কিডনি সুস্থ রাখার উপায়ঃ 1) শিশুদের গলাব্যাথা, খোস পাঁচড়ার দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ এগুলো থেকে কিডনি প্রাদাহ বা নেফ্রাইটিস রোগ দেখা দিতে পারে। 2) ডাইরিয়া, বমি, রক্তআমাশয়, পানিশূন্যতায় অতিদ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে কিডনি বিকল হতে পারে। 3) প্রাসাবের ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 4) পর্যাপ্ত পানি পান করুন। 5) ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন। 6) ধুমপান বর্জন করুন। 7) ডায়াবেটিক আক্রান্তরা নিয়মিত শর্করা ও রক্তের অ্যালবুমিন পরীক্ষা করুন। 8) উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখুন। 9) মাঝে মাঝে কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করুন। 10) চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত এন্টিবায়েটিক, ব্যাথানাশকসহ যেকোন ওষুদ গ্রহনে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
কিডনি রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত। কিডনি ভালো রাখার কয়েকটি উপায় জেনে নিন-
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে
কিডনি ভালো রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয়না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
২. লবণ কম খেতে হবে
খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করতে হবে।
৩. অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
গরুর মাংস বা এই ধরনের প্রাণিজ আমিষ খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দূর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে খাবার তালিকায় ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখতে হবে। এছাড়া মাছ খাওয়া যেতে পারে।
৪. রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে
রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরী।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
ডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৬. ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে
কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য সব সময়ই হুমকিস্বরূপ। নিয়ম না জেনে বা নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে অজান্তেই কিডনির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
৭. প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি খাওয়া যাবে না
মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
৮. কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবে
অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন।
৯. ধূমপান ও মদপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
ধূমপান ও মদপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই এগুলোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
১০. নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।
কিডনি সুস্থ রাখার উপায়
১. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
২. বিনা কারণে ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া। বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত গ্রহণ করলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৩. পরিমিত পরিমাণে (ছয়-আট গ্লাস) পানি পান করুন। কিছুতেই শরীরে পানি কম পড়তে দেওয়া ঠিক নয়। আবার বেশি বেশি পানি খেলে কিডনি ভালো থাকবে, এমন কথা ঠিক নয়। শীতকালে পানির প্রয়োজন কম হলেও গ্রীষ্মে অধিক পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হবে।
৪. শিশুদের গলাব্যথা, খোস-পাঁচড়া বা স্ক্যাবিস হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এসব রোগের জটিলতা হিসেবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৫. ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কেননা সঠিকভাবে ডায়রিয়ার চিকিৎসা না হলে হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।
৬. পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করা উচিত।
৭. হাত-পা ফুলে গেলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা এসব সমস্যা কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
৮. ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপানের কারণে দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতো কিডনিও আক্রান্ত হতে পারে।
source:RMCH