পেশাব-পায়খানার পরে তরীকা :
(১) পানি দ্বারা এবং (২) ঢিলা-কুলুখ অথবা টিস্যু দ্বারা।
পানি দ্বারা নাপাকী দূর করলে তার পূর্বে ঢিলা বা কুলুখ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা নারী ও পুরষ, উভয়ের জন্য। আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের জন্যে শুধুমাত্র পানি যথেষ্ঠ না, প্রথমে ঢিলা কুলুখ নিয়ে এরপরে পানি দিয়ে ধুইতে হবে। আসলে এটা একটা ভুল ধারণা। ঢিলা-কুলুখের নিয়ম নারী-পুরুষ সবার জন্যই এক। বরং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে ‘কুবা’ মসজিদের কিছু মুসল্লী ঢিলা-কুলুখ না নিয়ে সরাসরি পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতো। আর আল্লাহ তাআ’লা এই কাজটিকে পছন্দ করেছিলেন, এজন্য তাদের প্রশংসা করে কুরআনে আয়াতও নাযিল করা হয়েছিলো। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে পছন্দ করে।” সুরা তাওবাঃ ১০৮। এই আয়াতটি কুবাবাসী লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে। কারণ, তারা শুধুমাত্র পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করতো।” তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, হাদীস সহীহ।
পবিত্রতা অর্জনের জন্য পেশাব করার পরে তাড়াহুড়া করে উঠে না পড়ে, একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পেশাব আর বের হবেনা। তারপর পানি অথবা ঢিলা-কুলুখ, অথবা টিস্যু দিয়ে নাপাকী পরিষ্কার করতে হবে। শুধু পানি দিয়ে নাপাকী দূর করা উত্তম, সেইক্ষেত্রে আর ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবেনা। তবে নাপাকী দূর হয়েছে, এটা নিশ্চিত হলে পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু বা ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করলেও পবিত্রতা অর্জন হবে। কিন্তু, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবেনা বা শয়তানের ওসওয়াসাকে অন্তরে স্থান দেওয়া যাবেনা। আপনি এটা নিয়ে দুঃশিচন্তা করে আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবেন না আবার পেশাব থেকে বেঁচে থাকতে অসতর্কও হবেন না। আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী চেষ্টা করবেন নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু রোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলে, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপিয়ে দেন না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুলুখ ও পানি একত্রে ব্যবহার করেছেন, এ মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি কখনো কেবল পানি ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৩৪২, ৩৬০ ‘টয়লেটের শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ। কখনো তিনি বেজোড় সংখ্যক কুলুখ ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারীঃ ১৫৫, ‘ওযু’ অধ্যায় ‘কুলুখ’ ব্যবহার অনুচ্ছেদ ২০। ওযু শেষে তিনি হালকা পানির ছিটা লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিতেন। আহমাদ, আবু দাঊদ, মিশকাতঃ ৩৬১। এটি ছিল সন্দেহ দূর করার জন্য। এর চেয়ে বেশী কিছু করা বাড়াবাড়ি মাত্র। উল্লেখ্য, ঢিলা ব্যবহার করার পর পানি নেওয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইরওয়াউল গালীলঃ ৪২; সিলসিলা যঈফাহঃ ১০৩১।
____________________________________
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

প্রসাব-পায়খানা বা ইস্তিঞ্জায় ঢিলা কুলুখের ব্যবহারের সুন্নতী তরীকা


পেশাব-পায়খানার পরে নাপাকী দুইভাবে দূর করা যেতে পারেঃ

(১) পানি দ্বারা এবং (২) ঢিলা-কুলুখ অথবা টিস্যু দ্বারা।

পানি দ্বারা নাপাকী দূর করলে তার পূর্বে ঢিলা বা কুলুখ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা নারী ও পুরষ, উভয়ের জন্য। আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের জন্যে শুধুমাত্র পানি যথেষ্ঠ না, প্রথমে ঢিলা কুলুখ নিয়ে এরপরে পানি দিয়ে ধুইতে হবে। আসলে এটা একটা ভুল ধারণা। ঢিলা-কুলুখের নিয়ম নারী-পুরুষ সবার জন্যই এক। বরং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে ‘কুবা’ মসজিদের কিছু মুসল্লী ঢিলা-কুলুখ না নিয়ে সরাসরি পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতো। আর আল্লাহ তাআ’লা এই কাজটিকে পছন্দ করেছিলেন, এজন্য তাদের প্রশংসা করে কুরআনে আয়াতও নাযিল করা হয়েছিলো। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে পছন্দ করে।” সুরা তাওবাঃ ১০৮। এই আয়াতটি কুবাবাসী লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে। কারণ, তারা শুধুমাত্র পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করতো।” তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, হাদীস সহীহ।

পবিত্রতা অর্জনের জন্য পেশাব করার পরে তাড়াহুড়া করে উঠে না পড়ে, একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পেশাব আর বের হবেনা। তারপর পানি অথবা ঢিলা-কুলুখ, অথবা টিস্যু দিয়ে নাপাকী পরিষ্কার করতে হবে। শুধু পানি দিয়ে নাপাকী দূর করা উত্তম, সেইক্ষেত্রে আর ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবেনা। তবে নাপাকী দূর হয়েছে, এটা নিশ্চিত হলে পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু বা ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করলেও পবিত্রতা অর্জন হবে। কিন্তু, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবেনা বা শয়তানের ওসওয়াসাকে অন্তরে স্থান দেওয়া যাবেনা। আপনি এটা নিয়ে দুঃশিচন্তা করে আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবেন না আবার পেশাব থেকে বেঁচে থাকতে অসতর্কও হবেন না। আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী চেষ্টা করবেন নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু রোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলে, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপিয়ে দেন না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুলুখ ও পানি একত্রে ব্যবহার করেছেন, এ মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি কখনো কেবল পানি ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৩৪২, ৩৬০ ‘টয়লেটের শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ। কখনো তিনি বেজোড় সংখ্যক কুলুখ ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারীঃ ১৫৫, ‘ওযু’ অধ্যায় ‘কুলুখ’ ব্যবহার অনুচ্ছেদ ২০। ওযু শেষে তিনি হালকা পানির ছিটা লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিতেন। আহমাদ, আবু দাঊদ, মিশকাতঃ ৩৬১। এটি ছিল সন্দেহ দূর করার জন্য। এর চেয়ে বেশী কিছু করা বাড়াবাড়ি মাত্র। উল্লেখ্য, ঢিলা ব্যবহার করার পর পানি নেওয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইরওয়াউল গালীলঃ ৪২; সিলসিলা যঈফাহঃ ১০৩১।



ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call


মাশাআল্লাহ, এমন একটি সুন্দর ও প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।  নিম্নে ইস্তিঞ্জার (পেশাব-পায়খানার) সুন্নাত-পদ্ধতি তুলে ধরা হল। আশা করি, উপকৃত হবেন।

ইস্তিঞ্জার সুন্নাতসমূহ
১. মাথা ঢেকে রাখা। (বাইহাকী, হাদীস নং ৪৫৬)
২. জুতা-সেন্ডেল পরিধান করে যাওয়া। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ’, ১৮৫/ কানযুল উম্মাল,হাদীস নং ১৭৮৭২)
৩. টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে দোয়া পড়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নোংরা জায়গাগুলো জ্বিন ও শয়তানদের থাকার জায়গা। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ যখন প্রসাব-পায়খানায় যায়, সে যেন এই দোয়া বলে-

اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
অর্থ, হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট পুরুষ-জ্বিন ও দুষ্ট নারী-জ্বিনের অনিষ্ট থেকে। (বুখারী, হাদীস নং ১৪২ )

অথবা যেন এই দোয়া বলে-

ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং ৫)
৪. দোয়া পড়ার পর আগে বাম পা ঢুকানো। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২)
৫. কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসা। (বুখারী, হাদীস নং ১৪৪)
৬. যথাসম্ভব বসার নিকটবর্তী হয়ে সতর খোলা এবং বসা অবস্থায় পেশাব ও পায়খানা করা, দাঁড়িয়ে পেশাব না করা। (নাসায়ী, হাদীস নং ২৯ তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ১৪)
৭. পেশাব ও নাপাক পানির ছিঁটা হতে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকা। (বুখারী, হাদীস নং ২১৮)
৮. পানি খরচ করার পূর্বে ঢিলা-কুলুখ (বা টয়লেট পেপার) ব্যবহার করা। (বাইহাকী, হাদীস নং ৫১৭)
৯. ঢিলা ও পানি খরচ করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। (বুখারী ,হাদীস নং ১৫৪)
১০. পেশাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়ার জন্য আড়ালে সামান্য চলাফেরা করা। (ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৩২৬)
১১. যেখানে পেশাব ও পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা নেই, সেখানে এমনভাবে বসা যেন ছতর নজরে না পড়ে। (আবু দাউদ,হাদীস নং ২)
১২. পেশাবের জন্য নরম বা এমন স্থান তালাশ করা যেখান থেকে পেশাবের ছিঁটা শরীরে বা কাপড়ে না লাগে। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩)
১৩. ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ৮৩)
১৪. ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২)
১৫. বাইরে এসে এই দু‘আ পড়া : الحمدُ للهِ الذي أَذْهَبَ عَنَّى الأَذَى وعَافَانِيغُفْرَانَكَ   

অর্থ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমার হতে কষ্টদায়ক বিষয়সমূহ দূর করেছেন এবং আমাকে নিস্তার দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদীস  নং ৩০ : ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩০১)

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী

সুত্রঃ http://quranerjyoti.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ