ইমাম আবূ হানীফা (রাঃ) ও তার ফিকাহ্ সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে, ইমাম সাহেব হাদীছ শাস্ত্রে দুর্বল ছিলেন এবং তাঁর হাদীছ সংগ্রহ ছিলো নগণ্য। আসলে কি বিষয়টা কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
mahfuz08

Call

আল্লামা সায়্যিদ সুলায়মান নদভী এ গূঢ়-রহস্য এ বলে ব্যক্ত করেছেনঃ কী যেন একটা তাঁদের মাঝে ছিলো আর কী যেন একটা আমাদের মাঝে নেই।

হানাফী মাযহাবের পক্ষে প্রমাণ রূপে পেশ কৃত হাদীসের মধ্যে দুর্বল হাদীসও রয়েছে। এতে মনে হয়, হাদীস শাস্ত্রে তাঁর গভীর জ্ঞানের অভাব ছিলো।
এই অভিযোগের উত্তরে হাদীস শাস্ত্রের বহু ইমাম হানাফী মাযহাবের বিশ্বকোষ "আল-হিদায়া" গ্রন্থের হাদীসসমূহের "তাখরীজ" বিষয়ক বিভিন্ন মূল্যবান গবেষণা গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন এবং মূল সূত্র ও উৎস উল্লেখ করে প্রতিটি হাদীসের প্রামাণীকত ও গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরেছেন।০

প্রথমতঃ
এ অভিযোগের বিস্তারিত জবাব জানতে হলে মাযহাব কি ও কেন ( প্রকাশ মুহাম্মদী লাইব্রেরী চকবাজার ) গ্রন্থের হানাফী মাযহাবে হাদীছের স্থান অধ্যায়টি পড়ে দেখুন।
এখানে শুধু সংক্ষেপে বলা যায় যে, হাদীছের বিশুদ্ধতার মাপকাঠি হলো সনদ, সুতারাং কোন হাদীছ বুখারী, মুসলিম বা সিহাহ্ সিত্তাহ্য় বর্ণিত না হলেও সনদগত বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। হানাফী ফিকাহ্র ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে। ইমাম তাহাবী, আল্লামা যায়লাঈ, আল্লামা আয়নী, আল্লামা জা’ফর আহমদ উছমানী (রাঃ) সহ বহু মুহাদ্দিছ তাঁদের হাদীছ সংকলনে এটা প্রমাণিত সত্য রুপে তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয়তঃ
ইমাম আবূ হানীফা (রাঃ) -এর ইজতিহাদী দৃষ্টিকোণ এই যে, একটি বিষয়ের সমগ্র হাদীছের উপর তিনি আমল করতে চান। এজন্য প্রয়োজনে তিনি সনদগত বিচারে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হাদীছ মূল ধরে বিশুদ্ধ হাদীছের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পেশ করে থাকেন। পক্ষান্তরে অন্য মুজতাহিদগণ একটি মাত্র হাদীছকে আমলে এনে অন্যগুলোকে “যঈফ” বলে এড়িয়ে যান। বলাবাহুল্য যে, মূলনীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে প্রত্রেক ইমামেরই শরীআত সম্মত দলীল রয়েছে।

তৃতীয়তঃ
ইমাম আবূ হানীফা (রাঃ) সংগৃহীত হাদীছ যেহেতু সুলাছী (বা ত্রিমাতৃক) সেহেতু সেগুলো বিশুদ্ধ হওয়াই ছিলো স্বাভাবিক, কিন্তু পরবর্তীদের হাদীছ সংগ্রহ ছিলো চার, পাঁচ বা ছয় স্তরের দীর্ঘ সনদ বিশিষ্ট, ফলে ইমাম আবূ হানীফা (রাঃ)- এর বহু বিশুদ্ধ হাদীছ তাঁদের নিকট (পরবর্তী বর্ণনাকারীর দুর্বলতার কারণে) দুর্বল প্রমাণিত হয়েছে, বলাবাহুল্য যে, এটা ইমাম আবূ হানীফা (রাঃ) বা হানাফী মাযহাবের দোষ নয়। তাছাড়া হাদীছ শাস্ত্রে ইমাম সাহেবের অত্যুচ্চ মর্যাদা এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, যে যুগে বুখারী, মুসলিম দূরের কথা, হাদীছ শাস্ত্রের প্রাচীনতম প্রামাণ্য গ্রন্থগুলোর অস্তিত্ব ছিলো না। সে সময় ইমাম আবূ হানীফা (রাঃ) প্রায় চল্লিশ হাজার হাদীছ থেকে চয়ন করে কিতাবুল আছার গ্রন্থটি সংকলন করেছিলেন।

সূত্রঃ
গ্রন্থঃ আল-হিদায়া, প্রথম খন্ড,
(ভূমিকার অংশ- ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের কতিপয় জরুরী জ্ঞাতব্য)
প্রকাশকালঃ জানুয়ারী ১৯৯৮
লেখকঃ বুরহান উদ্দীন আলী ইব্‌ন আবূ বকর (রা.)
তরজমাঃ মাওলানা আবূ তাহের মেছবাহ্‌
প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

নিচে বিষয়টি বুঝার জন্য আরেটু বলা হলো, যা সংগৃহীত।

"আবার এমনও দেখা গেছে কোন একটি বিষয়ে শুধুমাত্র “জঈফ” হাদিস আছে । কোনো সহীহ হাদিস নেই । কিন্তু দেখা গেছে “সাহাবীদের (রা.)” মধ্যে এই আমল প্রচলিত আছে । এতে মুজতাহিদ ঈমামগন বা যারা ফকীহ তারা সিদ্ধান্তে এসেছেন এই আমল নিশ্চয়ই রসুলুল্লাহ (সা.) থেকে এসেছে যেহেতু সাহাবীদের মধ্যে এটা এখনও প্রচলিত আছে। তাই রাবীর কারনে হাদিসটি জঈফ হতে পারে কিন্তু হাদিসটির মুলত গ্রাউন্ড আছে। এবং এই পরিস্হিতিতে এই জঈফ হাদিসের উপর বেস করে আমলটি সম্পূর্ন গ্রহনযোগ্য । সুতরাং এতে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি , জঈফ হাদিস দেখে কেউ যদি বলে এর ওপর আমল করা যাবে না তাহলে সবসময় সেটা সত্য নাও হতে পারে । যেহেতু সাপোর্টিং হিসেবে সাহাবীদের মধ্যে এই আমল প্রচলিত আছে ( যেটাকে কেউ হাদিস বা কেউ “আছারে সাহাবা” বলে থাকেন )।"

সূত্রঃ
লেখকঃ ব্লগার - দেশে-বিদেশে
http://www.shodalap.org/deshebideshe/12492

 

ইমাম ইবনে হাযম রঃ বলেন, আবু হানীফার রঃ সকল ছাত্রই এ ব্যাপারে একমত যে, নিতান্ত দূর্বল সনদযুক্ত একখানা হাদিসও তাঁর নিকট কেয়াসের তুলনায় অনেক বেশী মুল্যবান দলিলরূপে বিবেচিত হবে। (খায়রাতুল-হেসান) সম্ভবতঃ এ কারণেই পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে সব কালজয়ী প্রতিভার জন্ম হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশ ইমাম আবু হানীফার রঃ মাযহাব অনুসরণ করেছেন। হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী রঃ বক্তব্য হচ্ছে- এই ফকীরের উপর প্রকাশিত হয়েছে যে, এলমে-কালামের বিতর্কিত বিষয়গুলি মধ্যে হক হানাফী মাযহাবের দিকে এবং ফেকাহর বিতর্কিত মাসআলাগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হক হানাফী মাযহাবের দিকে এবং খুব কম সংখ্যক মাসআলাই সন্দেহযুক্ত। (মাবদা ও মাআদ)

 

সূত্রঃ http://www.islamictunz.com/%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80/tune_id/1300/%E0%A6%87%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%81-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AB%E0%A6%BE-%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80/

 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ