শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

‘আক্বীক্বা’ আরবী শব্দ। ইসলামী পরিভাষায়, নবজাত শিশুর মাথার চুল অথবা সপ্তম দিনে নবজাতকের চুল ফেলার সময় যবেহকৃত বকরীকে আক্বীক্বা বলা হয়। বুরায়দা (রাঃ) বলেন, জাহেলী যুগে আমাদের কারও সন্তান ভূমিষ্ট হলে তার পক্ষ হতে একটা বকরী যবেহ করা হতো এবং তার রক্ত শিশুর মাথায় মাখিয়ে দেওয়া হতো। অতঃপর ইসলাম আসার পর আমরা শিশু জন্মের সপ্তম দিনে বকরী যবেহ করি এবং শিশুর মাথা মুণ্ডন করে সেখানে যাফরান মাখিয়ে দেই। (আবু দাউদ) তবে রাযীন-এর বর্ণনায় এসেছে যে, ঐদিন আমরা শিশুর নাম রাখি। (মিশকাত, হা/৪১৫৮, যবেহ ও শিকার’ অধ্যায়, ‘আক্বীক্বা’ অনুচ্ছেদ) আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, হাসানের আক্বীক্বার দিন রসূল (সঃ) তার কন্যা ফাতিমাকে বলেন, হাসানের মাথার চুলের ওজনে রূপা সদাক্বা করো। তখন আমরা তা ওজন করি এবং তা এক দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) বা তার কিছু কম হয়। (তিরমিযী, মিশকাত, হা/৫১৫৪, আহমাদ, ইরওয়া, হা/১১৭৫) উল্লেখ্য যে, ‘চুলের ওজনে স্বর্ণ বা রৌপ্য দেওয়ার ও সপ্তম দিনে খ্ৎনা দেওয়ার’ বিষয়ে বায়হাক্বী ও ত্বাবারানী বর্ণিত হাদীস যঈফ। (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৮৩, ৩৮৫) রসূল (সঃ) বলেন, সন্তানের সাথে আক্বীক্বা জড়িত। অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর এবং তার থেকে কষ্ট দূর করে দাও। (অর্থঃ াৎ তার জন্য একটি আক্বীক্বার পশু যবেহ করো এবং তার মাথার চুল ফেলে দাও) (বুখারী, মিশকাত, হা/৪১৪৯, ‘আক্বীক্বা’ অনুচ্ছেদ) তিনি (সঃ) আরো বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব, জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, নাম রাখতে হয় ও তার মাথা মুণ্ডন করতে হয়। (আবূ দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, ইরওয়া, হা/১১৬৫) ইমাম খাত্তাবী (রহঃ) বলেন, ‘আক্বীক্বার সাথে শিশু বন্ধক থাকে’- এ কথার ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, যদি বাচ্চা আক্বীক্বা ছাড়াই শৈশবে মারা যায়, তাহলে সে তার পিতা-মাতার জন্য ক্বিয়ামতের দিন শাফা‘আত করবে না।’ কেউ বলেছেন, আক্বীক্বা যে অবশ্য করণীয় এবং অপরিহার্য বিষয়, সেটা বুঝানোর জন্যই এখানে ‘বন্ধক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিশোধ না করা পর্যন্ত বন্ধকদাতার নিকট বন্ধক গ্রহীতা আবদ্ধ থাকে। (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৬/২৬০) মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, ‘এর (বন্ধকের) অর্থঃ এটা হতে পারে যে, আক্বীক্বা বন্ধকী বস্তুর ন্যায়। যতক্ষণ তা ছাড়ানো না যায়, ততক্ষণ তা থেকে উপকার গ্রহণ করা যায় না। সন্তান পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। অতএব, এ জন্য শুকরিয়া আদায় করা তাদের উপর অবশ্য কর্তব্য। (মিরক্বাত, ৮/১৫৬) তবে সাত দিনের পূর্বে শিশু মারা গেলে তার জন্য আক্বীক্বার কর্তব্য শেষ হয়ে যায়। (নায়লুল আওতার, ৬/২৬১) আক্বীক্বা করা সুন্নাত। সাহাবী, তাবেঈ ও ফক্বীহ বিদ্বানগণের প্রায় সকলে এতে একমত। হাসান বসরী ও দাউদ যাহেরী একে ওয়াজিব বলেন। তবে আহলুর রায় (হানাফী) গণ একে সুন্নাত বলেন না। কেননা, এটি জাহেলী যুগে রেওয়াজ ছিল। কেউ বলেন, এটি তাদের কাছে ইচ্ছাধীন বিষয়। (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ৩/৫৮৬, নায়ল, ৬/২৬০) নিঃসন্দেহে এটি প্রাক-ইসলামী যুগে চালু ছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ও ধরন পৃথক ছিল। ইসলাম আসার পর আক্বীক্বার রেওয়াজ ঠিক রাখা হয়। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ও ধরনে পার্থক্য হয়। জাহেলী ‍যুগে আশুরার সিয়াম চালু ছিল, ইসলামী যুগেও তা অব্যাহত রাখা হয়। অতএব, প্রাক-ইসলামী যুগে আক্বীক্বা ছিল বিধায় ইসলামী যুগে সেটা করা যাবে না, এমন কথা ঠিক নয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ