে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার প্রমাণ বহন করে, যেমনিভাবে তার মধ্যে এমন কিছুও নেই, যা নক্ষত্ররাজিকে শুধু ঐসব উল্কার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করার প্রমাণ বহন করে, যার দ্বারা আমরা শয়তানকে আঘাত করতে দেখতে পাই এবং তার দ্বারা তাদের (শয়তানদের) মধ্য থেকে যারা চুরি করে (ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত থেকে) কোন তথ্য শুনতে চায়, তাদেরকে আঘাত করা হয়।যেমনিভাবে এ সকল বক্তব্যের মধ্যে অন্যান্য উল্কারাজিকে সাব্যস্ত বা নিষেধ করার মত কিছুও নেই, বিষয়টি এমন প্রত্যেক লোকই বুঝতে পারে যার কাছে আরবদের ভাষা জ্ঞান রয়েছে, আর যার কাছে কোনো কিছু সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত আরবদের ভাষার অব্যয়সমূহের জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং যখন জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে প্রমাণিত হয় যে, সেখানে মহাশূন্যে পাথর ও সৌর জাগতিক বিভিন্ন বস্তু ছড়িয়ে আছে এবং তা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত, তন্মধ্যে প্রত্যেকটি গ্রুপ তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় নক্ষত্রের আকর্ষণিক বলয়ে অবস্থিত। আর তা যখন এই নক্ষত্রের আকর্ষণিক বলয় থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, অতঃপর ঐ নক্ষত্রের বলয় থেকে দূরে সরে যায় এবং তার থেকে অপর এক নক্ষত্রের আকর্ষণিক বলয়ের নিকটবর্তী হয়, তখন তা দ্রুত গতিতে নীচের দিকে ধাবিত হয় এবং তার পৃষ্ঠদেশের সাথে অপরাপর নক্ষত্রের পৃষ্ঠদেশের ঘর্ষণের ফলে অগ্নিশিখার জন্ম হয়, সৃষ্টিজগতের এই বাহ্যিকতাকে উল্কা নামে নামকরণ করা হয়। যখন এটা প্রমাণিত, তখন তা ইসলামী শরী‘য়তের নস তথা বক্তব্যসমূহের মধ্যে যেই ভাষ্য এসেছে, তার সাথে সাংঘর্ষিক নয়, আর সেই ভাষ্যের মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র নক্ষত্ররাজির মধ্য থেকে উল্কা বা অগ্নিশিখার দ্বারা শয়তানদেরকে আঘাত করার সংবাদ, কেননা হতে পারে উল্কারাজির প্রকাশ দু’টি কারণেই হয়ে থাকে। কারণ, জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে এমন কথা নেই যা প্রমাণ করে যে উল্কারাজি তারকাপূঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও থেকে ঝরে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তদ্রূপ কুরআন ও সুন্নাহ’র বক্তব্যের মধ্যেও এমন কথা নেই যে, শয়তানদেরকে বিতাড়িত করার জন্য নিক্ষিপ্ত উল্কারাজি তারকারাজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর প্রশ্নকারী যে অগ্নিশিখা বা উল্কাপিণ্ডের কথা উল্লেখ করেছে, তা ভূগোল বিশেষজ্ঞদের মতে নিক্ষিপ্ত বস্তু যা উল্কাপিণ্ড হিসেবে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়, তবে তা প্রজ্জ্বলিত হয় না এবং তা ছাই-ভষ্মেও রূপান্তরিত হয় না, সুতরাং তা শিহাব (شهاب) জাতীয় উল্কাপিণ্ডের শ্রেণীভুক্ত নয়, বরং তা শিহাব (شهاب) জাতীয় উল্কাপিণ্ডের বিপরীত শ্রেণীর উল্কাপিণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।অতএব প্রশ্নকারীর কর্তব্য হচ্ছে, সে তার জ্ঞান ও তথ্যভাণ্ডারকে বিশ্লেষণ করবে এবং তার দীন ও দুনিয়ার বিষয়সমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবে, আর আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যে তার মর্যাদা সম্পর্কে জানে এবং কোনো বিষয়ে জটিলতার মুখোমুখি হলে তার মান বা স্তরের নির্ধারিত সীমারেখায় দাঁড়িয়ে যায়। و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و سلم . (আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর)। স্থায়ী পরিষদ, শিক্ষা-গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক সভাপতি সহ-সভাপতি আবদুল আযীয ইবন বায আবদুর রাজ্জাক ‘আফীফী সদস্য সদস্য বদুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান আবদুল্লাহ ইবন কু‘ঊদ স্থায়ী পরিষদের ফতোয়া (فتاوى اللجنة الدائمة):১ / ৪২৬, ফতোয়া নং- ১৫৯১

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ