মাজহাব সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি কি? অথবা বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে পার্থক্যের কারণ কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
mahfuz08

Call

কুরআন –সুন্নাহর প্রত্যক্ষ –পরোক্ষ , সুস্পষ্ট –অস্পষ্ট ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ জটিল বিষয়ের যথাযথ সমাধান বের করে তা অনুসরণ করে ইসলামের মূল লক্ষে যাওয়া বা আমল করা সকলের পক্ষে মোটেও সম্ভবপর নয়।
এই সকল বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী ব্যক্তি বর্গের দেওয়া সমাধান মেনে চলেই ইসলামের সঠিক আমল করা সম্ভব। আর মাজহাব সৃষ্টি হওয়ার এটাই কারণ।

প্রথমেই ভেবে দেখুন, যদি একই মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রি পাশ করে, তবে এরপরেও দেখা যাবে যে, ভবিষ্যতে চিকিৎসার কিছু কিছু বিষয়ে তাদের মতবিরোধ হচ্ছে। কিন্তু কেন?
আরও দেখা যাবে যদি ১০জন লোক পাখি নিয়ে রচনা লিখতে যান, তবে সবার উপস্থাপনা কি এক হবে?

সবাই যদিও একটি কোরআন শরীফ পরলেও সময় এবং স্থানের ব্যাবধানে সকলেরই হাদীস জানার ক্ষেত্র বেশ কিছু পার্থক্য থাকতেই পারে।
যেমন কেউ কি সবগুলো হাদীস গ্রন্থে একই সাথে সবগুলো হাদীস পাবে? নিশ্চয়ই না।
পৃথিবীর কোন মানুষই এটা বলতে পারবেনা যে, তিনি ইসলামের সকল হাদীও ও অন্যান্য জ্ঞানে সমৃদ্ধ।
কাজেই হাদীস জানার পার্থক্যের জন্যও শরীয়া আইনে পার্থক্য আসতে পারে।

তাছাড়া দুইজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে মুক্ত এবং স্বাধীন চিন্তা শক্তি বিদ্যমান। আর সেই জন্যই তাদের শিক্ষা, চিন্তা, বুঝার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্তে ইত্যাদির মধ্যে কিছু পার্থক্য আসতেই পারে।
যেমন পৃথিবীর সকল মানুষ কি নিজেদের জীবনে সকল বিষয় কি একমত হন? নিশ্চয়ই না।
এইভাবেও শরীয়া আইনে পার্থক্য আসতে পারে।

মূলত কোরআনের এবং হাদীসের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোন মাজহাবেই পার্থক্য দেখা যাবে না।
পার্থক্যগুলো সাধারণত অস্পষ্ট বিষয়গুলোতে হয়, যেগুলোতে মুক্ত এবং স্বাধীন চিন্তা করার সুযোগ থাকে।

আল্লাহ শুধু কোরআনে সকল বিষয়ে ভিত্তিমূলক দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
এবং একই সাথে সেটার উপর ভিত্তি করে অস্পষ্ট বিষয়গুলোতে মানুষের স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তা করার সুযোগও দিয়ে রেখেছেন।
অর্থাৎ ভিত্তিকে ছাড়া যাবে না, যেমন ভাবে একজন স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তার মানুষ বিশুদ্ধ বাতাস ছাড়া বাচতে পারেনা।

অতএব পার্থক্যের কারণ ওই স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তা দিয়ে শরীয়ার আইন তৈরি করা এবং এতে কোন নিষেধও নেই।
আল্লাহ যদি ওইটুকু স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তা মানুষকে না দিত, তবে মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য থাকতো না।
তবে যারা স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তার অপব্যাবহার করে ইচ্ছা করে মিথ্যা সিদ্ধান্ত দেয় অথবা নাস্তিকতা করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।

আর এই সব পার্থক্য মহানবী সাঃ-এর সময় থেকেই ছিলো।
নিচে এই ব্যাপারে ছোট কোরে উদাহরণ দেওয়া হলো।

ব্যাপক বিজয়াভিযানের মাধ্যমে যখন ইসলামী উম্মাহ্‌র পরিধি সুবিস্তৃত হলো এবং বিচিত্র সব সমস্যার উদ্ভব হলো এবং সমাধান ও সিদ্ধান্ত প্রদানের প্রয়োজন দেখা দিলো।
ফলে ইজতিহাদ প্রয়োগ অনিবার্য হয়ে উঠলো। এজন্য উসূল ও মূলনীতি নির্ধারণেরও প্রয়োজন দেখা দিলো। আর বলা বাহুল্য যে, ইজতিহাদের পন্থা ও পদ্ধতি এক ও অভিন্ন হওয়াও সম্ভস ছিলো না এবং শরীআতের সেটা চাহিদাও ছিলো না।
কেননা, বনূ কুরায়যার অবরোধ ঘটনায় নবী সা. সকলকে আসরের সালাত বনূ কুরায়যার বস্তিতে পড়ার আদেশ করেছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে কতিপয় সাহাবায়ে কিরামের আসরের সালাত হয়ে গেলো।
তখন একদল সাহাবা নবী সা.-এর বাহ্যিক আদেশের উপর আমল করে বনূ কুরায়যার বস্তিতে গিয়েই আসর পড়লেন। কিন্তু একদল সাহাবা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, নবী সা.-এর আদেশের উদ্দেশ্য তো ছিলো এই যে, চেষ্টা করো যাতে আসরের সময় হওয়ার পূর্বে বস্তিতে পৌছতে পারো।
এ উদ্দেশ্য ছিলো না যে, অনিবার্য কারণে পথিমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেলেও সালাত বিলম্বিত করতে। সুতরাং তারা পথেই সালাত পড়ে নিয়েছিলেন।
নবী সা.-এর খিদমতে যখন বিষয়টি পেশ হলো তখন তিনি উভয় পক্ষর চিন্তাকেই অনুমোদন করেছিলেন, কাওকে তিরস্কার করেন নি।

বিজয়াভিযান কালে যেহেতু সাহাবায়ে কিরাম বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন সেহেতু ইজতিহাদগত পার্থক্য দেখা দেয়াও স্বাভাবিক ছিলো। মোটকথা সাহাবা যুগেই নিত্য-নতুন ঘটনা, সমস্যাও জটিল উদ্ভুত হয়েছিলো এবং সাহাবায়ে কিরাম নিজ নিজ ইজতিহাদ মুতাবিক ফয়সালা ও সামাধান পেশ করেছিলেন।
এভাবে সাহাবায়ে কিরামের যুগেই ফিকাহ্‌ ও মাসায়েলের একটা উল্লেখযোগ্য ভান্ডার তৈরী হয়ে গিয়েছিলো।

সাহাবায়ে কিরামের মাঝে ফিকাহ্‌ ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তাদের বিশিষ্ট স্থান ছিলো তাদের কয়েক জন হলেন, হযরত উমর, হযরত আলি, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন্‌ মাস'উদ, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন্‌ আব্বাস, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন্‌ উমর রা.।

সূত্রঃ
গ্রন্থঃ আল-হিদায়া, প্রথম খন্ড,
(ভূমিকার অংশ- ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের কতিপয় জরুরী জ্ঞাতব্য)
প্রকাশকালঃ জানুয়ারী ১৯৯৮
লেখকঃ বুরহান উদ্দীন আলী ইব্‌ন আবূ বকর (রা.)
তরজমাঃ মাওলানা আবূ তাহের মেছবাহ্‌
প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

নিচে একটি হাদীস দেওয়া হলো। যাতে বুঝা যাবে ইমামদের মাজহাব অথবা ইজতিহাদে মতবিরোধ অথবা ভুল থাকলেও সেটা ইসলাম মেনে নেয়।

"আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে এই কথা বলতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজতিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। রাবী বলেনঃ আমি হাদীসটি আবূ বকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হায়িম (রহঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এরুপ বর্ণনা করেছেন এবং আবদূল আযীয ইবনু আবদুল মুত্তালিব আবূ সালামা (রাঃ) সুত্রে নাবী ﷺ থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। "
সূত্রঃ (১) ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন, হাদিস নাম্বার: 6850
     (২) সহিহ বুখারী :: খন্ড ৯ :: অধ্যায় ৯২/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন :: হাদিস ৪৫০
     (৩) ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ৩০/ বিচার বিধান, হাদিস নাম্বার: 4338
     (৪) রিয়াযুস স্বা-লিহীন :: বই ১৯ :: অধ্যায় দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনের বর্ণনা :: হাদিস ১৮৫৬ (প্রায়)

 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ