Call

প্রথমে বলেন, মক্কায় কেউ মারা গেলে বা মৃত্যু মুখে পতিত হলে আল্লাহ তাকে বাঁচাবেন, আপনার এ কথা মনে হল কেন? বা কোথায় পেলেন যে হজ্ব করতে যেয়ে কাবা ঘর এলাকায় কেউ মারা যাবে না?

দেখুন, আপনার উত্তরে যাওয়ার আগে কিছু ব্যাপার পরিষ্কার করি। 

আমরা সাধারণ চোখে মৃত্যুকে খারাপ বা ভয়ঙ্কর ব্যাপার হিসাবে দেখলেও আমাদের (মুসলিম বা ইসলামের) চোখে মৃত্যু হল এক জগৎ থেকে অন্য জগতে যাওয়ার মাধ্যম। বা বলতে পারেন, মৃত্যু হল আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম। এখন কাবা ঘর এলাকায় কেউ মারা গেলে আমরা বরং ওই ব্যাক্তিকে সৌভাগ্যবান/বতীই মনে করি। কারন সে আল্লাহর হুকুম পালন করতে যেয়েই মারা গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ এর প্রতিদান দিবেন। আমাদের প্রত্যেক মুসলিমেরই আকাক্ষা থাকে যে আমাদের যেন আল্লাহর হুকুম পালন করতে যেয়ে মৃত্যু হয়, বিশেষ করে হজ্ব করতে যেয়ে। 

এবার আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসি...

কোন ঘটনা বা দূর্ঘটনাই মানুষ্য সৃষ্ট নয়। প্রতিটি ঘটনার পিছনেই আল্লাহর হুকুম বা ইশারা থাকে। কাজেই হজ্বের সময় যে দূর্ঘটনা ঘটেছে, তা আল্লাহর হুকুমেই ঘটেছে এবং জান কবচ করার জন্য আল্লাহই ফেরেশতাগণকে পাঁঠিয়েছেন। 

কিন্তু কেন...?

সুরা আলে ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন –‘যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কার হারাম) প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে’। 

সুরাতুল আনকাবুতের (আয়াত নং ৬৭) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘তারা কি দেখে না যে, আমি (মক্কা নগরীকে) একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়’। 

সুরা তীনে আল্লাহ তাআলা মক্কাকে নিরাপদ শহর হিসেবে অভিহিত করেছেন। 

সুরা বাকারায় (আয়াত ১২৫) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘আর স্মরণ করো তখনকার কথা যখন আমি এই গৃহকে (কাবা) লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল গণ্য করেছিলাম’। 

আমাদের ইসলাম ধর্মে দেহ এবং পার্থিব জগতের চেয়ে আত্মা এবং আধ্যাত্বিক জগতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের এই দুনিয়ার যাকিছু কার্যক্রম, তা পরজগতে শান্তিতে থাকার জন্যই। আর এমনতো হতে পারে, আল্লাহ মক্কাকে নিরাপদ বলতে ওখানে আমাদের "আত্মাকে নিরাপদ" বলেছেন। অর্থাৎ আমাদের আত্মা কোন খারাপ কাজ, অনিষ্ট বা ব্যাভিচার থেকে মুক্ত থাকবে, মৃত্যু থেকে নয়। 

আরেকটি ব্যাপার, কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর নিকট পছন্দের হন, তবে আল্লাহ দুনিয়াতেই তাকে অভাব-অনটন, রোগ-বালাই ইত্যাদি দিয়ে খাঁটি করে নেন। তেমনিভাবে কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর নিকট অপছন্দের হন, দুনিয়াতেই তাকে অর্থ-কড়ি, সুখ-শান্তি ইত্যাদি দিয়ে ভাল রাখেন, যাতে পরকালে তার বিচার করতে সহজ হয়। আর যার কারনে আজ বিধর্মীদের এত অর্থ-সম্পদ।

একটা কথা মনে রাখা উচিত, এই দুনিয়া একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। আমরা এখানে নানাভাবে পরীক্ষিত হই। যেমন আপনাকে পরীক্ষার হলে কঠিন প্রশ্ন করে স্যার বিপদে ফেলেন। যে পরীক্ষায় ভাল করে সেই ভাল ছাত্র এবং তারই ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আমাদের মাঝেও যে আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করবে, তাকে আল্লাহ পুরষ্কৃত করবেন। জন্ম হল আল্লাহর কাছ থেকে দুনিয়াতে আসা এবং মৃত্যু হল আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম। এর মাঝে কে খারাপ কাজ করবে, কে ভাল কাজ করবে সেটা একান্তই তার নিজের ব্যাপার। আল্লাহ কেবল পরকালে এর হিসাব নিবেন। মধ্যবর্তী সময়টি তিনি (আল্লাহ) সরাসরি কোন হস্তক্ষেপ করেন না।

কাজেই, কেবল মক্কায় হজ্বের দূর্ঘটনা বলে কথা নয়, সারা দুনিয়ায় আজ লক্ষ লক্ষ মুসলিম জুলুমের শিকার। এসবই আল্লাহর হুকুম এবং এর মাঝে অবশ্যই আমাদের (মুসলিমদের) জন্য কল্যান আছে।

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। আরো কোন প্রশ্ন থাকলে বা কোন ব্যাপারে দ্বিমত থাকলে নির্দিধায় প্রশ্ন করবেন। উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ