স্ত্রীর শরিল যদি সন্তান নেওয়ার মত ক্ষমতা না থাকে তাহলে কি জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যাবে??  পিল কন্ডম ব্যবহার শরিয়াতে কি বলে?? রেফারেন্স সহ উত্তর দিবেন প্লিজ। 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

হ্যা জন্মনিয়ন্ত্রন করা যাবে । কুদুরি বাংলাটাতে দেখুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
HMMOBAROKBD

Call

নিচের লিখাটি পূর্ণাঙ্গ পড়লে আপনার দুটি উত্তরই পাবেন৷ আশা করি - মৌলিকভাবে এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে—

এক. স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি। এ পদ্ধতি কেবল নিম্মোক্ত ক্ষেত্রে বৈধ হবে।

—দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয়।

— কোন কারণে মহিলার বাচ্চা লালন-পালনের সামর্থ না থাকলে।

—মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে।

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل


হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

তিন. গর্ভপাত ঘটানো(Abortion)।এটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বহু পুরাতন একটি পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণের (Contraceptives) উপায়-উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও আজ অবধি দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতিও চালু আছে। এ পদ্ধতিও নাজায়েয। তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, (রূহ আসার পর) গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এটা الوأد (সূক্ষ সমাহিত) এর অন্তরভুক্ত; যে ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ  যখন(কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে…….’ (তাকবীর ৮-৯)।ফিকহী মাসায়েল সূত্রে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/২১৭ফাতাওয়া দারুল ইফতা; মিশর। তাং-১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ ইং)

উক্ত আলোচনা থেকে আশা করি এটা পরিস্কার হয়েছে যে, ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল পদ্ধতি নয়;বরং  বিশষ পদ্ধতির এবং সাধারণ অবস্থাতে নয়; বরং বিশেষ অবস্থাতে এর অনুমোদন দেয়। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় ইসলাম  মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)

সুতরাং খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে, দৈহিক সৌন্দর্য বা ফিগার ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে ,কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার ভয়ে (যাতে পরবর্তীতে এদের বিয়ে শাদীর ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়),অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করে পরিবার পরিকল্পনার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষত অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেছেন, ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. ‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)অন্যত্র তিনি বলেন, الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . “শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল যদিও সন্তান হত্যার পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ। সুতরাং এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই। আল্লাহ  সহীহ সমঝ দান করুন ।আমীন।

والله اعلم بالصواب

মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

স্ত্রীর শরীর যদি সন্তান নেওয়ার মত ক্ষমতা না থাকে তাহলে অস্থায়ীভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এক্ষেত্রে পিল কন্ডম ব্যবহার শরিয়াতে অনুমোদন আছে। অস্থায়ীভাবে জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য শুধু কনডম নয় যেকোন পদ্ধতিই জায়েজ। স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় স্ত্রী-অঙ্গের বাইরে শুক্র স্খলিত করার নাম আযল। নবী যুগের কোন কোন সহাবী এমন কাজ করতেন। বুখারী ও মুসলিমে আবূ সাঈদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস থেকে বুঝা যায় তারা সাময়িক অসুবিধা এড়ানোর জন্য এমন কাজ করতেন। সন্তান জন্ম নিলে তার রিযিকের ব্যবস্থা করা যাবে না, এমন কোন আশঙ্কা বা ভয়ে তারা তা করতেন না। যে মানুষই জন্ম নিবে, আল্লাহই যে তার রিযিকদাতা এ ব্যাপারে তারা বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করতেন না। সন্তানের জন্মদানকে আপাতত ঠেকানো যাবে এরকম সুবিধালাভের আশায় তারা আযল করতেন। আযল দ্বারা যে সন্তানের জন্মদানকে ঠেকানো যাবে না তা আল্লাহর রাসূলের কথায় অতি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ইবনে সিরীন এর মতে, আযল সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও তা যে নিষেধের একেবারে কাছাকাছি তাতে কোন সন্দেহ নেই। হাসান বসরী বলেছেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলের কথায় আযল সম্পর্কে স্পষ্ট ভৎর্সনা ও হুমকি রয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেছেন, সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্ত কথা থেকে নিষেধই বুঝেছিলেন। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন বলেছেন, তোমরা আযল কর না, তা না করাই তোমাদের কর্তব্য। বর্তমানে সন্তানের জন্মদানকে বন্ধ করার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের নানান পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আর এ কথা সবারই জানা যে, এ পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছেঃ এ কথা বলে যে, মানুষ বেশি হলে অভাব দারিদ্র দেখা দিবে, রিযিকের ঘাটতি পড়ে যাবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করছেনঃ তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে, আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমি করব। (আনআম ৬:-১৫১) আল্লাহ আরো বলেনঃ এবং তোমরা হত্যা কর না তোমাদের সন্তানদের দারিদ্রের ভয়ে, আমি তাদের রিযিক দেব এবং তোমাদেরও নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা বিরাট ভুল। (বানী ইসরাঈল ১৭:- ৩১)। ভবিষ্যতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় যারা সন্তান জন্মদানে ভয় পায়, যারা মনে করে যে, আরো অধিক সন্তান হলে জীবনযাত্রার মান রক্ষা করা সম্ভব হবে না, এবং এজন্য জন্মনিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের পন্থা গ্রহণ করে, উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে তাদের সম্পর্কে নিষেধবানী উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে তোমাদের যেমন আমিই রিযিক দিচ্ছি, তোমাদের সন্তান হলে অভিষ্যতে আমিই তাদের রিযিক দেব, ভয়ের কোন কারণ নেই। এখানে দুইটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ- (১) জন্মনিরোধ সম্পূর্ণরূপে সন্তান দানের ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করে দেয়া। (২) জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা। জন্মনিরোধ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। তবে যদি মহিলার অবস্থা এরূপ হয় যে, সে কয়েকটি সন্তান নিয়েছে আর প্রতিবারই তার জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায় ডাক্তার যদি পরামর্শ দেয় যে, এরপরে সন্তান নিলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ ফাতওয়া দিয়েছেন যে, এ অবস্থায় সন্তান জন্মের উৎসকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করলে হারাম বলা যাবে না। বরং সৎ পরামর্শ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। আর জন্ম নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ সন্তান জন্মের পরে তাড়াতাড়ি না করে এক দুই বছর পরে সন্তান গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় সন্তান জন্মের পরে তার মায়ের অবস্থা খুবই নাজুক ও শারীরিকভাবে এমনই দুর্বল যে, এখনই পুনরায় সন্তান গ্রহণ করলে রোগাক্রান্ত হয়ে যেতে পারে এবং তার জীবনের উপরে ঝুঁকি আসতে পারে অথবা বর্তমান শিশু সন্তানের দেখা-শুনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাহলে শুধুমাত্র এ ক্ষেত্রে বাচ্চার মায়ের শরীরের দিকে লক্ষ্য রেখে এক দুই বছর দেরীতে সন্তান নিলে এরূপ দেরী করাকে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ সমর্থন দিয়েছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ