প্রথমে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিন, নিজেকে স্বাভাবিক করতে লম্বা শ্বাস নিন। অতঃপর মনে মনে আপনার বলার মতো কথা গুছিয়ে নিন। তারপর সৌজন্যতা বজায় রেখে ধীরে এবং কন্ঠকে স্বাভাবিক রেখে জোরে জোরে কথা বলুন, কথা বলার মধ্যখানে তার মনোযোগ বৃদ্ধি করতে তাকে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করুন। আশ্চর্য মুলক কথায় আশ্চর্যান্বিত ভাব প্রকাশ করুন। প্রশ্নবোধক কথায় প্রশ্নবোধক, ভাব, আশা কিংবা হতাশা বিষয়ক কথায় আশা বা হতাশা বোধক ভাব প্রকাশ করুন। উপরোক্ত কাজগুলো করলে আশা করা যায় আপনি শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণে পরিনত হতে পারবেন।
সুন্দর করে কথা বলার কিছু উপায় ১. প্রথম নিজেকে বিশেলষণ করতে হবে তুমি কি বিষয়ে কথা কিভাবে কথাটি শুরু করছ কার সগে কথা বলছ এবং তাঁর সাথে দেখতে হবে তুমার কন্ঠটি কেমন হচ্ছে দেখতে হবে বুঝে শুনে কথা বলতে হবে ২.আত্মবিশাস নিয়ে সুন্দর করে কথা বলবেন ভয় লজ্জা কোনো কারণ নেই যা বলার তা বলে ফেলবেন ৩.হাসি মুখে কথা বলার চেষ্টা করুন সবার সাথে মিশুও সুন্দর ব্যাবহার করুন ৪. নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করুন মনযোগ সহকারে কথা শুন ও বুঝোন ও সুন্দর করে কথা বলোন ও জবাব দিন ৫.সবার মন জয় করতে গেলে হাসি মুখে কথা বলোন ও তাঁর প্রসংসা করুন সুন্দর করে কথা বলা অভ্যাস গড়ে তুলোন আস্তে আস্তে সুন্দর করে কথা বলতে পারবেন
১. শরীর ও মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা শিখুন হাসিমুখে কথা বলা শিখুন আর শরীরী ভাষার দিকে নজর দিন। কথা বলার সময় হাত কোথায় রাখছেন, ঘাড় কতটুকু বাঁকাচ্ছেন কিংবা ভ্রু কতটুকু ব্যবহার করছেন—সবটাই খেয়াল রাখুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলা শিখুন। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর দিকে না তাকিয়ে কথা বলা অসম্মান ও অভদ্রতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরী ভাষা সংশোধনে সময় নিন। টানা পাঁচ সপ্তাহ এমন চেষ্টা করুন, নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখবেন। ২. আঞ্চলিকতার টান পরিহার করা শিখুন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পেশাদারি যেকোনো কাজে বাংলা ভাষায় সুন্দর করে কথা বলতে নিজের আঞ্চলিকতা পরিহারের চেষ্টা করুন। শুরুতে হয়তো সমস্যা হবে, কিন্তু আঞ্চলিকতা অবশ্যই পরিহার করা যায়। টানা ছয়-সাত সপ্তাহ সময় দিলে আঞ্চলিক টান কথায় কমিয়ে আনতে পারবেন। ইংরেজিতে কথা বলার সময় পরিষ্কারভাবে ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান উচ্চারণ অনুসরণ করুন। কথার মধ্যে কখন, কীভাবে, কতটুকু বিরতি নিতে হয়, তা নিজেই উপলব্ধি করুন। ৩. বুঝে কথা বলুন, শ্রোতাকেও বুঝুন কথা বলার সময় মুখ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করুন। কথা শুরুর আগে কী বলবেন, তা গুছিয়ে নিন, প্রয়োজনে টুকরো কাগজে লিখে নিন। আপনি যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি কথা বুঝতে পারছেন কি না, সেদিকে মনোযোগ দিন। আপনি কী বলছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার শ্রোতা কী শুনছেন বা কী বুঝছেন। আপনার কথায় আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। শ্রোতার মুখ ও শরীরের অভিব্যক্তি দেখে শ্রোতাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। ৪. বক্তৃতার ক্ষেত্রে কৌশলী হোন অনেক মানুষের সামনে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় আপনাকে খুবই কৌশলী হতে হবে। শ্রোতাদের চোখে তাকান। তাঁদের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে আপনার স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন করতে হতে পারে, সে জন্য তৈরি থাকুন। খুব দ্রুত কথা বলছেন কি না, সেটা বুঝতে হলে আগে নিজেই নিজের কথা মুঠোফোনে রেকর্ড করুন। বারবার অনুশীলন করুন। কথা বলার সময় অবশ্যই বক্তব্য গুছিয়ে নেবেন। অন্তত একটা ছক তৈরি করে নিন। প্রথম মিনিটে কী বলবেন, দ্বিতীয় মিনিটে কী আলোচনা করবেন আর বক্তব্য শেষ করবেন কীভাবে— সাজিয়ে নিন। ৫. থিসিস বা গবেষণা উপস্থাপন: জটিল বাক্য ও নেতিবাচক কথা পরিহার করুন যাঁরা গুছিয়ে কথা বলেন, তাঁরা আসলে কম শব্দে খুব বেশি কাজের কথা বলেন। কথা বলার সময় জটিল বাক্য ব্যবহার করবেন না। শব্দভান্ডার কিংবা বিদ্যার দৌড় কখনোই কথার মধ্যে প্রকাশের চেষ্টা করবেন না। সরল ও সাধারণ শব্দ ও বাক্যে কথা বলার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখবেন, কথা বলার সময় অন্য কারও নামে নেতিবাচক বাক্য কিংবা শব্দ কোনোভাবেই বলবেন না। নেতিবাচক বাক্য ব্যবহারে আসলে নিজের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। সমালোচনা করতে হলে যৌক্তিকভাবে করুন। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন। ৬. সমস্যা নয়, সমাধান বলুন ধরুন, আপনি একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে লিফটে উঠেছেন। ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য তাঁর সঙ্গে নিরিবিলিতে কথা বলার সুযোগ আপনি পাচ্ছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে তাঁর সামনে কোনো ‘আইডিয়া’ উপস্থাপন করবেন? ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কার্যকরভাবে একটা ভাবনা উপস্থাপন করাকে বলা হয় ‘এলিভেটর পিচ’। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা নয়, সমাধান বলুন। শ্রোতার আগ্রহের জায়গা সম্পর্কে আগে জেনে নিন, সেভাবেই আপনার বক্তব্য তৈরি করুন। ‘আরেকটু সময় পেলে বোঝাতে পারতাম,’ এই মনোভাব রাখবেন না। ৭. অন্যকে অনুসরণ করুন, শিখুন সুন্দর করে কথা বলার শিল্প রপ্ত করতে টেড–এর বিভিন্ন ভিডিওসহ হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ কিংবা ব্লুমবার্গ বিজনেস ম্যাগাজিনের বিভিন্ন ভিডিও দেখুন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাইভ ভিডিও লেকচার দিয়ে থাকেন, সেগুলো দেখুন। ভিডিও থেকে তাঁদের মতো করে কথা বলা, বাক্য ব্যবহার আর শব্দ প্রয়োগ আয়ত্ত করুন। আপনি পেশাজীবনে যাঁর মতো হতে চান, তাঁকে অনুসরণ করতে পারেন। ৮. বলতে হলে পড়তে হবে যাঁরা সুন্দর করে কথা বলেন, তাঁরা কিন্তু ব্যক্তিজীবনে অনেক পড়াশোনা করেন। পড়ার বিকল্প নেই। ফিকশন, নন- ফিকশন—সব ধরনের বই পড়ুন। নানা ধরনের বই পড়লে নিজের মধ্যে নানা বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য জমা হয়, তাই কথা বলার সময় গুছিয়ে বলে ফেলার শিল্প রপ্ত করা সহজ হয়। যেকোনো মিটিং কিংবা পাবলিক স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে কথা শুরুর আগে শ্রোতা কিংবা যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর বা তাঁদের অনুমতি নিয়ে শুরু করুন। শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সঠিক তথ্য ব্যবহার করে কথা বলুন। খেয়াল রাখবেন, শ্রোতা যা জানেন, তার পুনরাবৃত্তি করা ঠিক নয়। ৯. চর্চাই সব হুট করে সুন্দর কথা বলার শিল্প আয়ত্তে আসে না। নিজেকে বদলাতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় দিন। এই বিনিয়োগ কিন্তু আজীবন কাজে আসবে। শেখার সময় ভুল হবেই, তা-ও শিখতে থাকুন। বাড়ির বড়দের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছ থেকে আপনার যত ভুল, তা জেনে নিন। মানুষের কটাক্ষে মন খারাপ না করে ভুল সংশোধনে মনোযোগ দিন। স্পষ্ট করে কথা বলুন। ১০. অনলাইনে কোর্স করুন কোর্সেরা, ইউডেমি, ফিউচার লার্নসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কথা বলাসংক্রান্ত কোর্স করার সুযোগ আছে। তিন থেকে সাত সপ্তাহের একেকটি কোর্স থেকে কীভাবে সুন্দর করে কথা বলা যায়, তা শিখে নিতে পারেন। সুত্র:প্রথম আলো